নাগরিক রিপোর্ট ॥ ঈদ উল আযহা যতই ঘনিয়ে আসছে ততোই কোরবানীর পশু ক্রয় নিয়ে টেনশনে পড়ছেন বরিশালের সাধারন মানুষ। এবার দেড় লাখ চাহিদার বিপরীতে বরিশাল বিভাগে কোরবানীর দেয়ার মত পশু রয়েছে প্রায় ৮৭ হাজার। বাকি গরু আসবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে- এমনটাই জানিয়েছে বিভাগীয় প্রানী সম্পদ বিভাগ। এদিকে কোরবানীতে পশুর দাম পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন স্থানীয় ১৫ হাজার ১৪৪ খামারী। তাদের মতে, সাধারন মানুষ খামার থেকে গরু, ছাগল কেনার মত অভ্যস্ত নন, মানোসিকতাও এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। যেকারনে ব্যাপকভাবে খামার গড়ে না ওঠায় প্রতিবছরই এঅঞ্চলে পশুর ঘাটতি থাকে।
বরিশাল বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, বিভাগের ৬ জেলায় চাহিদার অর্ধেক পশুর যোগান দেয়ার সম্ভব হবে। অবশিস্ট চাহিদা মেটাতে সীমান্ত জেলা যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষিরা, মেহেরপুর এলাকা থেকে পশু আমদানীর নির্ভর করতে হবে। সুত্রমতে, এবছর বরিশালের ৬ জেলায় কোরবানীর পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় দেড় লাখ। তার বিপরীতে স্থানীয় খামারে পশু আছে ৮৭ হাজার ১৫৩টি। বিভাগে তালিকাভূক্ত পশুর খামার আছে ১৫ হাজার ১৪৪টি। ঈদ উল আজাহায় পশু চাহিদার এ পরিসংখ্যান প্রসঙ্গে দপ্তটির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, গতবছর বিভাগের ৬ জেলায় প্রায় দেড় লাখ পশু কোরবানী হয়েছে। চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ের হিসেব অনুযায়ী তারা এ সংখ্যা নির্ধারন করেছেন। তবে প্রানী সম্পদ অধিদপ্তরে তালিকাভুক্ত স্থাণীয় ১৫ হাজার ১৪৪খামারীরা অধিকাংশেই কোরবানীতে এবার গরু ছাগলের দাম পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন।
বৃহস্পতিবার কথা হয় বরিশাল সদর উপজেলার তালুকদার হাট এলাকার রাখালী এ্যাগ্রো ফার্মের অংশিদার জাহাঙ্গির আলম ও জাহিদুর রহমানের সাথে। তারা জানান, ৪ মাস ধরে খামারে ২২টি দেশী গরু লালনপালন করছেন। কিন্তু কোরবানীর আগ মুহুর্তে ক্রেতা ঘুরে ফিরে দেখে যাচ্ছেন। কেনার আগ্রহ নেই কারোরই। এর কারন হিসেবে খামার মালিকরা জানান, এঅঞ্চলের ক্রেতাদের ধারনা হাটে গেলে অনেক গরু পাওয়া যাবে। তাছাড়া আবহাওয়ার কারনে বরিশালে গরু ছাগলের গ্রথ তেমন বাড়ে না। তবে তাদের দেখাদেখি এই গ্রামে ৮/১০টি ছোট খামার হয়েছে। এবার কোরবানীতে ২২টি গরুর প্রতিটি ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে।
সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন এলাকার পশুর খামারী মো: দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিনি প্রাকৃতিক ভাবে গরু মোটাতাজাকরন করেন। কোরবানী আসলেও মানুষের আগ্রহ কম। খামারের চেয়ে সবাই হাটে যেতে চান। তিনি বলেন, বাহির থেকে গরু না আসলে ছোট উদ্যোক্তারা লাভবান হবে। একই ধরনের মন্তব্য করলেন চন্দ্রমোহনের অপর খামারী মো: বাদশা হাওলাদার।
এস প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, দক্ষিনাঞ্চলে কোরবানীর পশুর চাহিদা মেটানোর পর্যায়ে যেতে আরও অনেক বছর অপেক্ষা করতে হবে। এ অঞ্চল নদী-সাগর বেষ্টিত হওয়ায় পশু খামার ব্যবসার মতো প্রতিকূল পরিবেশ আগে ছিল না। যে কারন এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠী পশুর খাবার ব্যবসায়আগ্রহী হয়নি।
এদিকে বরিশালের বৃহৎ পশুর হাট হিসেবে পরিচিতি বানারীপাড়ার গুয়াচিত্তা, বাকেরগঞ্জের বোয়ালী, সদর উপজেলার কাগাসুরা গরুর হাটে তোরজোর চলছে। গুয়াচিত্তা পশুর হাটের ইজারাদার মিলন মৃধা বলেন, তারা হাটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের প্রতিবছরই উত্তর অঞ্চলের পশুর উপর নির্ভর করতে হয়।
এব্যপারে বরিশাল বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কানাই লাল স্বর্ণকার বলেন, গত কয়েকবছরে বরিশালে খামার বৃদ্ধি পাওয়ায় পশু কোরবানীর ক্ষেত্রে ঘাটতি অনেক কমেছে। দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অন্য জেলা থেকে আমদানী করে পশুর হাটে এ ঘাটতি পুরন করে থাকে। তবে এবার দেশে গরু ছাগলের কোন ঘাটতি নেই বলে তিনি দাবী করেন।
২০১৯-০৭-২৭