ধর্ষনচেষ্টার অভিযোগে শেকলে বেঁধে যুবককে নির্যাতন, গলায় জুতোর মালা

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : কথিত ধর্ষনচেষ্টার অভিযোগে গাছের সঙ্গে শেকল বেঁধে রাতভর নির্যাতন এবং শালিস বিচারের নামে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ও জুতার মালা পড়িয়ে ঘোরানো হয়েছে বেল্লাল রাঢ়ী (১৮) নামক এক যুবককে। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের মেয়ারচর গ্রামে শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
বেল্লাল মেয়ারচর গ্রামের আলম রাঢ়ীর ছেলে। তার পরিবারের দাবী, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী জসিম আকনের পরিবার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বেল্লালকে আটক করে শারীরিক নির্যাতন ও পাতানো শালিস-বিচার করেছে।
তবে স্থানীয় সুত্রগুলো জানিয়েছে, জসিম আকনের মেয়ে মাকসুদা আক্তারের (১৭) সঙ্গে বেল্লালের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বেল্লাল মাকসুদার সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে গেলে তাকে আটক করে কথিত ধর্ষনচেষ্টার মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে জসিম আকন এবং তার দুই ছেলে স্বপন ও রিপন।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জসিম আকনের বাড়ির বাগান থেকে বেল্লাল রাঢ়ীকে আটক করে মাকসুদার দুই ভাই। বাড়ির ওঠানে একটি গাছের সঙ্গে শেকল দিয়ে বেঁধে সারারাত দফায় দফায় মারধর করা হয়। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জসিম আকনের বাড়িতে সালিশ বিচার বসেন গ্রামের প্রভাবশালী মামুন চৌকিদার, জসিম খান, কবির খাঁ, আনোয়ার চৌকিদার ও মো. জহির সহ আরও কয়েকজন। তারা জসিম আকনের পরিবারের পক্ষ থেকে বেল্লালের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেস্টার অভিযোগের বিচার করেন। বেল্লালকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা এবং জুতার মালা পড়িয়ে ঘুরানোর রায় দেন শালিসদাররা। এরপর বেল্লালকে জুতার মালা পড়িয়ে জসিম আকনের বাড়ির আশেপাশের এলাকায় ঘুরানো হয়।
বেল্লালের বড় ভাই ছালাম রাঢ়ী জানান, জসিম আকনের পরিবারের সঙ্গে তাদের পূর্ব বিরোধ ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে জসিম আকনের বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বেল্লালকে ধরে নিয়ে যায় স্বপন, রিপন ও তাদের চাচাতো ভাই নুরুজ্জামান। এরপর বেল্লালকে লাঠিসোটা দিয়ে মারধর ও সারারাত শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে আটকে রাখে। শুক্রবার সকালে সালিশ বিচারে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা এবং জুতার মালা পড়িয়ে ঘুরানো হয়। শালিস বৈঠকেই শালিসদারদের হাতে ৪০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে বলে দাবী ছালাম রাঢ়ীর।
তিনি অভিযোগ করেন, ‘জসিম আকনের টাকা আছে। এলাকায় তারা প্রভাবশালী। শালিসদাররা সবাই জসিম আকনের পক্ষে কথা বলেছেন। আমার কথা কেউ শোনেননি। জসিম আকন যে শাস্তির কথা বলেছেন, সালিশদাররা সেই শাস্তি আমার ভাইকে দিয়েছেন’।
অভিযুক্ত জসিম আকন ও তার ছেলে স্বপনের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য জানা যায়নি।
সালিশ বিচারে অংশ নেয়া মামুন চৌকিদার জানান, মেয়ের অভিভাবকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সালিশ বসিয়ে বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। মেয়ের বাড়িতে আটক থাকা বেল্লালকে মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন সালিশদাররা। এখানে কোন জরিমানার টাকা আদায় করা হয়নি।
শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে বেল্লালের বড় ভাই ছালাম তার কাছে এসে ঘটনার কথা বলেছেন। তাকে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মেহেন্দিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘটনাটি শোনার পর তিনি বেল্লাল রাঢ়ীর সঙ্গে কথা বলেছেন। বেল্লাল তাকে জানিয়েছেন, জসিম আকনের মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে জসিম আকনের দুই ছেলে আটকে নির্যাতন করে ও পরদিন বিচার করিয়েছে। সি জানান, বেল্লাল রাঢ়ী মামলা দায়ের করতে রাজী না হওয়ায় কোন আইনী পদক্ষেপ নেয়া যায়নি।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *