ইসলামে শ্বাশুরী-পুত্রবধুর সম্পর্ক

Spread the love

বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু আইনের সম্পর্ক নয়; বরং তাদের সম্পর্ক হৃদয় ও আত্মার সম্পর্ক। শুধু আইনের বিশুদ্ধ উত্তাপের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকতে পারে না কোনো সুস্থ সমাজ; বরং কল্যাণ তখনই হবে, স্বামী-স্ত্রী উভয়েই যখন আইনের গণ্ডি অতিক্রম করে রাসুল (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের সুন্নতের ওপর চলতে সচেষ্ট হবে।

ফাতেমা (রা.) নারীদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ

এটাই হলো ইসলামী আদর্শ ও নৈতিকতার ব্যাপার।

আদরের কন্যা ফাতেমা (রা.)-কে স্বামীগৃহে পাঠানোর পর প্রিয়নবী (সা.) তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এভাবে কাজ ভাগ করে দিয়েছিলেন যে ঘরের ভেতরের কাজ স্ত্রী করবে, আর বাইরের কাজ করবে স্বামী। (জাদুল মাআদ : ৫/১৬৯)

তবে এটা সম্পূর্ণ স্ত্রীদের ঐচ্ছিক ব্যাপার। এর জন্য কাউকে বাধ্য করার অনুমতি নেই। কিন্তু প্রচলিত সমাজ তো বাধ্যই করছে! যদি বাধ্য করা না হতো, বিষয়টাকে সম্পূর্ণ স্ত্রীর এখতিয়ারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হতো, সেই সঙ্গে পরিবারের সবাই মিলে ইসলামী আদর্শের চর্চা অব্যাহত রাখা হতো, এর সুফল আরো সুদূরপ্রসারী হতো।

শ্বশুরশাশুড়ির সেবা

শ্বশুর-শাশুড়িসহ ননদ-দেবরের সেবা স্ত্রীর একটি অতিরিক্ত কাজ। এটা তার দায়িত্ব নয়। কিন্তু বর্তমান সমাজ বিষয়টাকে কিভাবে দেখছে? মনে করা হয়, এটা তার অপরিহার্য দায়িত্ব; বরং এটিই যেন তার প্রধান দায়িত্ব! ছেলের জন্য বউ আনাই হয় শ্বশুর-শাশুড়ির সেবার জন্য। এসবের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক নেই। মা-বাবার সেবা করা সন্তানের দায়িত্ব—পুত্রবধূর নয়। (আল-বাহরুর রায়েক : ৪/১৯৩, কিফায়াতুল মুফতি : ৫/২৩০)

তবে হ্যাঁ, যদি স্বামীর মা-বাবার খেদমতের প্রয়োজন হয়, তাহলে স্বামীর কর্তব্য হলো তাঁদের সেবা-যত্ন করা। কোনো স্ত্রী যদি সন্তুষ্টচিত্তে স্বামীর মা-বাবার সেবা করে, এটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। এর বিনিময়ে সে অনেক সওয়াব পাবে। তবে এসব করতে আইনত সে বাধ্য নয়। যদিও কাম্য এটাই যে স্বামীর মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মতো সম্মান ও সমীহের চোখে দেখবে। তাঁদের মনেপ্রাণে ভালোবাসবে এবং তাঁদের সেবা করতে পারাকে নিজের জন্য পরম সৌভাগ্য মনে করবে। অনুরূপ শ্বশুর-শাশুড়িও পুত্রবধূকে নিজের মেয়ের মতো আদর ও খাতির করবেন। তার সুখ-সুবিধার প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন।

মোটকথা, মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধের দাবি হলো, স্ত্রীর ওপর যতটুকু হক আছে, স্বামীর তাতেই সন্তুষ্ট থাকা। এর অতিরিক্ত ব্যাপারগুলো তার ওপর চাপানো ঠিক নয়। হ্যাঁ, সে স্বতঃস্ফূর্তভাবে করলে ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রে স্ত্রীর কর্তব্য হলো নৈতিকতাবোধ দ্বারা চালিত হওয়া। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের কাছেই পরিষ্কার থাকতে হবে, কার দায়িত্ব কতটুকু এবং নৈতিকতার চাহিদা কী? স্ত্রী তার নৈতিকতার ভিত্তিতে যা করবে তা মর্যাদার চোখে দেখতে হবে এবং তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে নিতে হবে।

শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কের ব্যাপারটা নতুন কোনো বিষয় নয়। মানবসভ্যতার শুরু থেকেই এই সম্পর্ক চলে এসেছে। কোরআন ও সুন্নাহ থেকে আমরা বিভিন্ন মানবিক সম্পর্কের সীমা-পরিসীমা, দায়িত্ব-কর্তব্যের ব্যাপারে জ্ঞান পাই। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এই সম্পর্কের দায়িত্বগুলো কখনো একপক্ষীয় হলে চলে না। একজন সন্তানের যেমন তার মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয়, তেমনি মা-বাবারও সন্তানের জন্য অনেক কিছু করতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যেটা হয়, আমরা শুধু নিজের অধিকার আর পাওনাগুলো নিয়েই ভাবতে থাকি, অথচ নিজের কর্তব্য নিয়ে ভাবতে চাই না। আর তখনই সংসারে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠে।

লেখক : ফতোয়া গবেষক মুফতি মাহমুদ হাসান

ইসলামিক রিচার্স সেন্টার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *