বরিশালের ৪ পৌরসভা : দলীয় কোন্দলে নাকাল বিএনপির মেয়র প্রার্থী

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বরিশাল জেলার ৬টি পৌরসভার মধ্যে এ পর্যন্ত নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া ৪ পৌরসভায় আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের কাছে বিশাল ভোট ব্যবধানে হেরেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা। এমনকি মেহেন্দিগঞ্জ ও বাকেরগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীদের তৃতীয় স্থানে পাঠিয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি হয়েছেন চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী। ৪ পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীদের প্রাপ্ত মোট ভোট হচ্ছে ৪৮০৪। যা একজন বিজয়ী প্রার্থীর অর্ধেকেরও কম।


বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় প্রার্থীর বড় ব্যবধানে পরাজয়ের জন্য শুধু আওয়ামীলীগের প্রভাব বিস্তার নির্বাচনী এককভাবে দায়ী নয়, বিএনপির স্থানীয় কোন্দলও এর নেপথ্যে বড় ভূমিকা ছিল। অনুগত না হলে প্রার্থীর পাশে থাকেন না দলের শীর্ষ নেতা ও তার অনুসারীরা। নেতাকর্মীদের এ অভিযোগের সত্যতা মেলে সর্বশেষ গত শনিবার অনুষ্ঠিত মেহেন্দিগঞ্জ ও গৌরনদী পৌর নির্বাচনে।


এ দুটি উপজেলা বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আওতাধীন। উত্তর জেলার সভাপতি মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ মেহেন্দিগঞ্জের বাসিন্দা ও বরিশাল- ৪ (মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুসু গৌরনদীর বাসিন্দা। বিগত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি গৌরনদী-আগৈলঝাড়া নিয়ে গঠিত বরিশাল- ১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। অথচ এ দুই নেতা ও তাদের অনুসারীরা দলীয় মেয়র প্রাার্র্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে গত ২৮ ডিসেম্বর সম্পন্ন হওয়া বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আওতাধীন বাকেরগঞ্জ ও উজিরপুর পৌর নির্বাচনে।


নিজ সংসদীয় এলাকার পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কেন প্রচারনায় যাননি জানতে চাইলে উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাহউদ্দিন ফরহাদ বলেন, ‘একাধিকবার যাওয়ার প্রস্ততি নিয়েছিলাম। সেখানে গেলে হামলার হতে পারে এমন পূর্বাভাস পেয়ে আর যাওয়া হয়নি’। একই যুক্তি দেখিয়ে মেহেন্দিগঞ্জ লাগোয়া উপজেলা হিজলার বাসিন্দা উত্তর জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পদক নুরুল ইসলাম রাজু বলেন, প্রার্থী ও আত্মীয় স্বজনের বাইরের কাউকে নির্বাচনে প্রচারে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়নি নৌকার কর্মীরা।


মেহেন্দিগঞ্জের মেয়র প্রার্থী জিয়াউদ্দিন সুজন এ প্রসঙ্গে বলেন, জেলার সভাপতি প্রচারে আসতে চেয়েছিলেন, হামলার ভয়ে তাকে আনা হয়নি। উপজেলার শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ এসে ঘুরে গেছেন। বেশীরভাগ নেতাকর্মী ভোট দিতেই যাননি’।


মঙ্গলবার সম্পন্ন হওয়া গৌরনদী পৌর নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী জহির সাজ্জাদ হান্নানের প্রচারনায়ও ছিলেন না উত্তর জেলা ও উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা। গৌরনদীর খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ভোটার ঢাকার বাসিন্দা উত্তর জেলার সাধারন সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান এ প্রসঙ্গে উল্টো প্রার্থীকে দায়ী করে বলেন, প্রার্থী নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তিনি নিজের বাসায় নির্বাচনী প্রচার অফিস স্থাপন করেছেন। এসব কারনে দলের নেতাকর্মীরা তার ওপর ক্ষুদ্ধ ছিল।


জানা গেছে, আওয়ামীলীগের আশংকায় দীর্ঘদিন যাবত সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন গৌরনদীতে যাননা। বরিশাল নগরীর ভাটিখানা সড়কে তার বাসায় গত ১৭ জানুয়ারী দুপুরে প্রার্থীর সঙ্গে সভার আগ মুহুর্তে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ কর্মীর নেতৃত্বে হামলা হয়।


গৌরনদীর মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য এস এম মাসুদ রানা বলেন, হান্নান শরিফ সাবেক এমপি স্বপনের প্রার্থী হওয়ায় আকন কুদ্দুসসহ তার অনুসারীরা ভোট দিতে যাননি।
ঠিক একইভাবে গত ২৮ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বাকেরগঞ্জ পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী এসএম মনিরুজ্জামানের পাশে ছিলেন না উপজেলা সভাপতি ও স্থানীয় সাবেক সংসদ আবুল হোসেন খান এবং তার অনুসারীরা। একই সময়ে অনুষ্ঠিত উজিরপুরের পৌর নির্বাচনেও শহিদুল ইসলাম একাই ছিলেন ভোটের মাঠে।


নির্বাচন নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের এমন অবস্থান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেন, ‘প্রার্থী যেই হোক প্রতীক যেহেতু ধানের শীষ তাই সকলের উচিত প্রার্থীর পাশে দাঁড়ানো। শীর্ষ নেতা ও তাদের অনুসারীরা কেন প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন না বিষয়টি সুযোগ পেলে দলের সর্বোচ্চ ফোরামে আলোচনা করবো’।


উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত বরিশাল জেলায় অনুষ্ঠিত ৪ পৌর নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট হচ্ছে- গৌরনদীতে ৬৭৯, বাকেরগঞ্জে ৯১৪, উজিরপুরে ৭৬৫ এবং মেহেন্দিগঞ্জে ২৪২৮।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *