করোনার চেয়ে শক্তিশালী ক্ষুধা

Spread the love

সৈয়দ জুয়েল: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে পত্রিকার শিরোনামে বড় একটা অংশ জুড়ে নিরাপদে ঘরে থাকার পরামর্শে বেশ সরব খবর পাড়া। শিক্ষিত সমাজ থেকে স্বরলিপি শেখার লোকজনের উপদেশ বানীও চায়ের কাপের টুং টাং আওয়াজে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অলি গলিতে। কিছু গার্মেন্টস খোলা ছিল, তা নিয়েও কম কথা হয়নি। আবার এখন দলবেঁধে ঢাকার উদ্দেশ্যে কেন চলছে মানুষ,তা নিয়েও আলোচনা, সমালোচনা কম নয়।
ছুটে চলা মানুষদের দ্বারা করোনার সংক্রমন বেড়ে যাবে, এ কঠিন সঠিক যুক্তির পক্ষে আমাদের সবারই সহবস্থান। কিন্তু বিকল্প কোন পথ কি আদৌ আছে এ সব শ্রমজীবি মানুষদের? মধ্যবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্তরাও এখন চলে এসেছেন দরিদ্রদের কাঁতারে। লকডাউনের পূর্বে জমাকৃত অর্থ শেষ হয়ে ঋনের বোঝা এখন অনেকেরই কাঁধে। করোনা মোকাবেলার চেয়ে পেটের ক্ষুধাকে জয় করাই এখন মূখ্য হয়ে ভীড় জমায় বিবেকের দরজায়।
করোনায় পরাজিতের চেয়ে জীবন যুদ্ধের পরাজয় বড়ই লজ্জার। বৃদ্ধ বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তানদের মুখে অন্ন তুলে না দেয়ার বেদনা ইট সুরকীর ভিতরে বাস করা পাথুরে মানুষরা বুঝবেনা। ১৬-১৭ কোটি মানুষের ভীড়ে এখনও ২০% মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বাস করেন। আমরা এখনও যুদ্ধ করছি নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে যেতে। ঠিক এ সময়ে করোনা মহামারি আমাদের দারিদ্র বিমোচনে বড় এক বাঁধা হয়ে হাজির। আমাদের সাধ থাকলেও সীমাবদ্ধতা প্রকট,তাই শুধু সরকারের একার পক্ষে প্রতিটি পরিবারকে সহায়তা সম্ভব নয়।
পৃথিবীর অনেক শক্তিশালী রাস্ট্রও তাদের অসহায়ত্বের জানান দিয়েছেন বিভিন্ন ভাবে। শুকান্ত বলেছিলেন- ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্নিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। পেটের তাগীদে বের হওয়া ক্ষুধার্ত এ মানুষগুলো খুশীতে ঘর ছাড়েননি। পরিবারের মুখে হাসি ফোঁটাতে করোনায় যদি মৃত্যুও হয়, তবে তা বীরের মৃত্যু।
ইউরোপ, আমেরিকায় বসবাসরত অনেক বাঙ্গালীরাই নীতি কথা বলেন-দেশের মানুষ আইন ভঙ্গ করে ঘরের বাহির হন, অফিস করেন, রিক্সা চালান ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা যারা এসব উন্নত রাস্ট্রে থাকি,সরকারী সহায়তা থেকে যদি বঞ্চিত হতাম,তাহলে এ নীতি আদর্শকে পাশ কাটিয়ে, আইনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে কাজে ঝাপিয়ে পরতাম করোনাকে পদদলিত করে। যে দেশের রপ্তানী আয়ের ৮২% এর বেশী আসে পোশাক শিল্প থেকে,সেই দেশের শ্রমিকরা যদি কাজে জোগ না দেয়,তাহলে তার পরিবারও বাঁচবেনা,দেশও বাঁচবেনা। করোনার থাবার চেয়ে ভয়ংকর ক্ষুধার থাবা।
যে শ্রমিকটি কাজের ফাঁকে টিফিন ক্যারিয়ারের বাটিতে দু টুকরো আলু আর একটু ডাল দিয়ে খাবার শেষ করেন- ক্ষুধার জ্বালা মিটানোর স্বাধ আর কে বুঝে! আমরা যারা এখনো বেঁচে আছি,ভয়ে বেঁচে আছি। স্বাভাবিক জীবনের সবুজ সকাল আবার কখন আমাদের আসবে, আমরা কেউ-ই জানিনা। আমরা জানিনা আমাদের মৃৃত্যু কখন, কোথায়, কিভাবে হবে। মৃত্যুর পরে চার কোনের মাটির ঘরটিও আমি যে পাব,তা-ও অনিশ্চিত। এতই যখন অনিশ্চিতের খেলা,কেন এত ভয়! করোনায় না হয় একটু আগেই চলে গেলাম, ক্ষতি কি? না হয় একটু মানবিক হয়েই মৃত্যুকে কাছে টেনে নিলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *