নাগরিক রিপোর্ট:
জাতীয় নির্বাচনের পর সংবর্ধনার মাধ্যমে শক্তির জানান দিলেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম এমপি এবং সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। এসময় তারা অতীতের দাঙ্গা হাঙ্গামা বাদ দিয়ে বরিশালের উন্নয়নে ঐক্যের ডাক দেন। শনিবার বিকেলে নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুককে সংবর্ধনায় এ আহবান জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী মহানগর আ’লীগের শীর্ষ নেতারা ছিলেন না। অবশ্য সংবর্ধনায় নগর আ’লীগকে ট্রাকের সমর্থক চিহিৃত করে ওই কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার দাবী জানানো হয়।
নৌকা মার্কার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কমিটির প্রধান উপদেস্টা সিটি মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত। সংবর্ধনায় দুপুর থেকেই নগরের ৩০টি ওয়ার্ড এবং সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। বিকেল ৪টার মধ্যে শহীদ মিনার প্রাঙ্গন নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষের লোকারন্য হয়ে যায়। এক পর্যায়ে মেয়র খোকন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুককে পুল দিয়ে বরন করে নেন।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক নগর আ’লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বার বার মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বরিশাল নগরের কান্ডারী হিসেবে ঘোষনা দেন। মেয়র খোকনের বক্তব্যের আগ মুহুর্তে আ’লীগ নেতা আফজাল বলেন, প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও মেয়র খোকনের মার্কা ছিল নৌকা। কিন্তু বরিশাল মহানগর আ’লীগ ছিল ট্রাকের সমর্থক। নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় মহানগর আ’লীগ অনতিবিলম্বে ভেঙ্গে দেয়ার দাবী জানান তিনি। এসময় নেতাকর্মীরা সমোস্বরে হাত তালি দিয়ে সমর্থন জানান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মেয়র খোকন বলেন, বরিশালবাসী জাগ্রত হয়েছে। তাই নতুন বরিশাল গড়ার অঙ্গিকার আমাদের। প্রধানমন্ত্রী ৮০০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। আমরা দুইজনে মিলে কাজ করে সুন্দর বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলবো। তিনি আরও বলেন, নগরে আর দাঙ্গা হাঙ্গামা দেখতে চাই না। খাল খনন শুরু হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে রাস্তাঘাটের কাজ শুরু হবে। তিনি নগরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আস্থা রাখুন, উন্নত নগরের সেবা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সংবর্ধিত প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম বলেন, আপনারা জানেন বিগত দিনে বরিশালের উন্নয়ন হয়নি। খোকন সেরনিয়াবাতের দিকে বরিশালের মানুষ তাকিয়ে আছে। আমরা আর পিছিয়ে পড়তে চাই না। ছবি তুলে রাখুন, ২ বছর পরে উন্নয়নের ছোয়ায় বরিশাল পাল্টে যাবে। বরিশাল এক স্বপ্নের নগরী হবে। তিনি বলেন, আমি আহবান জানাবো নির্বাচন শেষ। আসুন বরিশালের উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করি। এখানে বিভাজন রাখা যাবে না। কেউ যেন নিজেকে নেতা মনে না করি। আমরা কেউ দক্ষিনাঞ্চলের সিংহ পুরুষ না।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ভোলার গ্যাস বরিশালে সরবরাহের কার্যক্রম আগামী ৬ মাসে শুরু হবে। গ্যাস সরবরাহ হলে বরিশালে শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠবে। যুবকদের বেকারত্ব লাঘব হবে। সদর উপজেলার লামছড়িতে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক জোন বাস্তবায়িত হলে সেখানে ১০০ থেকে ২০০ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাভোকেট বলরাম পোদ্দার, মেয়র পত্নি লুনা আব্দুল্লাহ, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক আ’লীগ নেতা কে বি এস আহমদ কবির, নগর আ’লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, রেজাউল হক হারুন, শাজাহান হাওলাদার, লস্কর নুরুল হক, নিজামুল ইসলাম নিজাম প্রমূখ।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে বরিশালের প্রয়াত মেয়র হিরনের মৃত্যুর পর একছত্র আধিপত্ত সৃস্টি করেছিল সাবেক মেয়র ও নগর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহ। তার পিতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে অনুসারীরা দক্ষিনাঞ্চলের সিংহ পুরুষ হিসেবে অবহিত করতো। বিগত ৫ বছরে সাদিক ও তার অনুসারীদের নানা অপকর্মে তিনি মেয়র পদে দলের মনোনয়ন হারান। জাতীয় নির্বাচনে সদর আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েও ছিটকে পড়েন। বর্তমানে মেয়র খোকন এবং প্রতিমন্ত্রীর তৎপরতায় কোনঠাসা সাদিক অনুসারীরা।