সীমান্তে গ্রাম: চীন-ভারত উত্তেজনা

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক: স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে ভারত ও ভুটানের সীমান্ত এলাকা দোকলামের কাছে একটি গ্রাম গড়ে তুলছে চীন। গত তিন বছর ধরেই এই এলাকায় চীন-ভারত উত্তেজনা বিদ্যমান রয়েছে। পাংদা নামে চীনের ওই গ্রামটি ভুটান সীমান্তের ২.৫ কিলোমিটার ভেতরে পড়েছে বলে দাবি করেছে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।

চীন ও ভুটানের মধ্যে এ নিয়ে কোনো সংঘাত দেখা যায়নি। তবে এই বিতর্কে বিশেষ আগ্রহ খুঁজে পাচ্ছে ভারত। দোকলাম নিয়ে ২০১৭ সালে যে উত্তেজনা দেখা গিয়েছিল ভারত ও চীনের মধ্যে সেটিই এই আগ্রহের কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। দোকলাম নতুন এই গ্রাম থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভারতের কাছে এই অঞ্চলটি কৌশলগত দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন।


তিন বছর আগে এখানেই ৭২ ঘন্টা মুখোমুখি দাড়িয়ে ছিল ভারত ও চীনের সেনারা। দোকলাম নিয়ে চীনের সঙ্গে বিরোধের জেরে ভুটানই ভারতকে সাহায্য চেয়ে পাঠিয়েছিল। ভারতের শিলিগুরি সীমান্ত যা ‘চিকেন নেক’ হিসেবে পরিচিত। এটির মাত্র ৫০ কিলোমিটার প্রশস্থ। ভারত আশঙ্কা করে এর দখল নিয়ে চীন হয়ত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোকে মুক্ত করে দেবে।


ভারতীয় একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা বলেন, চীন যত বেশি এই অঞ্চলে স্থাপনা নির্মাণ করবে শিলিগুরি সীমান্ত তত বেশি ঝুঁকিতে পরে যাবে। ভারত তাই চীনের কার্যক্রমের ওপর দৃষ্টি রাখছে। ২০১৭ সালের পর থেকে এই দৃষ্টি আরো তীক্ষè করা হয়েছে। তাই তিনি মনে করেন, এখনো যদি চীন সীমান্ত ঘিরে স্থাপনা নির্মাণ করেই চলে তাহলে এর অর্থ হচ্ছে ২০১৭ সালের সংকট এখনো শেষ হয়নি। এ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ করে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। তবে তারা কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। উল্লেখ্য, দোকলামে উত্তেজনার পর চীন ও ভারত উভয়েই সীমান্তে শান্তি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।


এদিকে ভারতে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত ভেতসপ নামগায়েল চীনের গ্রাম নির্মাণের দাবি অস্বীকার করেছেন। ভুটানের সাংবাদিক তেনজিং লামসাংও বলেছেন, গুগল ম্যাপের মতো থার্ড পার্টি উৎস দেখে চীনের গ্রাম নির্মাণের দাবি তোলা হয়েছে। তিনি তার টুইটারে লিখেছেন, ভুটান ও চীন গুগল ম্যাপের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সংঘাতে জড়াবে না। দুই দেশের মধ্যেকার আসল সীমানা গুগল ম্যাপে নেই বলেও জানান তিনি। চীনের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে যে পাংদা গ্রাম তাদের নিজেদের সীমানার মধ্যেই নির্মিত হচ্ছে।


তিব্বতকে আরো এগিয়ে নিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ প্রদেশে ৬২৮টি গ্রাম নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এরইমধ্যে একটি হচ্ছে পাংদা। চীনের সীমান্তবর্তী এসব গ্রামে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ থাকছেন এখন। তিব্বতের বিশাল পতিত জমিকে কাজে লাগাতে ২০১৭ সালে এই প্রকল্প ঘোষণা করেছিল তিব্বত সরকার। এর জন্য চীন খরচ করেছে ৪.৬ বিলিয়ন ডলার। পাংদাতে রয়েছে ২৮টি বাড়ি এবং দুটি সরকারি কার্যালয়। রয়েছে বাজার, স্কুল ও হাসপাতাল।


এরকম আরেকটি চীনা গ্রাম নিয়ে নেপালের সঙ্গে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল এ বছরই। গত মাসে নেপালের বিরোধী দল দাবি করে, বেইজিং নেপাল থেকে জমি দখল করে নিয়েছে। সীমানা পিলার সরিয়ে নেপালের এক কিলোমিটার ভেতরে গ্রাম তৈরি করেছে এমন দাবি করে তারা। তবে পরে নেপাল ও চীন সরকার উভয় পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হয়েছে ওই গ্রাম চীনের এলাকাতেই নির্মাণ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *