নাগরিক রিপোর্ট: উপকূলীয় এলাকা বরগুনায় দেশব্যাপী আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে প্রেরন করেছে পুলিশ। ওই মামলায় মিন্নিসহ ৬জনকে মৃত্যুদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ঘোষণা করেছেন আদালত। এর আগে মিন্নি জামিনে ছিলেন। বিকেলে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৬জনকেই কারাগারে প্রেরন করা হয়। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষনে মিন্নিকে খুনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন- মিন্নি খুনীদের আশার অপেক্ষায় ছিল।
মৃত্যদন্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হচ্ছে-মো: রাকিবুল হাসনা রিফাত ফরাজি(২৪), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন(২২), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত(২০), মো: রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো: হাসনা।
বাকি ৪জনকে খালাস প্রদান করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন- মো: মুসা (২৩), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২১), মো: সাগর(২০) এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন(২২)। বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো: আছাদুজ্জামান বুধবার বেলা দেড়টার দিকে এ রায় ঘোষনা করেন বলে জানা গেছে।
এর আগে গত বছরের ২ জুলাই রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সাথে ক্রোসফায়ারে নিহত হওয়ায় তাকে চার্জশিট থেকে বাদ দিয়েছিল বরগুনা জেলা পুলিশ।
রায় ঘোষনার পর মিন্নিসহ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামীই মুছরে পরেন। তাদের দুপুর আড়াইটার দিকে আদালত থেকে বের করে প্রিজনসেলে তোলা হয়। এসময় সাদা পোশাক পরিহিত মিন্নিকে বিমর্ষ দেখা যায়।
বেলা একটায় বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রায় পড়া শুরু করেন। বুধবার বেলা পৌনে ১২টায় কারাগারে থাকা ৮ আসামী আসামিকে প্রিজনভ্যানে আদালতে আনা হয়। একই মামলার অন্যতম আসামী জামিনে থাকা রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি তার বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের সাথে সকাল পৌনে ৯টায় আদালতে প্রবেশ করেন।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ জুন সকালে উপকূলীয় এলাকা বরগুনা সরকারি কলেজ রোড সম্মুখে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সহযোগীরা। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল, পরে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান। ওই ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৫/৬জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেছিলেন নিহত রিফাতের বাবা।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেড়জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বরগুনা জেলা পুলিশ সক্রিয় হয়ে দ্রæত আসামীদের ধরে ফেলে।
রিফাত হত্যার ২০ দিনের মাথায় গত বছরের ১৬ জুলাই রাতে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে স্ত্রী মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। পরদিন ১৭ জুলাই মিন্নিকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড দাবী করলে বিচারক পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরন করে। ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন মিন্নি।
প্রায় দেড় বছর আগের ওই হত্যাকান্ডে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা থানার ওসি তদন্ত হুমাউন কবির গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল। এর মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক ১০ জনের বিচার চলে জজ আদালতে। বাকি ১৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় বরগুনার শিশু আদালতে আলাদাভাবে তাদের বিচার চলমান।
গত ১ জানুয়ারি প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এ মামলায় মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হচ্ছেন- রিসান, রিফাত হাওলাদার, রায়হান, অলিউল্লাহ নাঈম, তানভীর, চন্দন, রাতুল, নাজমুল হাসান, নিয়ামত, মারুফ বিল্লাহ, মারুফ মল্লিক, আরিয়ানম শ্রাবণ এবং প্রিন্স মোল্লা। তাদের বিরুদ্ধে কিশোর অপরাধ আইনে হত্যা মামলা চলমান রয়েছে।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ রায়কে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল থেকেই আদালতপাড়ায় কড়া নিরাপত্তা বলয় ছিল। বাদী ও আসামী পক্ষের স্বজনসহ উৎসুক জনতা এবং গনমাধ্যম কর্মীদের ভীরে বরগুনা আদালতের বাইরে হুলুস্থল কান্ড ঘটে। রায় ঘোষনার পরপরই দন্ডপ্রাপ্তরা কান্নায় ভেঙ্গে পরেন।