ঢালিউডে নাম বদলানো তারকার অভাব নেই। রূপালী জগতে এসে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নিজের নামও বদলে ফেলেছেন তারা। মূলত আধুনিক রুচিসম্মত একটি নামে পরিচিত হওয়ার লক্ষ্যেই তাদের এ বদলে যাওয়া। ছদ্মনামের আড়ালে দর্শকের কাছে হারিয়েছেন নিজেদের আসল নামটি। তারকাদের বদলে যাওয়া নামের ইতিবৃত্ত নিয়ে এ আয়োজন-
রত্না থেকে শাবানা
বাংলা সিনেমায় দীর্ঘকাল শীর্ষস্থান দখলে রেখেছিলেন চিত্রনায়িকা শাবানা। হয়ে উঠেন নন্দিতনায়িকা। চিত্রপুরীতে এ অভিনেত্রী শাবানা নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম কিন্তু শাবানা নয়। তার আসল নাম হচ্ছে আফরোজা সুলতানা রত্না।
১৯৬২ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে
অভিষেক ঘটে তার। সেসময় ছবিতে তার নাম রত্না থাকলেও পরে ১৯৬৬ সালে ‘চকুরী’
নামে একটি উর্দু সিনেমায় তার নাম হয়ে যায় ‘শাবানা’। এরপর থেকে আজ অবধি
শাবানা নামেই দর্শকমহলে নন্দিত এ নায়িকা।
মাসুদ পারভেজ থেকে সোহেল রানা
সোহেল
রানার আসল নাম মাসুদ পারভেজ। কিন্তু নায়ক হিসেবে তার নাম হয়ে যায় সোহেল
রানা। ১৯৭৩ সালে কাজী আনোয়ার হোসেনের ছবিতে মাসুদ রানা চরিত্রে অভিনয় করেন।
তখনই তার নামকরণ করা হয় সোহেল রানা হিসেবে। অবশ্য প্রযোজক হিসেবে এখনও তার
নাম মাসুদ পারভেজই ব্যবহৃত হয়।
মিনা পাল থেকে কবরী
ঢাকায়াই ছবির স্বর্ণ যুগের নায়িকা কবরী। বলা যায় ষাটের দশকের বাংলাদেশের শীর্ষ নায়িকা ছিলেন তিনি। সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ ছবির মাধ্যমে ১৯৬৪ সালে পর্দায় অভিষেক ঘটে এ নায়িকার। পর্দায় তার নাম কবরী হলেও পর্দার বাইরে বাস্তব জীবনে তার নাম ছিল মিনা পাল। পরে কবরীর আড়ালে তার মিনা পাল নামটি হারিয়ে ‘কবরী’ই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
ইদ্রিস আলী থেকে ইলিয়াস কাঞ্চন
আশির
দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। নাম বদলানোর তারকাদের দলে তিনিও
অন্যতম। জনপ্রিয় এ অভিনেতার আসল নাম ছিল ইদ্রিস আলী। ১৯৭৭ সালে এ ইদ্রিস
আলী সিনেমায় নাম লিখিয়ে হয়ে যান ইলিয়াস কাঞ্চন।
ঝর্ণা বসাক থেকে শবনম
বাস্তব
জীবনে ঝর্ণা বসাক নামেই পরিচিত ছিলেন ষাটের দশকের প্রখ্যাত নায়িকা শবনমের।
কিন্তু সিনেমার রূপালী জগতে এসে ঝর্ণা বসাক থেকে তিনি নাম বদলে হয়ে যান
শবনম।
পপি থেকে ববিতা
পুরো
নাম ফরিদা আখতার পপি হলেও পর্দার বাইরে তাকে সবাই পপি নামেই ডাকত। কিন্তু
জহির রায়হানের ‘জ্বলতে সুরুজ কি নিচে’ ছবিতে অভিনয় করতে এসেই আসল নাম বদলে
ববিতা বনে যান এ অভিনেত্রী। পরে ভক্তদের কাছে ববিতা নামেই পরিচিত হন তিনি।
রেনু থেকে রোজিনা
নাম
বদলে যাওয়া তারকাদের দলে বাংলা ছবির অন্যতম জনপ্রিয় নায়িক রোজিনাও রয়েছেন।
সিনেমায় আসার আগে এ অভিনেত্রীর আসল নাম ছিল রওশন আরা রেনু। তবে সিনেমা
অঙ্গনে রোজিনা নামে পরিচিত হন তিনি।
ডালিয়া থেকে দোয়েল
১৯৮৪ সালে ‘চন্দ্রনাথ’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন দোয়েল। তার আসল নাম হল ইফতে আরা ডালিয়া।
রত্না থেকে নূতন
বাংলা
সিনেমার এক সময়ে দাপুটে অভিনেত্রী ছিলেন চিত্রনায়িকা নূতন। ১৯৭০ সালের
গোলাম মুস্তফা মেহমুদ পরিচালিত ‘প্রভাত’ সিনেমার মাধ্যমে পর্দায় অভিষেক হয়
তার। মিডিয়ার সবাই তাকে নূতন নামে চিনলেও তার আসল নাম কিন্তু এটি নয়। মূলত
ফারহানা আমির রত্না থেকেই নূতন নামে পরিচিত হন এ অভিনেত্রী।
মাসুম পারভেজ থেকে রুবেল
ঢালিউডের
অ্যাকশন হিরো হিসেবে পরিচিত রুবেলের আসল নাম মাসুম পারভেজ। সিনেমায় এসে বড়
ভাই সোহেল রানার সঙ্গে মিল রেখে তিনিও নাম বদলে ফেলেন। রুবেল নামেই সিনেমা
জগতে পরিচিত এ অ্যাকশন হিরো।
আসলাম থেকে মান্না
প্রয়াত
নায়ক মান্নার আসল নাম এসএম আসলাম তালুকদার। ১৯৮৪ সালে সিনেমায় আসেন তিনি।
এরপরই তার নাম হয় মান্না। ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হার্ট অ্যাটাকে
আক্রান্ত হয়ে মারা যান এ নায়ক।
আরিফা আখতার জামান থেকে মৌসুমী
ঢালিউড
সিনেমায় মৌসুমী নামের নায়িকাকে সবাই এক নামে চিনলেও আরিফা আখতার জামান
নামের নায়িকাকে হয়তো চিনবে না কেউ। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে
রূপালী পর্দায় এসেই নাম বদলে আরিফা আখতার জামান থেকে মৌসুমী হয়ে যান এ
নায়িকা। ফলে তার মৌসুমী নামের আড়ালে ঢাকা পড়ে আগের নামটি।
ইমন থেকে সালমান শাহ
বাংলা চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন সালমান শাহ। চলচ্চিত্রে পা রাখার আগে তার আসল নাম ছিল শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে সালমান শাহ নাম ধারণ করে চলচ্চিত্র অঙ্গনে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছিলেন এ প্রতিভাবান অভিনেতা। অতঃপর ১৯৯৬ সালে রহস্যময় মৃত্যু হয় তার।
নূপুর থেকে শাবনূর
নির্মাতা
এহতেশাম পরিচালতি ‘চাঁদনী রাতে’ ছবির মাধ্যমে ১৯৯৩ সালে পর্দায় আসেন
চিত্রনায়িকা শাবনূর। বাস্তব জীবনে তার নাম কাজী শারমিন নাহার নূপুর হলেও
পর্দায় আসার পর পরিচালক এহতেশাম তার নাম নূপুর পরিবর্তন করে শাবনূর রাখেন।
পরে শাবনূরের তুমুল পরিচিতির কারণে হারিয়ে যায় জনপ্রিয় এ নায়িকার আসল
নামটি।
রীতা থেকে পূর্ণিমা
নাম
বদলানো অভিনেত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয় নায়িকা পূর্ণিমাও রয়েছেন। শোবিজে আসার
আগে পূর্ণিমার আসল নাম ছিল দিলারা হানিফ রীতা। কিন্তু সিনেমায় এসেই নাম
বদলে হয়ে যান পূর্ণিমা। পরিচালক মতিউর রহমান পানু তার নাম বদলে পূর্ণিমা
রেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
রিয়াজুদ্দিন থেকে রিয়াজ
অভিনেতা
রিয়াজের পর্দার বাইরের নাম হচ্ছে রিয়াজুদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক। কিন্তু
পর্দায় এ নামটি আংশিক পরিবর্তিত হয়ে রিয়াজ নামেই পরিচিত হন এ শিল্পী। ১৯৯৫
সালে রিয়াজ নাম ধারণ করেই চলচ্চিত্র অঙ্গনে যাত্রা শুরু করেন এ অভিনেতা।
মাসুদ রানা থেকে শাকিব খান
শাকিব খানের পর্দার বাইরের নাম মাসুদ রানা। নির্মাতাসোহানুর রহমান সোহানের ‘অনন্ত ভালোবাসা’ সিনেমার মাধ্যমে শাকিব খান নাম ধারণ করে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন এ নায়ক। ফলে শাকিব খান নামটি পরিচিত পাওয়ায় হারিয়ে যায় মাসুদ রানা নামটি।
নিপা থেকে মাহিয়া মাহি
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির আসল নাম ছিল শারমিন আক্তার নিপা। কিন্তু ‘ভালোবাসার রঙ’ ছবির মাধ্যমে সিনেমায় আসা এ নায়িকা মাহিয়া মাহি নামেই চিত্রাঙ্গনে পরিচিতি পান।
সুত্র- দৈনিক সমকাল