পরেশসাগর মাঠ ৬ মাস ধরে বেদখল

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট:
বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী পরেশসাগর মাঠ প্রায় ৬ মাস ধরে বেদখল হয়ে আছে। বিসিক উদ্যোক্তা মেলার নামে শতবছরের এ মাঠটিতে নানা ধরনের স্থাপনা ও সরঞ্জামাদী ফেলে রাখা হয়েছে। যেকারনে দীর্ঘদিন ধরে আসপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এলাকার যুব সমাজের খেলাধুলা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। নগরবাসী এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ। কিন্তু প্রশাসন মেলার আয়োজনের নামে মাঠটি দখল করে তছনছ করে ফেললেও কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। প্রসঙ্গত, জমিদার পরেশ রায় চৌধুরীর নামে সৃস্টি পরেশসাগর মাঠটি বরিশাল জিলা স্কুলের সম্পত্তি।

বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন হায়দার বিস্ময় প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরেশসাগর মাঠ থেকে মেলার স্থাপনা এখনও অপসারন করা হয়নি এটা জানা নেই। এগুলো দ্রুত অপসারন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেবেন।’

সরেজমিনে সোমবার নগরীর পরেশসাগর মাঠ পরিদর্শনে দেখা যায়, বিশাল মাঠটির চারদিক টিনের বেড়া দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। ভেতরে সার্কাস, নাগর দোলা সহ বিনোদনের সরঞ্জমাদী পড়ে আছে। শতাধিক স্টল ভেঙ্গে পচে যাচ্ছে। সর্বত্র বাশ পুতে রাখা হয়েছে। মাঠে পানি জমে আছে। কিছু তরুনের আনাগোনাও দেখা গেছে ভেতরে। স্থানীয় বাসিন্দা বাদশা মিয়া বলেন, মাঠটি মেলার নামে দখল হয়ে থাকায় এলাকার যুবকরা খেলাধুলার সুযোগ পাচ্ছে না। এখন মাদক সেবন চলে সেখানে। আজহারুল ইসলাম নামে এক রাখাল বলেন, এই মাঠে সারাজীবন গরু চড়িয়েছেন। কিন্তুমেলার নামে মাঠকে আটকে রাখা হয়েছে।

পরেশ সাগর মাঠে মেলার দায়িত্বে থাকা ব্যবসায়ী প্রতিনিধি মনির হোসেন বলেন, চলতি বছরের ২২ মার্চ পরেশ সাগর মাঠে এ মেলার উদ্বোধন করা হয়। শতাধিক স্টল নিয়ে শুরু হওয়া মেলাটি করোনার কারনে ৪দিনের মাথায় স্থগিত রাখা হয়। বিসিক ও জেলা প্রশাসন এ মেলার আয়োজন করেছিল। তিনি বলেন, তাদের মেলার সকল সরঞ্জমাদী মাঠেই আছে। বিসিক’র সাথে আলাপ করে অক্টোবরে ফের মেলার আয়োজন করতে চান। খেলার মাঠ বেদখল রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিসিক ও জেলা প্রশাসন তাদের মেলার অনুমতি দিয়েছে। এর কার্যক্রম বন্ধ করেনি।

ঐতিহ্যবাহী বরিশাল জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, পরেশ সাগর মাঠটি জিলা স্কুলেরই। ম্যানেজিং কমিটির সভায় সভাপতি (জেলা প্রশাসক) মেলা অনুষ্ঠানের কথা বললে মাঠটি বরাদ্ধ দেয়া হয়। করোনাকালীন আর মেলা হয়নি। এখন স্কুল খুলছে, ছাত্ররা খেলাধুলা করবে। তিনি জেলা প্রশাসককে বলবেন মাঠটি খালি করে দিতে। পাশেরই কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের উপাধ্যক্ষ বিপ্লব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, খেলার মাঠটিতে মেলার সরঞ্জামাদী এখনও পড়ে আছে। আবার হয়তো মেলার আয়োজন করবে।

পরেশ সাগর সংলগ্ন নগরীর ১৬ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারন সম্পাদক সঞ্জিব কুমার রায় পিংকু বলেন, পরেশসাগর মাঠে খেলাধুলা করে বরিশাল জিলা স্কুল, কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ, আলেকান্দা সরকারী কলেজের শিক্ষার্থীরা। অনেকসময় দুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্রিড়াপ্রতিযোগীতাও এখানে হয়। তার এলাকার শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার অন্যতম স্থান এ মাঠ। কিন্তু বিশাল মাঠটি ৬ মাস ধরে টিনের বেড়া দিয়ে ভেতরে মেলার সরঞামাদী ফেলে রাখা হয়েছে। এ সুযোগে মাদকসেবীদের হাট মিলছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, প্রশাসনকে কিছু বলা যায় না। এলাকাবাসী পরেশ সাগর মাঠ উন্মুক্ত না হলে অচিরেই কর্মসুচী গ্রহন করবেন।

জানতে চাইলে বিসিক এর বরিশালের উপ মহাব্যাবস্থাপক মো: জালিস মাহমুদ বলেন, করোনার কারনে বিসিক উদ্যোক্তা মেলা শুরু করা যায়নি। ওই সময়ে জেলা প্রশাসক মেলা স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। শিগ্রই জেলাপ্রশাসকের সাথে আলাপ করে তিনি মেলার অনুমতি চাইবেন। ৬ মাস খেলার মাঠ মেলার নামে দখল রাখায় এলাকাবাসীর ক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি তিনি আমলে নিবেন।’
বরিশাল জিলা স্কুলের সাবেক ছাত্র ও নগরীর বাসিন্দা আনোয়ারুল হক বলেন, পরেশ সাগর মাঠে তিনিও ঘাম ঝরানো খেলাধুলা করেছেন। মাঠটি খেলার জন্য দ্রুত উন্মুক্ত করার দাবী জানান তিনি।

যেভাবে পরেশসাগর মাঠ:
বরিশালের প্রবীন সংস্কৃতজন অ্যাডভোকেট এস এম ইকবাল বলেন, শত বছর আগে লাকুটিয়ার জমিদার পরেশ রায় চৌধুরী পরেশ সাগর দিঘি কাটেন। এর পাশেই দিঘীর মাটি ফেলায় গড়ে ওঠে পরেশসাগর মাঠ। এটি এখন জিলা স্কুলের মাঠ। বিশাল মাঠটির অনেকাংশ দখলও হয়ে গেছে। তিনি বলেন, নগরীতে খেলাধুলার অন্যতম স্থান পরেশসাগর মাঠ। অনেকেই শরীর চর্চা করতে, কিংবা দেখতে আসেন মাঠটি। তিনি জানান, জনস্বার্থে মাঠটি দ্রুত উন্মুক্ত করে দেয়া দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *