ইসলামে স্ত্রী’র হক ও তার অধিকার

Spread the love

স্ত্রীর হক ও অধিকার এবং স্বামীর হক ও অধিকার বিষয় দুটি ব্যাপক বিশ্লেষণের দাবি রাখে। তবে এখানে আমরা সংক্ষেপে স্ত্রীর হক ও অধিকার নিয়ে আলোচনা করছি। রসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনদের মধ্যে পূর্ণতর মুমিন সে যার ব্যবহার ভালো, আর তোমাদের মধ্যে ভালো সে যে তার স্ত্রীদের জন্য ভালো।’ তিরমিজি, মিশকাত। এ হাদিস দ্বারা ভালো ব্যবহার করা স্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ হক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এমনকি সব মানুষের মধ্যে ভালো ব্যবহারের হকদারও নিজের স্ত্রী। যেমনটি নিম্নে বর্ণিত হাদিসের মাধ্যমে বুঝে আসে, ‘তোমাদের মধ্যে সে-ই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার-আচরণের দিক থেকে সর্বোত্তম। তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই ভালো যে তার স্ত্রীর কাছে ভালো আর আমি আমার স্ত্রীর কাছে ভালো।’ তিরমিজি। এ জন্যই তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সুরা নিসার ১৯ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘সাবধান! স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর।’ হাকিম ইবনে মুআবিয়া কুশাইরি (রা.) সূত্রে তাঁর বাবা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইয়া রসুলুল্লাহ! আমাদের ওপর আমাদের স্ত্রীদের কি হক (অধিকার) রয়েছে? তিনি বললেন, তুমি নিজে যখন আহার করবে তখন তাকেও খাবার দেবে, যখন কাপড় পরিধান করবে তখন তাকেও কাপড় দেবে। তার মুখের ওপর মারবে না, ভর্ৎসনা করবে না তথা তাকে অশ্লীল গালি দেবে না এবং তাকে ত্যাগ করে ঘরের বাইরে ফেলে রাখবে না। অর্থাৎ স্ত্রীকে সংশোধনের জন্য বিছানা পৃথক করলেও তাকে ঘরের বাইরে ফেলে রাখা যাবে না।’ আহমদ, আবু দাউদ।

কোরআন, সুন্নাহ ও অন্যান্য দলিল প্রমাণের আলোকে জানা যায়, স্ত্রীদের অন্যতম হক হলো তাদের থাকা, খাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করা, স্ত্রীদের সতীত্বের মর্যাদা রক্ষার্থে পর্দায় রাখা ইত্যাদি। স্বামীর ওপর ন্যায়সংগতভাবে অভিমান করাও স্ত্রীর অধিকার। মহান আল্লাহ বলেন, ‘স্ত্রীরা তোমাদের পোশাক আর তোমরা (স্বামীরা) তাদের তথা স্ত্রীদের পোশাক।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৭। মাওলানা আশরাফ আলী থানভি (রহ.) উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘পোশাক পরিচ্ছদ দ্বারা মানুষ ধুলাবালি থেকে শরীরকে রক্ষা করে, শীত-গ্রীষ্মের কষ্ট নিবারণ করে, ভদ্রতা রক্ষা পায়, মানমর্যাদা বৃদ্ধি লাভ করে। বাস্তবিক পক্ষে এ চারটি উদ্দেশ্যেই দাম্পত্য জীবন রচনা করা হয়। হজরত আবদুল্লাহ জাম’আ (রা.) বলেন, রসুলে কারিম (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যেন নিজের স্ত্রীকে গোলাম, বাঁদির মতো না পেটায়, এরপর দিন শেষেই তার সঙ্গে শয়ন করে।’ পারিবারিকভাবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সুখে-শান্তিতে থাকতে হলে পারিবারিক আপস-সমঝোতা, ক্ষমার গুণে গুণান্বিত হওয়া, স্বামী-স্ত্রী কেউ কারোর দোষ-ত্রুটি প্রকাশ না করা উচিত। ইমাম ইবনে মালিক (রহ.)-এর মতানুযায়ী স্বামী-স্ত্রীর প্রত্যেকের কথাবার্তা, কার্যকলাপ একে অন্যের কাছে আমানত। তাদের যে কেউ তা প্রকাশ করবে, যা সে অপছন্দ করে, তাহলে নিশ্চিতই সে খেয়ানত করল। আর তা যদি হয় অপবাদ তাহলে তো মারাত্মক কবিরা গুনাহ।

লেখক : মুহতামিম, মুহাম্মাদিয়া কওমি মহিলা মাদ্রাসা, খুলনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *