নাগরিক রিপোট ॥ রাত পোহালেই সোমবার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুনসুর আহমেদ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের অনৈক্য’র মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফলে নৌকার পরাজয়ের আশংকা রয়েছে এ উপজেলায়। প্রার্থী মুনসুর আহমেদ অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় সাংসদ পংকজ নাথের নির্দেশে আওয়ামীলীগ নেতারা তার বিরোধীতা এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন করছেন। গত মার্চে অনুষ্ঠিত পাশের উপজেলা হিজলার নির্বাচনেও একইভাবে নৌকাকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বিজয়ী করা হয়।
এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬ জন। অ্যাডভোকেট মুনসুর ছাড়া অপর প্রার্থীরা হলেন– স্বতন্ত্র প্রার্থী আন্ধারমানিক ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বহিস্কৃত সভাপতি মাহফুজ আলম (ঘোড়া), কাজীরহাট থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক মশিউর রহমান পলাশ (আনারস), রফিকুল ইসলাম (দোয়াত–কলম), বিএনপি মনোনীত গোলাম ওয়াহিদ (ধানের শীষ) ও জাতীয় পার্টি মনোনীত হানিফ মিয়া (লাঙ্গল)।
স্থানীয় সুত্রগুলো জানিয়েছে, নৌকার সঙ্গে ভোটের মাঠে আছে আনারস, ধানের শীষ ও লাঙ্গল প্রতীক। আওয়ামীলীগের ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রায় সব নেতাকর্মী বহিস্কৃত নেতা মাহফুজ আলমের ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে কাজ করছেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগে আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কৃত মাহফুজ আলম এবার নিজেই প্রার্থী হয়েছেন।
নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমম্বয়কারী ও মেহেন্দিগঞ্জ পৌর মেয়র আলহাজ্ব কামাল উদ্দিন খান বলেন, নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুনসুর আহমেদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই। মনোনয়পত্র দাখিলের পর বেশীরভাগ সময় এলাকায় আসেননি। আসলেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। নির্বাচনী খরচও দেননা’। কামাল উদ্দিন খান আরও বলেন, ‘কাল ভোট। এজেন্ট দেয়ার খরচ চাইলে তিনি (মুনসুর) উল্টো ভোটে জেতার নিশ্চয়তা চান’।
উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) খোরশেদ আলম ভূলু বলেন, তিনমাস আগে অ্যাডভোকেট মুনসুর নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন ‘আমি তো ভালা না ভালা লইয়া থ্যাইকো’। এখন তিনি আবার প্রার্থী হওয়ায় মাঠের নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে নেই। দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসাবে আমরা নৌকা প্রতীকের জন্য কাজ করলেও প্রার্থী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুনসুর আহম্মেদ বেলা বলেন, ‘আমি ভোটের মাঠেই আছি। উল্লেখিত নেতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা তাদের নেতার নির্দেশে ভোটে আমার বিরোধীতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজের পক্ষে কাজ করছেন। আমি কেন তাদের টাকা দেব?’।
উপজেলার কাজির থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জিল্লুর রহমান মিয়া বলেন, স্থানীয় সাংসদ পংকজ নাথ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ৩ বিদ্রোহী প্রার্থী দাড় করান। তারমধ্যে মাঠে রেখেছেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মাহফুজ আলমকে। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামীলীগ অফিসগুলোও এ প্রার্থীর দখলে। নৌকার এজেন্ট তালিকা দেয়া হলে তাদের হুমকি দেয় হয়।
ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজুল আলম বলেন, তার সুনামের কারনে দলমত নির্বিশেষে সকলে ঘোড়া প্রতীকের সঙ্গে কাজ করছেন। আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের যোগাযোগ নেই। এজেন্টেদের হয়রানী করার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বরিশাল– ৪ (মেহেন্দিগঞ্জ–হিজলা) আসনের আওতাধীন হিজলা উপজেলায় গত মার্চে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী বেলায়েত হোসেন ঢালীর কাছে পরাজিত হন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সুলতান মাহমুদ টিপু। এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৬টি ইউনিয়নে বিদ্রোহীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তার মধ্যে ৫ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীদের পরাজিত করে বিজয়ী হন বিদ্রোহীরা। বিদ্রোহীরা সকলে স্থানীয় পংকজ দেবনাথের অনুসারী বলে স্থানীয় সুত্র জানায়।##