হত্যা মামলার বাদীর বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা : তদন্ত করবেন হত্যা মামলার আসামী

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : পটুয়াখালীর বাউফলে একটি হত্যা মামলার বাদী ও সাক্ষীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে  এক নারী মামলা করার দেড় বছর পর আসামিদের উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ দিয়েছেন তদন্তের দায়িত্বে থাকা বাউফল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার।

তবে ধর্ষণ মামলার সাক্ষীরা ধর্ষণ সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। মামলার বাদী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি

গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত সূত্রে জানা গেছে, চম্পা বেগম (২৫) নামে এক নারী ধর্ষণের অভিযোগ এনে বাউফলে একটি হত্যা মামলার বাদী জাকির হোসেনকে (৩০) প্রধান আসামি করে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল পটুয়াখালী বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে ওই মামলা করেন। মামলার অন্য দুই আসামি হলেন মো. শফিক (৩৫) ও মো. জালাল ফকির (৩৫)।

জাকির হলেন ২০১৩ সালের ৫ আগষ্ট মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা মামলার বাদী। বাকি দুজন হলেন ওই মামলার সাক্ষী।আর যিনি ধর্ষণ মামলা তদন্ত করছেন তিনি হলেন মনির হোসেন হত্যা মামলার এক নম্বর আসামি বাউফল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার।২০১৩ সালে তিনি (মোতালেব) বগা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলেন। মনির হোসেন হত্যা মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছেন।

ধর্ষণ মামলার বাদী, আসামি ও তদন্তকারী ব্যক্তি সবাই বগা ইউনিয়নের বাসিন্দা।

ধর্ষণ মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন ও সময় উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যা সাতটা। আরও উল্লেখ করেছেন ওই দিন রাতেই ওই নারী আহত অবস্থায় মামলার সাক্ষীদের সহায়তায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। বাদীর আইনজীবীর আবেদন অনুযায়ী আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদরকে। ব্যক্তি জীবনে চম্পা বিবাহিত।

দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর সম্প্রতি স্থানীয় চৌকিদার জাকিরের বাড়িতে নোটিশ নিয়ে যান। জাকির হোসেন বাড়িতে না থাকায় ওই নোটিশ কেউ রাখেনি। আদালতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাঁর (জাকির) বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তাঁর (আবদুল মোতালেব) কার্যালয়ে ১৫ অক্টোবর  উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছিল।

ধর্ষণ মামলায় পাঁচ ব্যক্তির নাম সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে এক নম্বর সাক্ষী হলেন মো. সত্তার ঘরামি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে সত্তার ঘরামি বলেন,‘এ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।এই প্রথম আপনার (সাংবাদিক) শুনলাম।’

দুই নম্বর সাক্ষী মো. খালেক মোল্লা ও পাঁচ নম্বর সাক্ষী মো. হেমায়েদ অভিন্নভাবে বলেন,‘ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে সবাই জানত। এ বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না।’

চম্পার স্বামী মো. বাদল হাওলাদার বলেন,‘আমার স্ত্রী ধর্ষিত হলে প্রথমে আমার জানার কথা। এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল রাতে চম্পা নামে কোনো নারী ভর্তি হননি কিংবা চিকিৎসাও নেয়নি।ওইদিন রুমা (২১) ও আসমা (৩০) নামে দুই নারী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে রুমার বাড়ি কালাইয়া ইউনিয়নের কর্পূরকাঠী গ্রামে এবং আসমার বাড়ি কাছিপাড়া গ্রামে।

এ বিষয়ে জানার জন্য চম্পা বেগমের মুঠোফোনে কল করলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জাকির হোসেন বলেন,হত্যা মামলার বাদী হওয়ায় ২০১৩ সালের পর বাড়ি যেতে পারছি না।আসামিদের ভয়ে পুলিশ পাহারায় বাউফলের বগা কেন্দ্রে গিয়ে স্নাতক (বিএ) পরীক্ষা দিতে হয়েছে। এছাড়াও দুইবার জরুরী প্রয়োজনে বাউফলে গিয়েছি, দুইবারেই আমার ওপর হামলা চালানো হয়েছে।পুলিশ উদ্ধার করেছে। সর্বশেষ হামলায় আমার হাত ও পা ভেঙে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।এখনও আমার পায়ের মধ্যে রড রয়েছে।আবার অস্ত্রোপচার করে রড বের করতে হবে। এ কারণে ২০১৮ সালের থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্রাচে ভর দিয়ে চলতে হয়েছে।

জাকির হোসেন আরও বলেন,‘হত্যা মামলাকে ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য মামলার প্রধান আসামি প্রভাব বিস্তার করে এই ধর্ষণ মামলা করিয়েছে। যার প্রমাণ হল ধর্ষণ সম্পর্কে মামলার সাক্ষী ও চম্পা বেগমের স্বামী কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন,হত্যা মামলার বাদী হওয়ার কারণে উপজেলা চেয়ারম্যান তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছেন।তিনি এ হয়রানি থেকে মুক্তি চান।

এ বিষয়ে আবদুল মোতালেব হাওলাদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,‘আমি কাউকে দিয়ে কারো বিরুদ্ধে মামলা করাইনি। আমাকে একটি ধর্ষণ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আমি ১৫ অক্টোবর বাদী, সাক্ষী ও আসামিদের আমার কার্যালয়ে উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ দিয়েছিলাম। দুই পক্ষের কেউ উপস্থিত হয়নি। আমি সেভাবেই তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *