নাগরিক রিপোর্ট
যোগদানের পরদিনই নানা ইস্যুতে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। তার বিরুদ্ধে গনঅভ্যূত্থানে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের যোগসাজসের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিরোধীদল বানচালের ষড়যন্ত্র করছে’ – এমনটা দাবী করে গত বছরের ২৩ নভেম্বর ৩৫০ বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষক যে বিবৃতি দিয়েছিলেন তাতে ড. শুচিতা শরমিনের নাম ছিল ১০৮ নাম্বারে। এদিকে মঙ্গলবার শেষ বিকেলে ববিতে যোগদানকালে নতুন উপাচার্য ড. শুচিতার চারপাশ ঘিরে ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতাকারী আওয়ামী শিক্ষকরা। গত আগস্টে নানা অভিযোগে পদত্যাগ করা তৎকালীন উপাচায ড. বদরুজ্জামানের মত একই সঙ্গে প্রক্টর, প্রভোস্ট সহ প্রায় ১৯টি গুরুত্বপূন পদ থেকে পদত্যাগ করেন ওই শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, মঙ্গলবার বিকেলে নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের গাড়ি ক্যাম্পাসে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঘিরে রাখেন আওয়ামী লীগ সমথিত শিক্ষকরা। যারা গত ২০ আগস্ট তৎকালীন উপাচাযের সঙ্গে বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থন করা ৩৫ শিক্ষককে হেনস্থা করেছিলেন এই শিক্ষকরাই। উপাচার্য তার কার্যালয়ে প্রবেশের পর থেকে ওই সব শিক্ষকরা তাদের পরিচয় দিতে থাকেন। এসময় কেউ নিজেকে শিক্ষক নেতা, কেউ সাবেক প্রক্টর, কেউ সাবেক প্রভোস্ট হিসেবে পরিচয় দেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ। এ ঘটনার পর ববি শিক্ষাথীদের একাংশ উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যারা বিপক্ষে ছিলেন তাদের বিষয়ে বসে কথা বলবেন এবং তাদের যাতে গুরুত্বপূর্ন পদে বসানো না হয় এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অনুরোধ জানান।
জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি রেজা শরীফ বলেন, আ’লীগের ভুয়া নিবাচনের সমর্থন করছেন নবনিযুক্ত ভিসি। এটা ঘৃনিত কাজ। তিনিবলেন, আলীগের সঙ্গে যোগসাযোস থাকলে ৫ আগস্টের পরে উনি কিরে ভিসি হলেন? সাধারন শিক্ষাথীরা যদি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নামে তাহলে ছত্রদল তাদের পাশে থাকবে। রেজা বলেন, সাধারন শিক্ষাথীরা বলেছেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতাকারী কোন শিক্ষক যেন ববিতে গুরুত্বপূন পদ না পান। ছাত্রদল এর সমর্থন করে। ববিতে ছাত্রশিবিরের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, সাধারন শিক্ষার্থী হিসেবে প্রত্যাশা হচ্ছে ৫ আগস্টের পর সব কিছু প্রশ্নের উর্ধে থাবে। বিতর্ক আসলে তা সাধারন শিক্ষার্থীরা নিশ্চই প্রতিহত করবে।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় সরকার বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান উপাচার্য গণঅভ্যুত্থানের আদর্শকে ধারণ করে বিশ্বিবদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তিনি ববিতে উদার, নিরপেক্ষ ও যৌক্তিক ভূমিকা পালন করবেন। তিনি বলেন, পদত্যাগী উপাচার্যের সাথে যে সমস্ত ব্যক্তিবর্গ স্বৈরাচারী সরকারের তল্পিবাহক ছিলেন, বিশ্বিবদ্যালয়ের বিভিন্ন দায়িত্বে থেকে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ ও সমর্থনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হুমকি দিয়েছেন, হেনস্তা করেছেন তাদের ব্যাপারে বর্তমান উপাচার্য জিরো টরালেন্স নীতি গ্রহণ করবেন বলে আশা রাখি। বিতর্কিত ও শিক্ষার্থী অবান্ধব কোনো ব্যক্তিকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পদে দেখতে চাই না।
এব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, ‘আমি জীবনে কোন বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেনি। অথচ এমন মিথ্যা অভিযোগে আমি বিবৃত। তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত ছিলাম। যোগদানকালে আমাকে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসিভ করেছেন তারা কোন দলের শিক্ষক তা জানা ছিল না। এ বিষয় বুঝতে সময় লাগবে। তিনি বলেন, ছাত্ররা তার কাছে এসে বলেছে যে অনেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিপক্ষে ছিল। আমরা তাদের বিষয়ে আপনার সঙ্গে (ভিসি) পরে কথা বলবো। উপাচার্য বলেছেন, আমি ছাত্রদের সঙ্গে যে কোন সময়ে কথা বলতে প্রস্তুত।