লকডাউনের পরে লঞ্চ চালাবেন না বেতন-ভাতা বঞ্চিত শ্রমিকরা

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : চলমান লকডাউন শুরুর আগের দিন (২২ জুলাই) বরিশাল থেকে ১১টি লঞ্চ টইটুম্বুর যাত্রী নিয়ে ঢাকায় গেছে। ৩ সহ¯্রাধিক যাত্রী ছিল প্রতিটি লঞ্চে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও যাত্রীদের কাছ থেকে স্বাস্থ্যবিধির ফর্মুলায় দেড়গুন বেশী ভাড়া নেয়া হয়েছে। ঈদ উল আযহা উৎসব উপলক্ষে গত ১৫-২২ জুলাই সাতদিন এভাবেই ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চল রুটের লঞ্চগুলোতে যাত্রী পরিবহন করা হয়েছে। এতে লাভবান মালিকরা হাজার হাজার শ্রমিককে ঈদ উৎসব বোনাস থেকে বঞ্চিত করেছেন। গত ঈদ উল ফিতরেও উৎসব বোনাস দেননি মালিকরা। করোনাভাইরাসে লকডাউন শুরুর পর বেশীরভাগ শ্রমিকের বেতন বকেয়া পড়েছে ৫ থেকে ৬ মাস। পাচ্ছেন না উৎসব ভাতাও। এতে এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে নৌযানের মাষ্টার-ড্রাইভার লকডাউন শেষে নৌযান না চালানোর হুশিয়ারী দিয়েছেন।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের রুটের যাত্রীবাহি নৌযানে ৫ সহ¯্রাধিক স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন। গত এপ্রিলে লকড্উান শুরুর পর থেকেই তাদের বেতন অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে দুটি বড় উৎসব শেষ হলেও উৎসব ভাতা পাননি তারা।
ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল লঞ্চ এমভি সুন্দরবন-১০ লঞ্চের মাস্টার মজিবর রহমান বলেন, গত ১৫-২২ জুলাই ঢাকা থেকে দুরপাল্লা রুটের প্রতিটি লঞ্চ কোম্পানীর মালিক কমপক্ষে ৫০ লাখ আয় করছেন। সুন্দরবন লঞ্চেরই ৫টি লঞ্চে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আয় হয়েছে। মালিকপক্ষ ঈদ উল আজাহার উৎসব দেননি শ্রমিকদের। ঈদ উল ফিতরেও দেয়া হয়নি। এতে নৌযানের ক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা সুপারভাইজারদের মাধ্যমে মালিকপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন, বকেয়া উৎসব ভাতা না পেলে তারা আর নৌযান চালাবেন না। মজিবর রহমান বলেন, গত জুনের বেতন পেয়েছেন জুলাইতে। এর আগের কয়েক মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। অথচ লঞ্চে ধারন ক্ষমতার ৪ গুন যাত্রী বহন করা হয়েছে ঈদ উল আযহায়। ভাড়াও নেয়া হয়েছে দ্বিগুন।
মাস্টার মজিবর বলেন, ঢাকা-বরিশাল রুটে এক একটি লঞ্চে গড়ে ২০জন করে লস্কর, সুকানী, গ্রিজার, মাস্টার, ড্রাইভার আছেন। দুরপাল্লার রুটের নৌযানে এ শ্রেণীর শ্রমিকরা সরকারি গেজেট হিসেবে ৫-১০ হাজার টাকা উৎসব বোনাস পাবেন। সকল নৌযানে কেবিন বয়, কেরানীসহ আরও বিভিন্ন শ্রেণীর ৫ শতাধিক রয়েছে শুধুমাত্র ঢাকা-বরিশাল রুটের যাত্রীবাহি লঞ্চে। তারা উৎসব বোনাস বঞ্চিত হয়েছেন।
ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের মাস্টার মো: আলমাস বলেন, লকডাউন তাদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। মালিকরা সারাবছর আয় করলেও শ্রমিকদের ঈদের বোনাস দিতেও গড়িমসি করছেন। করোনায় গত বছর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ মাস বেতন নিয়ে গড়িমসি করছেন মালিকরা।
লঞ্চ লেবার এসোশিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহ আলম জানান, তার জানামতে সারাদেশে মাত্র ২/১টি লঞ্চ কোম্পানী ঈদ উল আজাহায় শুধু উৎসব ভাতা দিয়েছেন, তবে বেতন দেননি। কোন কোন কোম্পানী জুন পর্যন্ত বেতন দিলেও অনেক কোম্পানী মে মাসের বেতনও বকেয়া রেখেছে। এজন্য লঞ্চ মালিকদের বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে এবং বিআইডব্লিউটিএ’র উর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, গত চারমাসে সবমিলিয়ে একমাস লঞ্চগুলো যাত্রী পরিবহন করতে পারায় মালিকরা কিছুটা আথিক সংকটে আছেন। তবে এসব মালিকদের আরও অনেক ব্যবসা খাত থেকে আয় হচ্ছে। নৌযান শ্রমিক নেতা শাহআলম বলেন, শ্রমিকরা বছরের পর বছর মালিকদের লাখ লাখ টাকা আয় করে দেন। অথচ লকডাউনের ক্রান্তিকালে স্বচ্ছল মালিকরা শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন এমনকি উৎসব ভাতা দিচ্ছেন না। আবার কিছু মালিক ঘরের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বঞ্চিত করে নামখ্যাতি অর্জনের জন্য এলাকায় ত্রান বিতরণ করছেন।
শ্রমিকদের বেতন বকেয়া রাখা এবং উৎসব বোনাস না দেয়ার বিষয়টি জানতে সুন্দরবন লঞ্চের স্বত্ত্বাধিকারী সাইদুর রহমান রিন্টুর মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন অভন্তরীন নৌ চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার সাধারন সম্পাদক ও ঢাকা-বরিশাল নৌ রুট কমিটির সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ১৫ জুলাই থেকে ৭দিন লঞ্চ চললেও প্রথম ৩দিন (১৮ জুলাই পর্যন্ত) যাত্রী সংকট ছিল। পরের কয়েকদিন যাত্রী বেশী হলেও যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে মালিকদের তেমন লাভ হয়নি। এসব কারনে মালিকরা উৎসব ভাতা দিতে পারেননি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে জানান লঞ্চ মালিকদের এ নেতা।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাস সংক্রামন রোধে কঠোর বিধিনিষেধের কারনে গত ২২ জুন থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসময়ের মধ্যে শুধুমাত্র গত ১৫-২৩ জুলাই পর্যন্ত ৭দিন লঞ্চ চলাচল করেছে। এর আগে চলতি মৌসুমের ৪ মার্চ লকডাউনে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল ২৩ মে পর্যন্ত। এছাড়া গতবছর ২৪ মার্চ থেকে ২৪ জুন টানা ৯৩দিন লঞ্চ চলেনি।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *