হেপি বার্থ ডে ”আমি কস্ট পেতে ভালবাসি”

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট ॥ আইয়ুব বাচ্চু চলে যাওয়া বছরও পেড়য়নি। তাকে হারিয়ে এত বিষন্নতা নিকট অতীতে দেখেনি ব্যান্ড সংগীতের সাম্রাজ্য। ফিকে হয়ে গেল এ প্রজন্মের ব্যান্ড সংগীত অনুরাগীদের ছেলেবেলা! চলে গেলেন ‘গিটারের জাদুকর’! এই শোক কতটা কাটিয়ে উঠতে পারবে দেশের ব্যান্ড সংগীতাঙ্গন? আপামর সংগীতপ্রেমীর দল? মাত্র ছাপ্পান্নতেই সব শেষ! সব ছাপিয়ে আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন গিটারের জাদুকরসব ছাপিয়ে আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন গিটারের জাদুকর। তাই তো এখনও তার ভক্তরা গেয়ে বেড়ায়-‘আমি কস্ট পেতে ভালবাসি, তাই তোমার কাছে ছুটে আসি’। ক্যালেন্ডারের পাতায় যদি সেই দিনটি না থাকত, ১৮ অক্টোবর ২০১৮? তাহলে আজ তিনি পূর্ণ করতেন ৫৭, পড়তেন ৫৮তম বছরে। হেপি বার্থ ডে প্রিয় বাচ্চু।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে মাত্র ছাপ্পান্ন বছরের সময় হাতে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। বাবা চেয়েছিলেন ছেলের এমন একটা নাম হবে, যা অন্য কারও নেই। দুটি নাম থেকে আলাদা অংশ নিয়ে রাখা হলো, আইয়ুব বাচ্চু। সেই থেকে তিনি হলেন ‘ওয়ান অ্যান্ড অনলি’।
মা-বাবার আদরের ছেলে। তাই বলে যে সংগীতচর্চার জন্য খুব একটা অনুকূল পরিবেশ তিনি পেয়েছিলেন, তা কিন্তু নয়। সেই ছোটবেলা থেকেই সংসারে থেকেও বোহিমিয়ান আইয়ুব বাচ্চু। বাউন্ডুলে স্বভাবের জন্য সংসারের কিছুই যেন স্পর্শ করতে পারছিল না তাঁকে। বাবার ব্যবসায় মন বসে না, লেখাপড়ায় মন বসে না। অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ ছিল তাঁর।
তবে প্রতিভা, এমনকি তার চেয়েও বড় কোনো শব্দ দিয়ে যদি ব্যাখ্যা করা যায়, তবে আইয়ুব বাচ্চু তা-ই। মাত্র ৬০০ টাকা নিয়ে ১৯৮৩ সালে ঢাকায় এসেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। উঠেছিলেন এলিফ্যান্ট রোডের এক হোটেলে। এরপর বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী তারকা হয়ে উঠলেন প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমে। গিটার হাতে মঞ্চে গাইলে অগুনতি দর্শক কণ্ঠ মেলাতেন তাঁর সঙ্গে। তাঁর গিটারের ঝংকারে বিদ্যুৎ বয়ে যেত তরুণ-তরুণীদের শিরা-উপশিরায়। ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন ‘বস’। কারও কাছে ‘স্যার’।
মূলত রক ঘরানার গান করতেন। শ্রোতাদের কাছে ইংরেজি গান, হার্ড রক, ব্লুজ, অলটারনেটিভ রক নিয়ে গেছেন শুরু থেকে। ব্যান্ড সংগীতের প্রতি তারুণ্যের জোয়ারের ধারা ধরে রেখেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।
শুধু রক বা ব্যান্ডের গানে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। আধুনিক গান, লোকগীতি দিয়েও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। লোকগান নিয়ে একটি অ্যালবাম রিমেক করেছেন তিনি এবং সেখানে শ্রোতাদের প্রচুর সাড়া মিলেছে। খুব অল্প গান করেছিলেন চলচ্চিত্রে। কিন্তু সেই অল্প কটি গানই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
অথচ হাসতে দেখা, গাইতে দেখা আইয়ুব বাচ্চুর এক বুক ভরা বেদনা ছিল। যাঁরা তাঁর খুব কাছের ছিলেন, তাঁরা হয়তো কেউ কেউ জানেন। আর গানে গানে তো তিনি কতবারই বলেছেন, শ্রোতাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন নিজের অপ্রকাশিত বেদনা। তাঁর গানের সুর ও গায়কিতে ছিল অভিমান! ‘…আর কত এভাবে আমাকে কাঁদাবে আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে’ ঠিক যেন নিজের গানের এই কটি লাইনের মতোই ছিল তাঁর জীবন। আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, বন্ধুত্ব ছিল—এমন বেশ কয়েকজন গীতিকার, সুরকারের মতে, আইয়ুব বাচ্চু খুব অভিমানী মানুষ ছিলেন। ভেতরে-ভেতরে অভিমান পুষে রাখতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *