নাগরিক রিপোর্ট ॥ সাগরে ভরা মৌসুমে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। গভীর সাগর থেকে ইলিশ বোঝাই ট্রলারগুলো একের পর এক মোকামে আসছে। প্রায় একমাস যাবত ইলিশে সয়লাব দক্ষিণের ইলিশ মোকামগুলো। মোকামে আমদানী হওয়া ইলিশের অর্ধেকেরও বেশী মাঝারি আকারের। ইলিশের প্রধান আকর্ষন এক কেজি কিম্বা তার চেয়ে বেশী ওজনের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম। দেশের জেলেরা সংখ্যায় বেশী ইলিশ পাওয়ার আশায় ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করে বড় ইলিশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ সুযোগে অন্য দেশের অনুপ্রবেশকারী জেলেরা বড় ফাঁসের জাল ব্যবহার করে বড় ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে এক মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, বার্মা থেকে আসা যে ইলিশ বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করছে সেগুলোর প্রায় সবগুলো এক কেজি কিম্বা তার বেশী ওজনের। এত বড় ইলিশ বিচরনের জলসীমা বার্মায় নেই। তারা বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে বড় ইলিশ ধরে আবার বাংলাদেশেই বিক্রি করছে। একাধিক মৎস্যজীবীও এ কথা স্বীকার করে বলেছেন, সংখ্যায় বেশী ইলিশ পাওয়ার আশায় এদেশের জেলেরা ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করেন।
উপকূলের জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গভীর সাগরে ইলিশ ধরতে তারা সোয়া ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি ব্যাসার্ধ ফাসের জাল ব্যবহার করেন। এ জালে ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ ধরা পড়ে। এক কেজি সাইজের ইলিশ ধরতে হলে ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি ব্যাসার্ধ ফাঁসের জাল সাগরে পাততে হয়। এ জাল জেলেরা ব্যবহার করেন না বলেই চলে।
জানতে চাইলে জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ছোট ফাঁসের জালে বড় ইলিশ ধরা পড়েনা। তিনি বলেন, সাগরে পর্যাপ্ত পরিমান বড় ইলিশের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এ ইলিশ আহরন করতে জেলেদের কমপক্ষে সাড়ে ৪ ইঞ্চি ফাঁসের জাল ব্যবহারে নানাভাবে উদ্বৃত্ব করা হচ্ছে। কিন্ত কোন সারা মিলছেনা। এর কারন সম্পর্কে এ মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ছোঁট ফাসের জালে আকারে ছোট হলেও সংখ্যার দিক দিয়ে অনেক বেশী ইলিশ পাওয়া যায়। জেলেরা সংখ্যাটিই বেশী গুরুত্ব দেন।
ড. বিমল দাস বলেন, দেশের বাজারে বার্মা থেকে আমদানী হওয়া বড় আকারের ইলিশ বিক্রি হয়। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখের উৎসবে। সেগুলো অবশ্যই বাংলাদেশের জলসীমা থেকে ধরেছে বার্মার জেলেরা। বার্মায় এতবড় ইলিশ বিচরনের জলসীমা নেই বলে এ মৎস্য কর্মকর্তা বলেন। এদেশের জেলেরাও সাড়ে ৪ ইঞ্চি ফাঁসের জাল ব্যবহার করলে বড় ইলিশ ধরা পড়বে ব্যাপক হারে।
উপকূলের মৎস্য ব্যবসায়ী বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী। তিনি বলেন, সংখ্যায় বেশী পরিমান ইলিশ পাওয়ার আশায় উপকূলের সব শ্রেণীর জেলেরা ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি ব্যাসার্ধ ফাঁসের জাল ব্যবহার করেন। গোলাম মোস্তফা আরও বলেন, শুধু বার্মা নয়, ভারতের জেলেরা পৌনে এক ইঞ্চি থেকে দেড় ইঞ্চি, তিন থেকে চার ইঞ্চি এবং চার থেকে ৫ ইঞ্চি, এই তিন ধরনের জাল ব্যবহার করে বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে ইলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
এব্যপারে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ পরিচালক ড. ওয়ালিউর রহমান বলেন, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন গভীর সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বিগত বছরের চেয়ে এবার ইলিশের আকার বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে উপকূলের ফিসিং ট্রলারগুলোর গভীর সাগরে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। ফলে তারা বড় ইলিশ ধরার সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার জাটকা রক্ষায় সাড়ে ৪ ইঞ্চির উর্ধ্বে জাল ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা আছে। এ আইনটি শিথিলের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। উপ পরিচালক বলেন, জেলেদের জাল সরবরাহ করেন উপকূলের ধন্যাঢ্য দাদন ব্যবসায়ীরা। ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করে বেশী ইলিশ নিধনে তাদেরও কারসাজি থাকতে পারে।
২০১৯-০৮-৩১