দেশের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল কমেছে ১৯ ভাগ

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক:
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া দিন দিন চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করা বনাঞ্চলগুলোরও ক্ষয় হচ্ছে। বাংলাদেশেই শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল বা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। গত ২৭ বছরে বাংলাদেশ তার শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চলের ১৯ শতাংশই হারিয়ে ফেলেছে। ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।

ডব্লিউএমওর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের তিন-চতুর্থাংশই এশিয়ায়। এর মধ্যে বাংলাদেশে ২৪ শতাংশ। মিয়ানমারে ১৯, ভারতে ১৭ ও থাইল্যান্ডে রয়েছে ১৪ শতাংশ। তবে বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের অবস্থা দিন দিন বেশ নাজুক হয়ে উঠছে। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের পরিসর ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যেই শুধু ১৯ শতাংশ কমেছে।

শুধু এই মানদণ্ডেই নয়, যত দিন যাচ্ছে এশিয়ার আবহাওয়া ও জলবায়ু ততই চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে পরিচালিত এই গবেষণার প্রধান সমন্বয়ক ছিল ডব্লিউএমও। এতে বলা হয়েছে, চরম আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদির কারণে ২০২০ সালে এশিয়ায় হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে, আর বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখো মানুষ। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে শত শত কোটি ডলারের। বহু অঞ্চলের সার্বিক অবকাঠামো ও বাস্তুতন্ত্র একেবারে ভেঙে পড়েছে। আর এসব কারণে এই গোটা অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা।

এই গবেষণা এমন এক সময় পরিচালনা করা হয়েছে, যখন গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারিতে আক্রান্ত। এই মহাদুর্যোগে আবার একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিয়েছে এশিয়ার দেশগুলোয়। সঙ্গে ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পড়া দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। এর মধ্যে রয়েছে হিমবাহের গলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো।

প্রতিবেদনে হিমালয় থেকে শুরু করে উপকূলীয় অঞ্চল কিংবা ঘনবসতিপূর্ণ শহর থেকে মরুভূমি এলাকাগুলো কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে ডব্লিউএমও মহাসচিব অধ্যাপক পেটেরি টালাস বলেন, ‘আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ, বিশেষত বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, খরার ভয়াবহ প্রভাব রয়েছে বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশের ওপর। এতে কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মানুষের অভিবাসী, শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি। আর এর সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। আর এই বিষয়গুলো সম্মিলিতভাবে দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই উন্নয়নে বড় বাধা সৃষ্টি করছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’

ডব্লিউএমওর সমন্বয়ে পরিচালিত এ গবেষণায় যে সংস্থাগুলো জড়িত ছিল, তার মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনীতি ও সামাজিক কমিশন এসকাপসহ অন্য সংস্থাগুলো এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আবহাওয়া দপ্তরগুলো। একই সঙ্গে জলবায়ু সম্পর্কিত বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের গবেষক দলও এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল ও দেশের নীতিনির্ধারণী মহল জলবায়ু পরিবর্তন ও চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া নিয়ে কী ভাবছে, তা তুলে ধরার জন্য এবং আসন্ন জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এর আগে আগে তাঁদের এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণে উদ্দীপ্ত করার লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *