জেলেদের প্রণোদনার চালে ইউপি ভোটের রাজনীতি

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট :  ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করতে নদনদীতে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা এক সপ্তাহ আগে (২৫ অক্টোবর) শেষ হয়েছে। প্রণোদনা হিসাবে ২২ দিনের মধ্যে তালিকাভূক্ত প্রতিজন জেলে ২০ কেজি করে চাল পাবেন। অথচ বরিশালের কয়েকটি ইউনিয়নে এখনও জেলেরা প্রনোদনার চাল পাননি। আগামী ১১ নভেম্বর ওই ইউনিয়নগুলোতে চেয়ারম্যান-মেম্বর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই ইউনিয়নগুলোতে প্রণোদনার চালে জেলে ভোটারদের প্রভাবিত করার করার অভিযোগ উঠেছে।
কীর্তণখোলা ও আড়িয়া খাঁ নদের তীরের জনপদ শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নে তালিকাভূক্ত জেলে ৯০৮ জন। জাতীয় ক্ষুদ্র মৎসজীবী সমিতির শায়েস্তাবাদ ইউনিয়ন শাখার সভাপতি মো. খোরশেদ গতকাল বিকালে জানান, তার ইউনিয়নে গতকাল সোমবার পর্যন্ত জেলেদের চাল দেয়া হয়নি। তবে আজ মঙ্গলবার দেয়া হবে বলে তিনি শুনেছেন।
ইউপি সচিব মো. আরিফুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ মঙ্গলবার জেলেদের মধ্যে বিতরন করা হবে। ইউনিয়নে চেয়ারম্যান-মেম্বর পদে ভোট থাকায় ব্যস্ততার কারনে দেরী হয়েছে। ভোটের প্রচার-প্রচারনা চলাকালে চাল বিতরণে ভোটাররা প্রভাবিত হতে পারেন প্রসঙ্গে সচিব বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান-মেম্বরদের কোন হস্তক্ষেপ নেই। ট্যাগ কর্মকর্তা হিসাবে নিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে চাল বিতরন করা হবে। সচিব বলেন, ইউনিয়নে ৯০৮ জন তালিকাভূক্ত জেলের মধ্যে চাল ৬৬২ জন জেলের চাল বরাদ্ধ হয়েছে।
একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছে, বর্তমান চেয়ারম্যান ও চলমান নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আরিফুজ্জামান মুন্নার হস্তক্ষেপে চাল প্রাপ্তিযোগ্য জেলে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।
তবে শায়েস্তাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান মুন্না বলেন, তালিকাভূক্ত জেলেদের মধ্যে থেকেই চাল প্রাপ্তিযোগ্য জেলে নির্ধারন করা হয়েছে। তিনি প্রার্থী হওয়ায় এসব বিষয়ে ইউপি সচিব সকল দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কোনভাবেই এসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত হননি। ভোটের ব্যস্ততা ও ইউনিয়নে অডিট চলায় এতদিন চাল বিতরণ করা হয়নি বলে দাবী করেন চেয়ারম্যান।
শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে ওমর আলী শরীফ বলেন, মাছ ধরা বন্ধ থাকার মধ্যেই চাল দেয়ার নিয়ম। একাধিকবার ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও চাল পাওয়া যায়নি। একই ওয়ার্ডের জেলে আইয়ুব আলী জানান, আসন্ন নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে জেলেদের ওই চাল দেয়া হতে পারে।
কালাবদর নদী তীরের ইউনিয়ন চন্দ্রমোহনের জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির ইউনিয়ন সভাপতি আকবার হোসেন জানান, এ ইউনিয়নে ১২০০ জেলে প্রণোদনার চাল পাওয়ার কথা ছিল। ৪০০ জেলেকে এখনও চাল পাননি। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা পকেট তালিকা করে নিজস্ব লোকদের চাল দেয়ার চেস্টা করছে। এক নামে ২-৩ বারও চাল দেয়া হয়েছে এমনটা ধরা পড়েছে। পরে চেয়ারম্যান এসব নাম মাষ্টাররোলভূক্ত করেন।
চন্দ্রমোহন ইউপি সচিব সুবধচন্দ্র দাস বলেন, তারা ৮০০ জেলেকে চাল দিয়েছেন। এখনও ৪০০জনের চাল দেয়া বাকি রয়েছে। এই ৪০০ জনকে নিয়ে মেম্বাররা রাজনীতি করেন। তারা প্রণোদনার চাল দিয়ে ভোট কেনেন। তাই মৎস্যজীবী নেতাদের বলেছেন তাদের একটি তালিকা দেয়ার জন্য।
চরমোনাইতে ৮১৯ জেলেকে প্রণোদনার চাল দেয়া হয় গত ১৯ অক্টোবর। ইউপি সদস্য মামুন গাজী বলেন, চেয়ারম্যান ওই চাল কি করেছেন কিভাবে দিয়েছেন তা তাদের জানা নেই। তাদের কোন পরামর্শ নেয়া হয়নি। শোনা যাচ্ছে ভোটের সময় চাল দেয়া হয়েছে ভোটারদের মুখ দেখে।
চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদ সচিব শহিদুল ইসলাম বলেন, ৩১২ জন জেলে আগেই চাল পেয়েছেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মৎস্যজবীবীরা জনিয়েছেন, ভোটের প্রভাবে এবার প্রকৃত জেলে নয় এমন অনেকে চাল পেয়েছেন।
জাতীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সিকদার এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন স্থানে জেলেদের প্রণোদনার চাল নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বররা ভোটের রাজনীতি শুরু করেছেন। জেলে ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পরও চাল দেয়া হয়নি।
এব্যপারে বরিশাল সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জিব সন্যামত বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও জেলেদের কাছে চাল না পৌছানো দু:খজনক। ভোটের কারনে হয়তো কোন কোন ইউনিয়নে এখনও চাল দেয়া সম্পন্ন হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *