বরিশাল শিক্ষা কর্মকর্তার ৩ টাকা করে ঘুষ বানিজ্য

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট ॥ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী প্রতি ৩ টাকা করে উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বরিশাল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি এ টাকা নেন। গত এপ্রিলে প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় প্রায় ৩৯ হাজার পরীক্ষার্থী বাবদ তিনি প্রায় সোয়া লাখ টাকা আদায় করেছেন। গত শুক্রবার ও শনিবার অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায়ও ৩ টাকা করে প্রায় ১৭ হাজার টাকা দেয়ার জন্য কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন।
পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বরত শিক্ষকরা এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র আনা-নেয়ার পরিবহন ও আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে তাদের কাছে পরীক্ষার্থী প্রতি ৩ টাকা করে চেয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। গত ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত প্রিলিমিনারী পরীক্ষায়ও একই হারে তাকে টাকা দিতে হয়েছে। কেন্দ্রের দায়িত্বরত শিক্ষকরা জানান, তারা কেন্দ্র ফি বাবদ যে টাকা পান সেখান থেকে পরীক্ষার্থী প্রতি ৩ টাকা করে দেন বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসে।
তবে এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগটি সম্পুর্ন মিথ্যা। পরীক্ষা গ্রহনের দায়িত্বে জেলা জেলা প্রশাসকের। তিনিই সবকিছু দেখভাল করেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় জেলা পর্যায়ে গঠিত কমিটিতে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক সভাপতি এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সদস্য সচিব। পরীক্ষা গ্রহনের যাবতীয় খরচ সভাপতির মাধ্যমে পরিশোধ করেন জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
সুত্র জানায়, চলমান ১৫তম শিক্ষক নিববন্ধন এর প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় বরিশাল জেলার ২৯টি কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৩৮ হাজার ৬৪৫ জন। তার মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে ২৫ হাজার ২৩৪ জন এবং কলেজ পর্যায়ে ১৩ হাজার ৩৮১ জন। প্রিলিমিনারীতে ৩ টাকা করে মোট ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৩৫ টাকা আদায় করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। প্রিলিমনারীতে উত্তীর্ন হয়ে লিখিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হয় স্কুল পর্যায়ে ২ হাজার ৩৪ জন এবং কলেজ পর্যায়ে ৩ হাজার ৮২৭ জন। এক্ষেত্রে মোট পরীক্ষার্থী ৫ হাজার ৮৬১। গত শুক্র ও শনিবার নগরীর সরকারি ব্রজমোহন কলেজ ও সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ পরীক্ষায় ৫ হাজার ৮৬১ পরীক্ষার্থী বাবদ প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার টাকা দেয়ার জন্য ২ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার।
সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের উপাধ্যক্ষ ও পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ পরীক্ষার্থী প্রতি ৩ টাকা করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, উত্তরপত্র ও পরীক্ষাগ্রহনের আনুসাঙ্গীক সরঞ্জাম জমা দেয়ার সময় এ টাকা দিতে হয়। হারুন অর রশিদ বলেন, শনিবার দুপুরে পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষা কমকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে ওই টাকা দেয়ার তাগাদা দিয়েছেন। গত এপ্রিলেও প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী বাবদ ৩ টাকা করে দেয়ার কথা জানিয়েছেন উপাধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ।
সরকারি বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শফিকুর রহমান সিকদার জানান, তার কলেজ কেন্দ্র থেকেও পরীক্ষার্থী বাবদ ৩ টাকা করে জেলা শিক্ষা অফিসে দিতে হয়। এ কলেজের পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক সহযোগী অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, প্রিলিমিনারী পরীক্ষাও কেন্দ্র থেকে প্রতি পরীক্ষার্থীর জন্য ৩ টাকা করে জেলা শিক্ষা অফিসে দিয়েছেন। শনিবার অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায়ও টাকা দিতে হবে বলে তিনি শুনেছেন।
এব্যপারে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, কেন্দ্র ফি বাবদ প্রতিষ্ঠান প্রধানরা টাকা পাবেন। উল্টো তাদের টাকা দেয়ার কোন খাত নেই। কারা কোন খাত দেখিয়ে ৩ টাকা করে নিচ্ছেন এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। বিষয়টি খোজ খবর নিয়ে দেখবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *