একটি দূতাবাস ও আমাদের ভাবনা

Spread the love

সৈয়দ জুয়েল: ৭০ এর শেষের দিকে আয়ারল্যান্ডে দু একজন করে বাংলাদেশীদের আসা শুরু। ধীরে ধীরে বেড়ে তা এখন দশ হাজারেরও বেশী। নতুন পাসপোর্ট, পাসপোর্ট নবায়ন সহ অন্যান্য কাজগুলো করতে ঝক্কি ঝামেলা কম পোহাতে হয়নি এখানে বসবাসরত বাংলাদেশীদের। দশ বছর আগেও বছরে মাত্র একবার বাংলাদেশ দূতাবাস লন্ডন থেকে আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশী পাসপোর্ট সার্জারির কাজে আসতো।
২০১০ এর দিকে বাংলাদেশ দূতাবাসের হাইকমিশনার সাইদুর রহমানের কাছে তৎকালীন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন আয়ারল্যান্ডের পক্ষে সাধারন সম্পাদক সৈয়দ মুস্তাফিজুর রহমান বছরে দু বার পাসপোর্ট সার্জারী করা যায় কি- না বিষয়টি তুলে ধরেন। সাথে আয়ারল্যান্ডে একটি কনস্যুলেট অফিস খোলার বিষয়ে একটি লিখিত আবেদনও তার কাছে জমা দেন। এর আগেও ঘরোয়া অথবা আনুষ্ঠানিক ভাবেও কনস্যুলেট অফিস নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। দূতাবাস নিয়েও এক সময়ের বিএনপির পররাস্ট্র মন্ত্রী মোর্শেদ খাঁন বরাবরেও আবেদন জমা দেয়া হয়েছিলো, কিন্তু আয়ারল্যান্ডে দূতাবাস স্থাপনে তৎকালীন সরকারের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে লাল ফিতায় বন্দী হয়ে পরে সে আবেদন।
বর্তমান আওয়ামিলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে আয়ারল্যান্ড আওয়ামিলীগের অনেক ত্যাগী নেতা কর্মীরা বিভিন্ন পন্থায় সরকারের গুরত্বপূর্ণ ব্যাক্তি বর্গের সাথে জোগাজোগ করে দূতাবাস স্থাপনের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। গত বছর ইউরোপীয়ান আওয়ামিলীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম আয়ারল্যান্ডে কর্মী সমাবেশে জোগ দিতে আসলে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে দূতাবাস স্থাপনের আবেদন পত্রটি জমা দিলে তিনি আশ্বাস দেন যত দ্রæত সম্ভব তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌছে অনুরোধ জানাবেন বিষয়টি গুরত্বের সাথে বিবেচনা করতে। আবার পূর্বে আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত প্রফেসর ডাঃ হাবিবে মিল্লাত (এম,পি, বর্তমান) যিনি আয়ারল্যান্ডে থাকাকালীনও খুব কাছ থেকে অনুভব করেছেন আয়ারল্যান্ডে দূতাবাস স্থাপন কতটা জরুরী।
দূতাবাস স্থাপনের বাংলাদেশ সরকারের যে ঘোষনা এসেছে, তাতে তার ভূমিকাও যথেস্ট গুরত্বপূর্ণ। তবে বর্তমান লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার সৈয়দা মুনা তাসনিমের অবদানও মনে রাখবে বাংলাদেশীরা। অতীতের দূতাবাস প্রধানরা বিষয়টি ততটা গুরত্বের সাথে না নিলেও সৈয়দা মুনা তাসনিম গত বছর আয়ারল্যান্ডে এসে বেশ গুরত্ব দিয়ে আস্বস্ত করেছিলেন- সরকারের কাছে আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস স্থাপনের বিষয়ে জোরালো আবেদন করবেন। বাংলাদেশ সরকারের দূতাবাস স্থাপনের বিষয় তারও সহযোগিতার হাত ছিল বলে ধারনা করেন এখানের অনেক বাংলাদেশীরা।
বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডঃ আব্দুল মোমেন, জাতীয় সংসদের পররাস্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি কর্নেল (অবঃ) ফারুক খাঁনের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। তাদের প্রত্যেকেরই অবদানের ফসল এই দূতাবাস স্থাপনের ঘোষনা। তবে যার আগ্রহে দূতাবাস স্থাপনে পূর্নতা পেতে যাচ্ছে,তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রবাসীদের প্রানের এ দাবীর প্রতি সন্মান জানােেনায় কৃতজ্ঞচিত্তে তাকে এগিয়ে রাখবেন সবার আগে। আন্তর্জাতিক আইনে কোন দেশে দূতাবাস স্থাপন করার অনুমোদন চাইতে হলে দশ হাজার অভিবাসী থাকতে হবে।
এদিক থেকে সুবিধা জনক অবস্থায় বাংলাদেশ। কুটনৈতিক পর্যায়ে যখন আলোচনা শুরু হবে, এ বিষয়টি সামনে নিয়ে আইরিশ সরকারের সন্মতি পেতে অনেকটা সহজ হবে বলে মনে করেন সংশ্লিস্টরা। তবে কুটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনা একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে কাজ করবে দূতাবাস স্থাপনে। একজন ব্যাক্তি প্রচেস্টায় কখনো একটি দেশে দূতাবাস স্থাপন সম্ভব নয়, দরকার সন্মিলিত প্রচেস্টার। যে দশ হাজার বাংলাদেশী এখানে আছেন, তাদের জন্যই দূতাবাস। আন্তর্জাতিক আইনে দশ হাজার বাঙ্গালী যেহেতু এখানে আছেন, তাই প্রতিটি বাঙ্গালীই এই দূতাবাসের মালিক।
দূতাবাস স্থাপনের বিষয়ে অতীতে যারা চেস্টা করেছেন,আর এখনও যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, তারা সবাই এ সফলতার গল্পের নায়ক। অতীতের যারা চেস্টা করেছেন, তারা হয়তো সফল হতে পারেননি,তবে আন্তরিকতার কমতি ছিলনা তাদের। আমরা আমাদের সবার প্রচেস্টাকেই সন্মান জানাবো। এতে করেই বিদেশের মাটিতে আমরা এগিয়ে যাব আমাদের সংস্কৃতিকে লালন করে।
দলীয় ভিন্নতা থাকলেও দিনশেষে আমরা একে অপরের রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও তারচেয়ে কম নয়। দেশে যারা আপনজন আছেন, আমাদের মৃত্যুর পরে তাদেরকে কাছে না পেলেও প্রবাসের ভাইয়েরাই জানাজা থেকে শুরু করে খাঁটিয়া বহন করে শেষ প্রস্থানে শরীক হন অশ্রæভরা নয়নে, রক্তের সম্পর্কের চেয়ে কম কি-সে! কবরে নামানো থেকে শেষ এক মুঠো মাটি দিয়ে জানান দেয়- আমরাই তোমার কাছের মানুষ।
আসুন সব বৈষম্য ভূলে ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হই। রাজনৈতিক দলগুলো হয়তো হাজার বছর বেঁচে থাকবে, কিন্তু আমরা হাজার বছর বাঁচবোনা। আপনার মৃত্যু হলে আপনার জায়গায় অন্য কেউ আসবে দ্রæত। রাজনৈতিক কারনে শত্রæতা না বাড়িয়ে এক হয়ে নতুন এক পৃথিবী তৈরী করি, যেখানে ভালবাসা আর সন্মান হাত ধরাধরি করে চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *