দ্বীপ জেলা ভোলার তিন গ্যাস কূপ খননে ৫০০ কোটি টাকা!

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক: দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বা রেকর্ড পরিমান উচ্চমূল্যে ভোলায় ৩টি গ্যাসকূপ খননের কাজ পাচ্ছে রাশিয়ার গ্যাজপ্রম। দুটি অনুসন্ধান ও একটি অ্যাপ্রাইজাল-উন্নয়ন, এই তিনটি কূপ খননের জন্য গ্যাজপ্রমকে দেওয়া হচ্ছে ৬৩ দশমিক ৫৮৫২১৮ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৫২০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই হিসেবে প্রতিটি কূপ খননে ব্যয় হচ্ছে ২১ দশমিক ১৯৫০৭২৭ মিলিয়ন বা ২ কোটি ১০ লাখ ডলারেরও বেশি। এর আগে বাংলাদেশে কোনো গ্যাস কূপ খননে এত ব্যয় হয়নি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় এই কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে জ্বালানি সচিবের নেত্ত্বৃাধীন প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি (পিপিসি)।

এই সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় হয়ে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে যাবে। সেখানকার অনুমোদনের পর চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ভোলা একটি আবিস্কৃত গ্যাসক্ষেত্র। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স এটি আবিস্কার করেছে। সেখানে একাধিক কূপও খনন করেছে বাপেক্স। গ্যাজপ্রমকে এখন যে তিনটি কূপ খননের কাজ দেওয়া হচ্ছে সেগুলোও বাপেক্সের দেওয়া ভূতাত্ত্বিক কারিগরি নির্দেশনা (জিওলজিক্যাল টেকনিক্যাল অর্ডার বা জিটিও) অনুসরণ করে, বাপেক্সের নির্ধারণ করে দেওয়া স্থানেই গ্যাজপ্রম খনন করবে।
ইতিপূর্বে বাপেক্স ওই সব এলাকায় দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক ভূকম্পন জরিপ করায় কূপ খননের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্যই তাঁদের কাছে রয়েছে। কূপ খননের জন্য রিগসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং জনবলও বাপেক্সের আছে। এর একেকটি কূপ খনন করতে বাপেক্সের ব্যয় হবে সর্বোচ্চ ১০ মিলিয়ন ডলার (রিগ ভাড়া, জনবলের পিছনে ব্যয়, থার্ড পার্টির সেবাসমূহের ব্যয়সহ)।
বাংলাদেশে উৎপাদন অংশীদারত্ব চূক্তির অধীনে তিনটি ব্লকে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত আমেরিকান কোম্পানি শেভরনের প্রতিটি কূপ খননে গড় ব্যয় ১৭ মিলিয়ন ডলারের মত। গ্যাজপ্রম এর আগে একাধিক চুক্তির আওতায় মোট ১৭টি কূপ খনন করেছে। এরমধ্যে প্রথম ১০টির চুক্তিমূল্য ছিল প্রায় ১৯৩ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রতিটি কূপের চুক্তিমূল্য ছিল ১৯ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। এরপর সর্বশেষ যে কূপগুলো গ্যাজপ্রম খনন করেছে তার প্রতিটির চু্ক্তমূল্য ছিল ১৬ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলার।

সূত্রমতে, ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য বর্তমান ৩টি কূপ খননের যে প্রস্তাব সারসংক্ষেপ আকারে পাঠায় তাতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয় যে, গ্যাজপ্রম ‘হ্রাসকৃত মূল্যে’ এই তিনটি কূপ খনন করবে। প্রধানমন্ত্রী সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেন। কিন্তু এখন ৩টি কূপের যে চুক্তিমূল্য চূড়ান্ত করা হয়েছে তা বাংলাদেশে গ্যাস কূপ খননে সর্বোচ্চ মূল্যের রেকর্ড করেছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স এই কূপগুলো খননে সম্পূর্ণ সক্ষম। এই অবস্থায় কোনো যুক্তিতেই রেকর্ড পরিমান দামে এই কাজ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া যৌক্তিক নয়। দামের বিবেচনায় যেমন তেমনি বাপেক্সকে বসিয়ে রেখে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এই কাজ করানোর বিবেচনায়ও এটা জাতীয় স্বার্থবিরোধী হবে। তিনি বলেন, গ্যাজপ্রমের সহযোগিতা আমাদের দরকার চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। তাঁদের সহযোগিতা দরকার গভীর কূপ খননে, সমুদ্রবক্ষে অনুসন্ধানে। তার পরিবর্তে বাপেক্সের আবিস্কৃত ক্ষেত্র, বিশেষ করে ভোলা এবং অন্যান্য বিদ্যমান ক্ষেত্রে বেশি দামে কূপ খনন করার মত বেনিয়া মনোবৃত্তি গ্যাজপ্রমের থাকা নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গ্যাজপ্রম গত বছরের ২৫মে ভোলার ওই তিনটি (টবগি-১, ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২) খননের জন্য ৬৫ দশমিক ০৮৫২১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দর প্রস্তাব করে। প্রস্তাবটি র্পযালোচনা করার জন্য একটি কারিগরি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। এই উপ-কমিটি কয়েক দফা আলাপ-আলোচনা ও দর কষাকষি শেষে ৬৩ দশমিক ৫৮৫২১৮ মিলিয়ন ডলার দর চূড়ান্ত করে তা পিপিসির কাছে উপস্থাপন করে। গত ২৭ আগস্ট জ্বালানি সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পিপিসির সভায় এই দাম সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর সভার র্কাযবিবরণী প্রকাশ করা হয়েছে।

সূত্রটি আরও জানায়, এই কূপ তিনটি খননে অস্বাভাবিক ব্যয়ের যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে যে ভোলা ক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ (রিজার্ভার প্রেসার) বেশি, ৪৫০০ থেকে ৫০০০ পিএসআই থাকায় সেখানে কূপ খনন করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া, এই কাজের জন্য গ্যাজপ্রমকে ড্রিলিং কন্ট্রাক্টরসহ ৬টি ইঞ্জিনিয়ারিং সেবা (ডিএসটি, সিমেন্টিং, মাড লগিং, ওয়ারলাইন লগিং, টেস্টিং অ্যান্ড কমপ্লিশন) বিভিন্ন স্থান হতে সংগ্রহ করতে হবে। কভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতির কারনে সমুদ্র ও আকাশপথে চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় মালামাল ও জনবল আনা- নেওয়ার ব্যয়ও বাড়বে। সূত্রমতে, কূপ তিনটি বাপেক্স খনন করলেও উক্ত ইঞ্জিনিয়ারিং সেবাগুলো তাঁদেরও একই প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করতে হয়। আর এই কাজের জন্য বিদেশ থেকে হাজার হাজার টন মালামাল আনা কিংবা শত শত লোক আনা-নেওয়ারও কোনো বিষয় নেই যাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় বেড়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *