প্রবা‌সে ঈদ: মন প‌রে থা‌কে দে‌শে

Spread the love

সৈয়দ জুয়েল:

ছোটবেলার ঈদে জামা, কাপড় লুকিয়ে রাখা হত-যাতে বাবা, মা ছাড়া কেউ দেখতে না পারে। আর কেউ দেখলেই যেন পূরানো হয়ে যাবে। ঈদের দিন নামাজ শেষে বাবা, মা কে সালাম দিয়ে সালামি নেয়া থেকে শুরু করে মায়ের হাতের মজার মজার রান্না খেয়ে পাড়া বেড়ানো, সালামির টাকায় সিনেমা দেখা, আর কত কি!

প্রবাসীদের ঈদের দিন বন্ধুদের সাথে সময় কাটালেও বাবা, মায়ের ওই ভালবাসার গন্ধটা আর খুঁজে পাওয়া যায়না। প্রযুক্তির আধুনিকায়নে ভিডিও কলে ঈদের দিনে বাবা, মা, সন্তানদের কাছে না পাওয়ার যে আঁকূতি ভেসে ওঠে, তখন মোবাইলের স্ক্রিনটা কেমন যেন ঝাপসা হয়ে ওঠে। বিনা তাঁরের ফোনটায়ও তখন করুন এক সুর ভেসে আসে। যাদের বাবা, মা নেই সে সন্তানরাও বাবা মার অতীত স্মৃতি স্নরনে দু ফোঁটা জল ফেলেন এ দিনটিতে। বাবা, মার কবরের কাছে গিয়ে একটু দাঁড়িয়ে থাকতে না পারার যন্ত্রনাও ভীড় করে অবচেতন মনে।

ঈদ গুলো যেমন আনন্দের, তেমনি বাবা, মা হারা সন্তানদের কাছে এ দিনটি বেদনারও। একটু সুখ আর অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য যুদ্ধ করা প্রবাসীরা এক জীবনে কত বিনিদ্র রাত কাটান, আর ত্যাগের ঝরনায় মিলিয়ে যান, তা অনুমানের হিসেব নিকেশের ফলাফল মেলানো সহজ নয়। দে‌শের প্রতি কত যে মন কাঁ‌দে তা বোঝা‌নো ক‌ঠিন।

যাদের বাবা, মা আছেন- যখন তারা বলেন বাবা কখন আসবি? সন্তান তার অক্ষমতার কথা এড়িয়ে এই তো আসছি কয়টা মাস পর, এভাবে মাস গড়িয়ে ক্যালেন্ডারের পাতায় নতুন বছর জোগ হয়, দেশে আর যাওয়া হয়না।

বাবা, মায়ের চেয়ে থাকা পথের দূরত্ব যতই বাড়তে থাকে সন্তানদের প্রবাসী ঈদ ততই মলিন হতে থাকে। বুকের ভেতর আগলে রাখা ভালবাসা স্পর্শ করতে সন্তানদের পরিশ্রমের কমতি নেই,তারপরও কেন যেন পথ ফুরায়না। কাজ শেষে ক্লান্ত শরীরের চেয়েও বাবা মা কে কাছে না পাওয়ায় মানসিক ক্লান্তিতে বিষাদে ভরে থাকে প্রবাসের প্রতিটি দিন। প্রবাসীরা যখনই দেশে পৌছে বাবা, মা র আদরের হাতের স্পর্শ পায়,সেদিনটাই সত্যিকারের ঈদের দিন মনে হয় প্রবাসী সন্তানদের।

বাবা, মার চোখে সন্তানদের মুখ যেরকম পৃথিবীর সেরা আদুরে মুখ, তেমনি সন্তানদের অনুভূতির প্রতিটি কনায় তাদের বাবা, মা-ই পৃথিবীর সেরা ভালবাসার বাবা, মা। ঈদের এই আনন্দ দিনে ভাল থাকুক প্রতিটি বাবা, মা ও তাদের সন্তানরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *