‘আমার অনুশোচনা হচ্ছে না, ভালো আছি, সুস্থ, স্বাভাবিক আছি।’

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বাবা-মা ও ছোট বোনকে খুন করার দায়ে রোববার আাদালতের এজলাসে ২৪ বছর বয়সী মুনকে স্বাভাবিকই দেখাচ্ছিল। কথাও বলেছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। কেন খুন করলেন এমন প্রশ্নে মুন বলেন, ‘পরকীয়া এবং পারিবারিক ঝামেলার কারণে খুন করেছি।’ আমি একাই হত্যাকা- ঘটিয়েছি।’ অনুশোচনা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে এ তরুণী বলেন, ‘না। আমার কোনো অনুশোচনা হচ্ছে না। বরং গতকাল থেকে আরও ভালো আছি। সুস্থ, স্বাভাবিক আছি।’
এদিকে এ হত্যাকান্ড নিয়ে মুনের পরিবার সম্পর্কে জটিল তথ্য পাচ্ছে পুলিশ। নিহত মাসুদ রানার (মুনের বাবা) বড় ভাই সাখাওয়াত হোসেন মামলায় অভিযোগ করেছেন সম্পত্তির লোভে মুন ও তার স্বামী সফিকুল ৩ জনকে পরিকল্পিতভাবে হত্য করেছে। অন্যদিকে মুনের দাবী, শিশু বয়সে তাদের দুই বোনকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করিয়েছেন মা মৌসুমীকে। এছাড়া তার স্বামী সফিকুলের সঙ্গে বোন জান্নাতুলের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। এ সব ক্ষোভ থেকেই সে একাই বাবা-মা ও বোনকে হত্যা করেছে।

মামলার তদন্ত সংশ্নিষ্টরা জানান, পরিবারটির সদস্যদের মধ্যে জটিলতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। বিয়ের আগে আমিনুল ইসলাম নামের এক যুবক মুনকে প্রাইভেট পড়াতেন। এ সময় ছাত্রীর সঙ্গে তার প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ওই গৃহশিক্ষক ছাত্রীর মা মৌসুমীর সঙ্গেও অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। দু’জনের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ভিডিও করে রেখেছিলেন আমিনুল। সেটি হয়ে ওঠে তার হাতিয়ার। ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে তিনি মা-মেয়েকে জিম্মি করে অনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনকি তিনি মুনের ছোট বোন মোহিনী ও তার এক আত্মীয়ের সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপন করেন। এই বহুমুখী জটিলতাপূর্ণ সম্পর্কের একপর্যায়ে মুনকে শফিকুলের সঙ্গে বিয়ে দেন মৌসুমী। এতে ক্ষিপ্ত হন আমিনুল। তিনি মুনের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও তার স্বামীকে দেখান। এতে মুনের সংসারে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। অন্যদিকে মৌসুমীও তখন আমিনুলের ওপর বিরক্ত। শেষে শফিকুল, মৌসুমী ও তার এক বোন মিলে আমিনুলকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন। ওই ঘটনায় মুন আসামি হয়ে ১ মাস ২২ দিন কারাভোগ করেন। পরে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ অপর তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। তারা জামিনে রয়েছেন।

পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পড়ালেখায় ভালো ছিলেন মুন। এসএসসি পরীক্ষায় তার জিপিএ ৫ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার মা আগেই দুই মেয়েকে অসামাজিক কার্যকলাপে যুক্ত হতে বাধ্য করেছেন। এমনকি পরীক্ষা চলাকালেও তাকে ছাড় দেওয়া হয়নি। এ কারণে এসএসসিতে জিপিএ ৪.৮ পান মুন। কৈশোরে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত করায় তিনি মায়ের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। আবার তার বাবা মাসুদ রানা প্রবাসে আরেকটি বিয়ে করেছেন, দুই মেয়ের ব্যাপারে তিনি কোনো মনোযোগ দেননি। মায়ের নির্যাতন থেকে মেয়েদের বাঁচাতে কোনো ভূমিকা না রাখায় তার প্রতিও ক্ষোভ জমে ছিল মুনের। আর শ্যালিকা মোহিনীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন শফিকুল। এতে সংসার ভাঙার উপক্রম হওয়ায় ছোট বোনকেও দুনিয়া থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেন মুন।

দুই মাস আগেও হত্যাচেষ্টা চালান মুন :
দুই মাস আগে প্রথমবার তিনি মা-বাবা-বোনকে হত্যার চেষ্টা চালান। সেদিন মা ও বোন ঘুমের ওষুধ মেশানো তরমুজের জুস খেয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। তবে ডায়াবেটিস রোগী হওয়ায় খেতে রাজি হননি বাবা মাসুদ। ফলে পরিকল্পনা সফল হয়নি।

কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, তরমুজ খাওয়ার পর মা-মেয়ে এত ঘুমাচ্ছেন কেন? তরমুজ সম্ভবত পচা ছিল, তাই বিষক্রিয়া হয়েছে- এমন ব্যাখ্যা দিয়ে প্রসঙ্গ কাটিয়ে দেন মুন। সে ঘটনা থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এত অল্প মাত্রার ওষুধে হবে না। হত্যা করতে হলে মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে। এ কারণে তিনি শুক্রবার দুই মিলিগ্রাম মাত্রার ৪০টি ট্যাবলেটের গুঁড়া পানীয়তে মেশান। অথচ এই ওষুধ একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ চার মিলিগ্রাম পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারেন।

সফিকুলের বিষয়ে স্বজনদের অভিযোগ :
চার বছর আগে একবার তিনি শাশুড়িকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালান। সেবার প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর দগ্ধ হন মৌসুমী। এ ঘটনা বাইরে প্রকাশ না করতেও চাপ দেওয়া হয়েছিল। আর শ্যালিকা মোহিনীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের একটি ভিডিও শফিকুলের কাছে ছিল। সেটি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে কয়েক বছর ধরে মেয়েটির ওপর যৌন নির্যাতন চালান তিনি। যখনই মোহিনীর বিয়ের প্রস্তাব আসত, তিনি মেয়েটিকে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে বিয়ের উদ্যোগ ভণ্ডুল করে দিতেন। দাবিমতো টাকা না পেয়ে শফিকুল এই হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে স্ত্রী মুনকেও এতে যুক্ত হতে বাধ্য করেন। মুন যে হত্যার দায় স্বীকার করছেন- এটি তার স্বামীরই পরিকল্পনার অংশ। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে স্বজনরা আশা করেন।

কদমতলী থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, শ্যালিকার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি পুলিশও কিছুটা ধারণা করেছে। আর সেই ভিডিওটির কথাও শোনা গেছে। তবে এখনও সেটি হাতে পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *