লেজোগোবরে অবস্থা বরিশাল বিএনপির ৩ নতুন কমিটির

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : ভালো নেই বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি। নতুন কমিটি গঠন করেও কোন্দল নিরসন করা সম্ভব হয়নি। বরং তা বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিল্পু ধারা-উপধারায়। এতে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পুরো দল, তেমনি নেতাকর্মীরা হয়ে পড়ছেন নিস্ক্রিয়। যার প্রভাব আগামী নির্বাচন কিংবা সরকার বিরোধী আন্দোলনে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টবরা।
গত বছরের ৩ নভেম্বর বরিশাল উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। শুরুতে নতুন কমিটিতে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব তৈরী হলেও এখন আর তা নেই। অল্কপ্পদিনেই তৃণমহৃলের মোহ ভঙ্গ ঘটে। বরিশালের প্রভাবশালী নেতা ও কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ারকে কোনঠাসা করতে গিয়ে অনভিজ্ঞ আর অযোগ্যদের পাল্লা ভারী করা হচ্ছে। এতে পুরো দলকেই ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। দলের প্রত্যেক অঙ্গ সংগঠন থেকে শুরু করে প্রত্যেক স্টøরে পড়ছে এর প্রভাব।
নেতাকর্মীরা জানান, তিন মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পহৃর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা থাকলেও বরিশাল উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর বিএনপির নেতারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কতদিন তারা এ কাউন্সিল করতে পারবেন তার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউ। এদিকে কমিটিতে প্রভাব বিস্তার করতে ইতোমধ্যে নতুন নতুন সিন্ডিকেট তৈরী হচ্ছে। এর মধ্যে যুবদল নেতাদের একটি অংশ জেলা ও মহানগর বিএনপির অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন কমিটিতে স্থান পেতে বিএনপির নেতারা এখন যুবদল নেতাদের কাছে তদরিব করছেন, ধরণা ধরছেন।
বরিশাল মহানগর:মহানগর নতুন কমিটিতে মনিরুজ্জামান খান ফারুককে আহ্বায়ক, আলী হায়দার বাবুলকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্যসচিব করা হয়। গত ২২ জানুয়ারি ৪২ সদস্যের পহৃর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে আগের কমিটির ১৭১ সদস্যের গুরুত্বপহৃর্ণ নেতারা কেউ স্থান পাননি। পহৃর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির জন্য কেন্দ্রে নাম জমা দেওয়ার পর আপত্তি তোলেন বিলুপ্ত কমিটির অন্তত ৩১ নেতা। তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তারা বলেন, পূনাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির অর্ধেকের বেশি নেতা রাজপথে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেননি। ত্যাগী ও যোগ্যদের বাদ দিয়ে নিষ্ফিŒয় নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করার বিষয়ে এ অভিযোগ জমা দেওয়া হলেও তাদের আবেদন আমলে নেওয়া হয়নি।
ঘোষিত কমিটিতে মজিবর রহমান সারোয়ারের অনুসারী হিসেবে পরিচিতদেরও বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে গত ১১ মার্চ সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের পূনাঙ্গ কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। দলের একটি অংশকে এভাবে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিল্পু করার প্রত্রিক্রয়ায় বিগত দিনে হামলা-মামলার শিকার ত্যাগী নেতাকর্মীও বাদ পড়েছেন। যা ভালোভাবে নেয়নি তৃণমহৃল নেতাকর্মীরা। এখন বাদ পড়া নেতারা আবার সংগঠিত হচ্ছেন। নিজেদের পাল্লা ভারী করতে নানাবিধ উদ্যোগ নিচ্ছেন। আহ্বায়ক কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতারা এত দিন প্রকাশ্যে পাল্টা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচী দেননি। আড়াই মাস ধরে ঘরোয়াভাবে তাদের অবস্থান জানান দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু নগরের ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর এসব কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যরাও যুক্ত হয়েছেন পদবঞ্চিতদের সঙ্গে। বাদ পড়া নেতাদের আয়োজনে ইফতার ও দোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের জানান দিয়েছেন। এসব নেতাদের সাথে এবার বিভিল্পু অঙ্গ সংগঠনে বাদ পড়া ত্যাগী নেতাকর্মীরাও সংযুক্ত হচ্ছেন।
বরিশালের বিভিন্ন কমিটিতে যুবদল নেতাদের প্রভাব বিস্তার নিয়ে নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে মহানগর কমিটির সভাপতি পদে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে তার শক্ত প্রভাব রয়েছে। তাকে কোনঠাসা করতে দলের দীর্ঘদিন নিন্ক্রিয় থাকা একটি অংশ এককাট্টা হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তারা সফল হন। আর এই অংশের নেতৃÍত্ব ছিলেন একসময়ে তারই অনুসারী হিসেবে পরিচিতরা। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন যুবদলের বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম প্রধান ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি মোনায়েম মুল্পুা। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের দহৃর সম্পর্কে ভাগ্নে এই পরিচয়কে ব্যবহার করে পুরো বরিশালের সকল সাংগঠনিক, রাজনৈতিক কার্যত্রক্রমে প্রভাব বিস্তার করছেন। যদিও তার বাড়ি লক্ষীপুর জেলায়। ছাত্রদল, যুবদলসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠন এমনকি মহৃল দলের কমিটিতেও তিনি হস্তক্ষেপ করছেন। তার সঙ্গে যুবদলের আরেক কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি জাকির হোসেন নাল্পুুও এ লবিং তদবিরে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন। জেলা, উপজেলা এমনকি পৌর বিএনপির পদ প্রত্যাশী নেতারা এখন তাদের কাছে ধরণা দিচ্ছেন বলে নেতাকর্মীরা জানান।
মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, বরিশাল মহানগরে কোনো কোন্দল, বিভক্তির কিছু নেই। বড় দলে মতপার্থক্য থাকতে পারে। দ্র“ত সময়ের মধ্যে ওয়ার্ড কমিটি দেওয়ার কার্যত্রক্রম চলছে। যুবদল নিয়ে বিভ্রাšিø ছড়ানো হচ্ছে।
জাকির হোসেন নাল্পুু বলেন, বিএনপির অঙ্গ সংগঠন হিসেবে দলীয় কর্মসূচীকে ঐক্যবদ্ধভাবে সফল করার চেদ্বা করি। কিন্তু মহল দলের কমিটি নিয়ে খবরদারির তথ্য সঠিক নয়।
বরিশাল উত্তর:বরিশালে বিএনপির তিন সাংগঠনিক কমিটির মধ্যে সবচেয়ে বেশী অচলবস্থা বিরাজ করছে উত্তর জেলা শাখায়। ৫৭ সদস্য আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত তারা নিজেদের মধ্যে পরিচিতি সভাও করতে পারেননি। গঠিত এ কমিটির অনেক নেতা ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা থাকেন। এরাকার সাথে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। কমিটির এক সিনিয়র সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উত্তরের সদস্য সচিব স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকেন। আহ্বায়ক দেওয়ান মো. শহীদুল্লাহ থাকেন বরিশাল নগরে। এছাড়া তিনি বাধ্যর্ক্যজনিত সমস্যায়ও ভুগছেন। যে কারনে আহ্বায়ক কমিটির কার্যত্রক্রমে কোন গতি নেই। ওই সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রমজান মাসে একটি ইফতার পার্টি করার জন্য আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে বারবার বলা হলেও তারা কোন উদ্যেগ নেননি। ইফতার পার্টি করতে পারলে আহ্বায়ক কমিটির নেতারা একসঙ্গে বসতে পারতেন।
উত্তর জেলার আওতাধীন উপজেলাগুলো হলো- গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, হিজলা, মুলাদী ও মেহেন্দিগঞ্জ। এ ৫ উপজেলা এবং সবগুলো পৌর ও ইউনিয়ন কমিটিগুলো মেয়াদোত্তীর্ন হলেও সেগুলো বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যেগ নেই আহ্বায়ক কমিটির।
এ প্রসঙ্গে দেওয়ান মো.শহীদুল্লাহ বলেন, বরিশাল উত্তরের গৌরনদী-আগৈলঝড়া এলাকায় বিএনপির কোনো নেতাই এলাকায় থাকতে পারেন না। কমিটিতে বেশ কিছু নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আমরাও কিছু জানি না। দলকে সংগঠিত করতে কাজ করছি।
বরিশাল দক্ষিণ: দক্ষিণ জেলা শাখা বিএনপির কমিটিতে আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান নান্টু এবং সদস্য সচিব করা হয়েছে আকতার হোসেন মেবুলকে। ৪৭ সদস্যের কমিটিতে দক্ষিণের আওতায় থাকা ৮টি সাংগঠনিক ইউনিটের সভাপতি-সম্পাদক মিলিয়ে মোট ১৬ জনের পদাধিকার বলে আহ্বায়ক কমিটিতে আসার কথা থাকলেও বাদ পড়েছেন কেবল সরোয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল ইসলাম প্রিন্স। অথচ বরিশাল জেলা বিএনপি নেতাদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলার আসামি হওয়া ছাড়াও বহুবার হয়েছেন হামলা নির্যাতন কারাবরণের শিকার। এ কমিটি দৃশ্যমান কয়েকটি কর্মসহৃচি পালন করলেও আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের মধ্যে বৈরী স¤ক্সর্ক দলের মধ্যে এখন ওপেন সিত্রেক্রট বিষয়। এ কমিটিতেও অনেক বিতর্কিত ও নিষ্ফিŒয়দের স্ট’ান দেওয়া হয়েছে বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ রয়েছে। যাদের অনেকেই বিগত ১৫/২০ বছর রাজনীতিতে ছিলেন না।
দক্ষিণ জেলার আওতাধীন সংসদীয় আসন ৩টি হচ্ছে- বরিশাল- ৫ (মহানগর-সদর), বরিশাল- ২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) এবং বরিশাল- ৬ (বাকেরগঞ্জ)। এসব কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ। কিন্তু কবে এসব কমিটি পহৃনগর্ঠন করা হবে তা কেউ জানেন না।
অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান নান্টু বলেন, দল আমাকে সম্মানিত করেছে। সেটার মর্যাদা যে কোনো মহৃল্যে রাখা হবে। কমিটিতে সব সত্রিক্রয়দের স্ট’ান দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *