এক সপ্তাহে ভারতে তিন নক্ষত্রের পতন

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : ভারতীয় সংগীত জগতে ফের শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কণ্ঠের জাদুতে গত কয়েক দশক ধরে সংগীতের মাধ্যমে মাতিয়ে রেখেছিলেন যারা শ্রোতাসহ সবাইকে। মৃত্যু যেন হঠাৎ করেই নাড়া দিয়ে বসেছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। একে একে ঝরে পড়ছে নক্ষত্রগুলো। তবে খুব কাছাকাছি সময়ে এমন চলে যাওয়া একটু বেশিই বেদনাদায়ক।

তেমনটাই ঘটল তিন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও বাপ্পি লাহিড়ীর ক্ষেত্রে। যাদের কণ্ঠের যাদুতে মুগ্ধ ছিলেন কোটি কোটি মানুষ।

লতা মঙ্গেশকর : রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। ভারতের ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে সফল গায়িকা তিনি।

১৯৪২ সালে ১৩ বছর বয়সে তার গানের ক্যারিয়ার শুরু হয়। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি গেয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি গান। তার কণ্ঠে সুর পেয়েছে বিভিন্ন ভাষা। বরেণ্য এই শিল্পী ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘ভারত রত্ন’ পদকে ভূষিত হয়েছেন। এ ছাড়া দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ সব প্রাপ্তিই যুক্ত হয়েছে তার ঝুলিতে।

সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় : উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ১৫ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। ভারতের তৃণমূল সংসদ সদস্য শান্তনু সেন টুইট করে এ তথ্য জানান। গেল ২৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রবাদ প্রতিম সংগীতশিল্পী। ওই দিনই তাকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছিল তার। ঘটনাচক্রে তার দু’দিন আগেই কেন্দ্রের পদ্মশ্রী পদক প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তার সংগীত শিক্ষার মূল কান্ডারি ছিলেন দাদা রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৯৪৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রথম গান রেকর্ড করেন তিনি।

১৯৪৮ সালে প্রথমবার প্লেব্যাক করেন, সিনেমার নাম ‘অঞ্জনগড়’। ওই বছর তার কণ্ঠে আরও তিনটি গান প্রকাশিত হয়। যার সুবাদে গায়িকা হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যান।

১৯৫০ সালে মুম্বাই পাড়ি দিয়েছিলেন বাংলা বেসিক আধুনিক গানের সম্রাজ্ঞী সন্ধ্যা। ১৭টি হিন্দি ছবিতে প্লেব্যাক করেন তিনি। শচীন দেব বর্মনের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল তার বম্বে সফর। তবে সেখানে সন্ধ্যার প্রথম প্লেব্যাক করিয়েছেন সুরকার অনিল বিশ্বাস। সিনেমার নাম ‘তারানা’।

বাপ্পি লাহিড়ী : মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) শেষ রাতে ৬৯ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই এ খবর নিশ্চিত করেছে।

গত বছর এপ্রিলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।

১৯৭০ থেকে ৮০-এর দশকে হিন্দি ছায়াছবির জগতে অন্যতম জনপ্রিয় নাম বাপ্পি লাহিড়ী। হিন্দিতে ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘চলতে চলতে’, ‘শরাবি’, বাংলায় অমর সঙ্গী, আশা ও ভালোবাসা, আমার তুমি, অমর প্রেম প্রভৃতি ছবিতে সুর দিয়েছেন। গেয়েছেন একাধিক গান। ২০২০ সালে তার শেষ গান ‘বাগি-৩’ এর জন্য। কিশোর কুমার ছিলেন বাপ্পির সম্পর্কে মামা। বাবা অপরেশ লাহিড়ি ও মা বাঁশরী লাহিড়ি— দু’জনেই সংগীত জগতের মানুষ। ফলে একমাত্র সন্তান বাপ্পি ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। মা-বাবার কাছেই পান প্রথম গানের তালিম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *