দাম বেড়েছে ওষুধের, বিপাকে সাধারন মানুষ

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক ॥ আবারও বেড়েছে রোগীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম। ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার (উচ্চ রক্তচাপ), গ্যাস্ট্রিক, কোলেস্টেরলসহ প্রায় ৫০ ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন মাসে। যারা প্রতিনিয়ত এসব ওষুধ সেবন করেন, তারা পড়েছেন বিপাকে। ওষুধ প্রস্তুতকারকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়া এবং চীনের কাঁচামাল তৈরির কারখানা বন্ধ হওয়ার কারণে ওষুধের দাম বেড়েছে।
রাজধানীর মিটফোর্ড, শাহবাগ, চাঁনখারপুল গ্রিনরোড এলাকার ওষুধ মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, স্কয়ার, বেক্সিমকো, রেনাটা, অপসোনিনসহ বেশ কিছু ওষুধ কোম্পানির প্রায় ৫০ ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে। এগুলো প্রতি টেবলেটে বেড়েছে এক টাকা ৫ টাকা পর্যন্ত। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ রুপট্রেল ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা, মোটিগার্ট ২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩ টাকা, ওলমিসন (২০ মি.গ্রা.) ৮ থেকে ১০ টাকা, এবিক্যাপ (৫/২০ মি.গ্রা.) ১০ থেকে ১১ টাকা, এবিটিস (২০ মি.গ্রা.) ৮ থেকে ৯ টাকা, ডুপরেস (৫/২০ মি.গ্রা.) ১০ থেকে ১২ টাকা, ডোকোপা (২০০ মি.গ্রা.) ৫ থেকে ৬ টাকা, নেসো (৫০০ মি.গ্রা.) ১০ থেকে ১৩ টাকা, নিপরক্স (৫০০ মি.গ্রা.) ১০ থেকে ১৩ টাকা, এক্সনিয়ল (৫০০ মি.গ্রা.) ১০ থেকে ১৩ টাকা, ফ্লেক্সি (১০০ মি.গ্রা.) ৪ থেকে ৫ টাকা, টোরেক্স (১০ মি.গ্রা.) ১০ থেকে ১২ টাকা, হাইপেন এসআর ৫ থেকে ৬ টাকা, ডক্সোরিন (২০০ মি.গ্রা.) ৪ থেকে ৬ টাকা, বাইজোরান (৫/২০) ৮ থেকে ১২ টাকা, বাইজোরান (৫/৪০) ১৫ থেকে ২০ টাকা, অ্যালজিন ৬ থেকে ৮ টাকা, প্লাগরিন (৭৫) ১০ থেকে ১২ টাকা, মোনাস ১৫ থেকে ১৬ টাকা, প্যারিসেল (২০ মি.গ্রা.) ৫ থেকে ৬ টাকা, এসিফিক্স ৫ থেকে ৭ টাকা, ওমিডন ২ থেকে ৩ টাকা, ম্যাক্সপ্রো (২০ মি.গ্রা.) ৫ থেকে ৭ টাকা, সেকলো ৫ থেকে ৬ টাকা।
ফার্মেসির খুচরা ওষুধ বিক্রেতারা জানান, ওষুধ কোম্পানিগুলো ওষুধের দাম বাড়ালে কখনোই জানায় না যে, ওষুধের দাম বাড়ছে। এতে অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় ওষুধ বেশি দামে কেনা হচ্ছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে আগের দামে। এতে ক্ষতি হয় খুচরা বিক্রেতাদের। এবারও তাই হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল মেডিসিন মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি মো. লৎফুর রহমান ওষুধের দাম বাড়ার বিষয়ে বলেন, ওষুধের দাম বাড়ানোর আগে কারণ ব্যাখ্যা করে এক বিজ্ঞপ্তি দেওয়া উচিত। দাম বাড়ার পর ৫০ টাকার এক পাতা ওষুধ যদি ৬০ টাকা বা ৮০ টাকার এক পাতা ওষুধ ১২০ টাকা চাওয়া হয় তখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়। যদি আগেই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, তবে এ ভুল বোঝাবুঝি হবে না।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে সর্বমোট ২৬৯ অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ২৪ হাজার রকমের ওষুধ তৈরি করে। আর সরকারিভাবে উৎপাদিত হয় ১১৭ ধরনের ওষুধ, যার দাম নির্ধারণ করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। বেসরকারি কোম্পানিগুলো নিজেদের চাহিদামতো ওষুধের দাম বৃদ্ধির অনুমতি নিয়ে রাখে। সুবিধামতো সময়ে তারা বাজারে বাড়তি দামে ওষুধ ছাড়ে। হঠাৎ করে ওষুধের দাম বৃদ্ধিকে স্বাভাবিক বলে দাবি করছে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি। বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সূত্র জানায়, কোনো কোম্পানিই দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্টের মতামত নেয় না। এটা আইনে নেই। ওষুধের দাম বাড়ার প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব মো. শফিউজ্জামান বলেন, চীনে প্রায় দুই হাজার কাঁচামাল তৈরির কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। এজন্য ওষুধের দাম বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ওষুধের মূল্য নির্ধারণে সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা না থাকায়ও ওষুধের দাম বাড়ে। ১৯৯৪-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় বলা হয়, অত্যাবশ্যকীয় তালিকাবহির্ভূত ওষুধের দাম নিজ নিজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করবে। ২৪ বছর আগের সেই নির্দেশনাবলে ইচ্ছামতো দাম বাড়ায় কোম্পানিগুলো। অথচ ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশে যে কোনো ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের ছিল।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান ওষুধের দাম বাড়ার বিষয়ে বলেন, আমাদের দেশে কয়েক হাজার ওষুধ তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারের ১৯৯৪ সালে নীতিমালা অনুযায়ী ১১৭ ওষুধের দাম আমরা নির্ধারণ করে থাকি। বাকি ওষুধগুলোর মূল্য আমরা নির্ধারণ করতে পারি না। ওই ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করে কোম্পানিগুলো। তিনি বলেন, ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি করতে হলে ভ্যাটের জন্য ওষুধ প্রশাসনের একটি ছাড়পত্র লাগে। এ কারণে আমাদের কাছে আসে। জনগণের বিষয়ে চিন্তা করে আমাদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, কেন ওষুধের দাম বাড়ানো হচ্ছে। অনেক সময় ওষুধ কোম্পানিগুলো বলে, উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কাঁচামালের দাম বেড়েছে ইত্যাদি। এরপর আমরা কোম্পানির সঙ্গে দরকষাকষি করি যে, কতটুকু কম রাখা যায়। এক পর্যায়ে সমঝোতায় এসে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে আমরা দেরি করতে পারি, কিন্তু ছাড়পত্র দিতে হয়। মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, ছয়টি ওষুধের দাম বেড়েছে এবং ৪৯ ওষুধের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এটি হচ্ছেÑ কোনো ওষুধ একটি কোম্পানির দাম ১০ টাকা। কিন্তু অন্য কোম্পানির দাম আছে ৫ টাকা। সেটিই বাড়িয়ে ৬ বা ৭ টাকা করা হয়েছে। বেশকিছু ওষুধের দাম কমানোও হয়েছে। এদিকে ১১৭ ওষুধের জায়গায় ২৫০ বা ৩৫০টির দাম নির্ধারণ করা যায় কি না এ বিষয়টা নিয়ে আমরা কাজ করছি। (সুত্র: আলোকিত বাংলাদেশ)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *