চিকিৎসা বানিজ্য রোধে বরিশালে স্বাস্থ্য খাতে শুদ্ধি অভিযান দাবী

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে বরিশালের স্বাস্থ্যসেবা। প্রাণঘাতী করোনাকালে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না সাধারন মানুষ। এখানকার প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্রে শেবাচিম হাসপাতাল ও সদর হাসপাতাল নিয়ে সেবা প্রত্যাশীদের অসন্তোষ চরমে। এই দুর্যোগে দুটি হাসপাতালে একদিকে যেমন কাংখিত চিকিৎসক নেই, তেমনি ভারি যন্ত্রপাতি অচল থাকায় মানুষ বেসরকারীভাবে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করতে গিয়ে নি:শ্ব হচ্ছেন। অপরদিকে নগরীর বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবার নামে চলছে বানিজ্য আর নৈরাজ্য। আলোচিত প্রতারক ‘সাহেদ’ দের নিমর্ূূলে বরিশালের স্বাস্থ্যখাতেও শুদ্ধি অভিযানের দাবী জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ।
আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার বলেছেন, নমুনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ, প্লাজমা ডোনেশন, সুরক্ষাসামগ্রী ক্রয়, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি সংগ্রহসহ স্বাস্থ্যখাতে নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। মন্ত্রী কাদেরের এমন বক্তব্যকে সাদুবাদ জানিয়ে বরিশালে এর বাস্তবায়ন চান বিভিন্ন সেক্টরের মানুষ।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালে কোটি কোটি টাকার এক ডজন যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে আছে। চলমান করোনা সংকটেও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাচ্ছে না এ হাসপাতালে। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের অধিকাংশ টেকনোলজিস্ট, কর্মচারী বেসরকারী ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভাড়ায় খাটছে। এদেরই একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সরকারী হাসপাতালের সচল যন্ত্রপাতিও অচল করে রাখছে। যেকারনে সেবা বঞ্চিত রোগীরা বাড়তি অর্থ ব্যয় করে বাহিরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন। সেবা প্রত্যাশীরা দাবী করেছেন, এ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখা মিলছে না।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, যন্ত্রপাতিগুলো কেনার সময়ে একটি পক্ষের যেমন লাভ, তেমনি অচল হলেও অপর একটি পক্ষের লাভ। জনবল না থাকলেও অনেক যন্ত্রপাতি এনে ফেলে রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, জনবল সংকট নিয়ে যতদুর সম্ভাব সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে বরিশাল সদর হাসপাতালেও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। গত ১৯ জুন করোনায় এক চিকৎসক মারা যাওয়ার পর থেকে সেখানকার চিকিৎসকরা অনেকাংশে আসতে চাচ্ছেন না। এ সুযোগে একটি সিন্ডিকেট সেখানকার রোগী পাঠাচ্ছে আসপাশের বেসরকারী হাসপাতালে। আর বেসরকারী হাসপাতালগুলো চিকিৎসার নামে অর্থ বানিজ্য আর নৈরাজ্য করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বরিশাল সাউথ এ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, বরিশালের বেসরকারী হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু তেমন ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককেই এখন পাওয়া যায় না। এর আগে এসব প্রসঙ্গে বরিশাল ক্লিনিক এন্ড ডায়গনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল বলেন, যেসব হাসপাতাল ৫০ শয্যার, সেগুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া বাধ্যতামুলক। কিন্তু এধরনের সক্ষমতা নেই বরিশালের বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে। যেকারনে তার সংগঠনের সাধারন সম্পাদক ডা: আনোয়ার হোসেনকেও বাচাঁনো যায়নি। তিনি বলেন, সময় এসেছে বরিশালে বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলার।
বরিশাল শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, করোনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে যে বরিশালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভঙ্গুর। বড় বড় ডাক্তাররা ঘরে বসা আছেন। এই ক’দিনে করোনা ছাড়া অনেক রোগীই চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন । বরিশালের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে দৃশ্যমান শুদ্ধি অভিযান দরকার। যাতে বরিশালেও প্রতারক সাহেদরা নির্মূল হয়।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা সাধারন সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, শেবাচিম হাসপাতল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা সেবা দিতে ব্যার্থ। সেখানে করোনা চিকিৎসা তো হচ্ছেই না বরং অন্য রোগীরাও সেবা পাচ্ছেন না। অধিকাংশ চিকিৎসক রোগীকে সেবা দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, শুদ্ধি অভিযান করতে হলে দুর্নীতি পরায়ন চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদে বিদায় করতে হবে। রোগী নিয়ে বানিজ্য করা বেসরকারী হাসপাতালগুলোর দৌরাতœও বন্ধ করতে হবে। বরিশালের প্রতারক সাহেদরা চিহিৃত না হলে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হবে না।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর বরিশালের সদস্য শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, বরিশালেও রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদের মত অনেকেই আছেন। এদের ধরতে হলে শেবাচিম হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালের চিকিৎসা খাতের আমুল পরিবর্তন করতে হবে। বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার নামে ডাকাতি চলছে। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে শুদ্ধি অভিযান দরকার।
বরিশাল জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মুনাওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বরিশালের সরকারী হাসপাতালের আমুল পরিবর্তন দরকার। বেসরকারী হাসপাতালগুলোতেও মনিটরিং বাড়াতে হবে। সরকারের শুদ্ধি অভিযানই বরিশালের এই অবস্থার উত্তরন ঘটাতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *