বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন: মুখোমুখী আ’লীগ-প্রশাসন, সংস্কৃতিজনরা চুপ

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী ‘সরকারি বরিশাল কলেজ’ এর নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবনে এ কলেজটি স্থাপিত। তার স্মরনে কলেজের নাম সংশোধন করে ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত’ যুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। শিক্ষামন্ত্রনালয় এ বিষয়ে কাজও শুরু করেছে। তবে নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি পক্ষ। এই পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছে আ’লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। তবে এই নাম পরিবর্তনের নেপথ্যে যেসব সুধীজন ও সাংস্কৃতিক কর্মী ছিলেন তারা এখন অনেকাংশেই চুপ হয়ে গেছেন।


শনিবার সকালে তারা নগরীর অশ্বিনী কুমার হল চত্বরের সামনে মানববন্ধন করে সরকারি বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। সাবেক শিক্ষার্থী নামে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হলেও এতে অংশ নিয়েছেন মহানগর আ’লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গির এর নেতৃত্বে আ’লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। যারা নগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারী হিসাবে নগরীতে পরিচিত।


জানা গেছে, সরকারি বরিশাল কলেজের নামের সঙ্গে ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত’ যুক্ত করার জন্য গত ফেব্রæয়ারীতে বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়। এ সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের মতামত চেয়ে গত ২৯ জুন চিঠি দিয়েছে।


এ প্রসঙ্গে সরকারী বরিশাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন সিকদার বলেন, কলেজের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব জেলা প্রশাসক করছেন। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রনালয় বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে মতামত দিতে বলেছে। বোর্ড চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান গত সপ্তাহে এসে তথ্য উপাত্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, হয়তো কোন মানুষের দাবীর প্রেক্ষিতে এই নাম পরিবর্তনের কার্যক্রম চলছে। গত বছর কলেজে অনুষ্ঠিত অশ্বীনী মেলায় জেলা প্রশাসকের কাছে অনুষ্ঠানের আয়োজক অশ্বিনী কুমার স্মৃতি সংসদ নেতৃবৃন্দ এই দাবী তুলেছিলেন।


নামরকনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবীতে শনিবার অশ্বিনী কুমার হলের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তৃতা করেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি, সরকারি বরিশাল কলেজের সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর। তিনি বক্তৃতায় জেলা প্রশাসকের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন- ‘কার স্বার্থে সরকারী বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে নামকরন করার প্রস্তাব দিয়েছেন’? একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, সরকারি বরিশাল কলেজের নামের সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িত। নাম পরিবর্তন করতে দেয়া হবেনা। অশ্বিনী কুমার দত্তকে খাটো করে দেখি না। কলেজ ক্যাম্পাসে তার নামের স্মৃতি রাখতে হলে ছাত্রাবাস, জাদুঘর নির্মাণ করার আহবান জানান তিনি।


মানববন্ধনে জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাফিজ আহমেদ বাবলু বলেন, সরকারী বরিশাল কলেজ প্রতিষ্ঠাকালে অশ্বিনী কুমার দত্তের কোন অবদান ছিল না। তিনি সম্পত্তি বিক্রি করে গেছেন। শহীদ আ: রব সেরনিয়াবাত (মেয়র সাদিকের দাদা), অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান বিশ্বাস (সাবেক রাষ্ট্রপতি), গোলাম মাওলা (সাবেক পৌর মেয়র) সহ বিভিন্ন গুনিজনের উদ্যোগ ও অর্থায়নে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই কারো নামে এই কলেজের নাম পরিবর্তন হতে পারে না।


বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম তালুকদারের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অংশগ্রহন করেন সিটি কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব হোসেন খান ,সরকারী বরিশাল কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল করিম রেজা, ছাত্রলীগ নেতা রইস আহমেদ মান্না, রাসেল হোসেন, আরিয়ন হৃদয় প্রমূখ।


এ বিষয়ে জানতে বরিশালের বিভিন্ন সংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে ফোন দেয়া হলেও তারা রহস্যজনক কারনে কোন মন্তব্য করতে চাননি। অনেকে আবার ফোনই রিসিভ করেননি। তবে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের বরিশাল জেলা সাধারন সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, গত বছর অশ্বিনী মেলায় কলেজের নাম ‘মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত’ প্রস্তাব করেছিলেন সংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এখন তারা চুপ কেন তা রহস্যজনক। তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে কলেজটির নাম পরিবর্তন হওয়া উচিত।
এব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, নাম পরিবর্তনের বিষয়টি অনেক পুরানো দাবী। এটি সবাই জানেন। বরিশালের সুধী সমাবেশের দাবী প্রেক্ষিতে কলেজটির নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এখন কোন পক্ষ যদি এই নাম পরিবর্তনের বিপরীতে অবস্থান নেয় তবে মন্ত্রনালয় তা বিবেচনা করবেন।


প্রসঙ্গত, নগরীর কালিবাড়ি সড়কে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবন ছিল। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মাগান্ধি সহ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতারা বরিশালে আসলে এ বাড়িতে অবস্থান করতেন। অশ্বিনী কুমার দত্ত স্বপরিবারে ভারতে চলে যাওয়ার পর ১৯৬৩ সালে ‘বরিশাল কলেজ’ নামক দিয়ে প্রথমে নাইট ও পরে দিবাকলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহম্মদ এরশাদ কলেজটি জাতীয়করন ঘোষণা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *