তাপস-আতিকুলকে যে কারনে আ’লীগ বেছে নিল

Spread the love

নাগরিক ডেক্স : আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন উত্তরে আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণে শেখ ফজলে নূর তাপস।

আতিকুল ইসলাম বর্তমানে উত্তরে মেয়র পদে রয়েছেন। তাপস সংসদ সদস্য। তবে মনোনয়নের পর পদ ছেড়েছেন তিনি।

মেয়র পদের জন্য কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তাদের বেছে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে কেন তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তা জানান ওবায়দুল কাদের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগণের কাছে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তাকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। কোন প্রার্থী নির্বাচনে জেতার উপযোগী, সেটি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মনোনয়ন বোর্ডে যারা ছিলেন, তারা প্রার্থীর জনপ্রিয়তার বিষয়টি দেখেছেন। প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতার দিক বিবেচনায় নিয়েছেন। মনোনয়ন বোর্ডের সবার সম্মতিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছেন।

শেখ ফজলে নূর তাপস পেশায় একজন আইনজীবী। তিনি ১৯৯৭ সালে ইংল্যান্ড থেকে বার এট ল ডিগ্রি লাভ করে বাংলাদেশে আইন পেশায় প্রবেশ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। ২০০৭ সালে তৎকালীন সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার তাপস এবং সবগুলো মামলায় বিজয় লাভ করেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ নামে দুটি সংগঠনে দীর্ঘদিন যাবৎ বিভক্ত থাকার পরে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে শেখ ফজলে নূর তাপসের নেতৃত্বে এক হয়। আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনের নাম বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ এবং শেখ তাপস এর সদস্য সচিব। তাপস ২০০৮ সালে প্রথমবারের মত সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরপর তিনবার ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, হাজারীবাগ এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নির্বাচনি এলাকা ঢাকা-১০।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির চিত্র এতটা সরল ছিল না। দক্ষিণে মেয়র পদের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ চৌধুরী হিরু ও ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি সেলিম।

রাজনৈতিক সচেতনদের ধারণা ছিল, দলের হাই কমান্ডের সংকেত পেয়েই ব্যারিস্টার তাপস ফরম তুলেছেন। মাত্রই কিছুদিন আগে তার বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশকে অনেকটা ডেকে এনেই যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ মনির এই দুই পুত্র ‘ক্লিন ইমেজ’ ধরে রাখতে পেরেছেন। হুট করে কোনও ধরনের ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ব্যারিস্টার তাপস মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন না। ফলে তাপসই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন।

রোববার (২৯ ডিসেম্বর) শেখ ফজলে নূর তাপস প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ঢাকা-১০ আসনের জন্য কাজ করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করেছি আমাদের প্রধানমন্ত্রী উন্নত বাংলাদেশ গড়তে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে একটি উন্নত রাজধানী প্রয়োজন। আমি সেই সুযোগটি গ্রহণ করতে চাই।

তিনি বলেন, বৃহত্তর পরিসরে ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে পুরান ঢাকাকে নতুনভাবে গড়ে তুলব। পুরান ঢাকার অবহেলিত মানুষদের সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে উন্নত শহর গড়ে তুলব। নির্বাচিত হলে পুরান ঢাকার উন্নয়নে ৩০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করব। দক্ষিণ সিটিকে অপরূপ রূপে প্রস্ফুটিত করে তুলতে কাজ করব। ২০৪১ সাল সামনে রেখে একটি উন্নত রাজধানী উপহার দিতে চাই।

তার আশা, এলাকার জনগণ আমার ওপর যেভাবে আস্থা রেখেছেন, ভালোবেসেছেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন সকল জনগণও যেন আমার ওপর আস্থা রাখেন।

ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনও দলীয় মনোনয়ন পেতে ফরম তুলেছিলেন। সেদিন তাকে বেশ বিপর্যস্ত দেখাচ্ছিল। সাবেক মেয়র হানিফের পুত্র খোকন গণমাধ্যমের সামনে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। সরাসরিই বলেন, ‘‘কঠিন সময় পার করছি। সবাই দোয়া করবেন। আল্লাহকে হাজির নাজির রেখে বলছি, আমি দায়িত্বে কোনও অবহেলা করিনি।’’

সরকার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে তার ব্যাকফুটে থাকাটা সেদিনই স্পষ্ট হয়ে যায়।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন সাঈদ খোকন। তার বাবা মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটির প্রথম নির্বাচিত মেয়র।

২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচনে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম এবং ৭ মার্চ মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

এর আগে তিনি ২০১৩-১৪ মেয়াদে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন সেটি আগে থেকে অনেকটাই অনুমিত ছিল। কারণ সাবেক মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর তিনি এক বছরেরও কম সময় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ছাড়া বড় ধরনের বিতর্কে পড়েননি তিনি। ফের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন আতিকুল।

এক প্রতিক্রিয়া আতিকুল ইসলাম বলেন, অল্প কিছু দিন দায়িত্ব পালন সুযোগ পেয়েছি। এই অল্প সময়ে নগরবাসীর প্রত্যাশা ভালোভাবে পূরণ করা যায়নি। দ্বিতীয়বার সুযোগ পেলে নগরবাসীকে উন্নত সেবা দেয়া চেষ্টা করবো।

তিনি বলেন, বিগত দিনগুলোর ভুল-ত্রুটি কাটিয়ে আধুনিক নগরীর গড়ে তুলে আরও মনোযোগী যদি জনগণের ভোট পেয়ে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হই।

আগামী ৩০ জানুয়ারি দুই সিটিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *