সৈয়দ জুয়েল:
বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেট চলছে শের-ই বাংলা স্টেডিয়াম মিরপুরে। মাঠের ভেতর বাহিরে বাংলাদেশিরা বহন করছে পাকিস্তানি পতাকা। নিজ দেশকে সমর্থন না করে ভিনদেশিদের জয়ের স্লোগান-বিশ্বের আর কোন স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিকরা দেয় কি-না সে প্রশ্ন অবান্তর। একটি দলের খারাপ সময় যেতেই পারে, হোক তা দূর্বল ম্যানেজমেন্ট বা খেলোয়ারদের পেশাদারিত্ব বা দক্ষতার অভাবে।
কিন্তু যে দেশটি স্বাধীনতা যুদ্ধে ধর্ষন,লুটতরাজ,লাখ লাখ সাধারন মানুষ হত্যা থেকে বুদ্ধিজীবি হত্যা করলো, যাতে দেশ যেন আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পরে। শিল্প, কারখানা, কালভার্ট পর্যন্ত ধ্বংস করে দিয়ে গিয়েছিলো ঐ নরপিশাচরা। সেই দেশের সমর্থন করে লাল সবুজের দেশে, সেই দেশেরই কিছু তথাকথিত নাগরিক।
পাকিস্তানিরা এখনো বাংলাদেশকে তারা তাদের দেশের অংশ মনে করে তাদের দেশে বাংলাদেশের পতাকা কখনও উড়ায়না। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে যে দেশের কিছু নাগরিক এখনও পাকি পতাকা বহন করে,এরাই দেশের জন্য হুমকি। আজ যদি ভারত বাংলাদেশের খেলায় মাঠে কোন বাংলাদেশি ভারতের পতাকা উড়িয়ে সাপোর্ট দিত,তখন এ নিয়ে নষ্ট রাজনীতিবিদদের নষ্ট রাজনীতিতে মাঠ ঘাট সয়লাব হয়ে যেত। ভারত বাংলাদেশকে দখল করলো বলে স্বস্তা কথার ব্যাবসা চালিয়ে যেত। আজ তাদের চেতনায় মরীচিকা! যে দেশে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধারা এখনো মৃত্যুর শেষ বেলায় এসেও পাক হানাদার বাহিনীর পৈশাচিক নির্মমতাকে বহন করছেন, শিশু,নারী ধর্ষন শেষে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যাকারী সেই ধর্ষক- হত্যাকারী দেশ পাকিস্তানের পতাকা জড়িয়ে থাকে বাংলাদেশে জন্ম নেয়া কিছু ইতিহাস না জানা নাগরিক। অনেক অতি উৎসাহী নাগরিকরা আবার এটিকে স্রেফ খেলা ও এটি তার ব্যাক্তিগত পছন্দের বিষয় বলেও বক্তব্য দিচ্ছেন।
জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় এ আচরন! এ সব দর্শকরা আদৌ কি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানেন! যদি না জেনে থাকেন তাহলে সেটি ভয়ের। কবি আব্দুল হাকিম তার কবিতায় এদেরকেই বলেছিলেন-
“যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবানী
সে সব কাহার জন্ম নির্নয় ন জানি”
বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে অনেক দিকে এগিয়ে। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ায় আমরা একটি পতাকা পেয়েছি,দেশ পেয়েছি,নিজ ভাষায়,মায়ের ভাষায় কথা বলতে পেরেছি।এটি সত্য আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরনে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। আমাদের সাধ থাকলেও সামর্থের অভাব রয়েছে। আবার যতটুকু সামর্থ রয়েছে তার মাঝে অনিয়ম,দূর্নীতিতে পিছিয়ে পরছি। স্বাধীনতার পর দুর্নীতির মূল আমরা উৎপাটন করতে পুরোপুরি ব্যার্থ হয়েছি।
তবে তারপরও এগুচ্ছি আমরা হয়তো ধীরে,তারপরও এগুচ্ছি। ব্যার্থ হোক সফল হোক দেশ আমাদের। কিন্তু যাদের জন্য আমাদের মাটি রক্তে ভিজেছে, লাখো শহীদের আত্মত্যাগে আমরা যে দেশ পেয়েছি। যে নারীর সম্ভ্রমের বিনিময় যে দেশ সে দেশে পাকিস্তানের পতাকা কোন সুস্থ মানুষ বহন করতে পারেনা। সুস্থ মানুষ নিয়ে সুস্থ দেশ গঠনে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এটিই প্রত্যাশা।