অপরূপা আয়ারল্যান্ড

Spread the love

নাগরিক ফিচার ॥ এয়ারপোর্টের সব ফর্মালিটিজ শেষ। বোর্ডিং এ ফাইনাল কল চলছিলো। ভাবছিলাম শেষের দিকে উঠি। হঠাৎ এয়ারপোর্টের সাউন্ড সিস্টেমে আমার নাম এ্যানাউন্স হচ্ছিলো। ঘটনা কি! সমস্যা কোথায়! আমার নাম বলার মতো কিছু তো হবার কথা না। বোর্ডিং এক্সিকিউটিভদের সঙ্গে কথা বলতে বলছিলো। কমবয়সী জেট এয়ারের এক এক্সিকিউটিভকে বললাম, আমার নাম এ্যানাউন্স করছে কেন? ছেলেটা নির্বিকার হয়ে বললো, অয়েট করেন। তার মানে এরকমটা ওখানে প্রায়ই হয়। সিরিয়াস কিছু নয়। ফ্লাইট যদি ছেড়ে দেয়- ছিলো সে ভয়। কিছুক্ষণ পর আরো তিনজন জুটলো। চারজন গেলাম রিমান্ডে। সেখানে আরো কিছু লোক ছিলো। এক চীনা ভদ্রলোকও ছিলো।

এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি অফিসাররা একটা ব্যাগ দেখিয়ে বললো, এটা আপনার? ইয়েস। ভেতরে পাওয়ার ব্যাংক আছে? ইয়েস। ব্যাগ খুলতে হবে। খুলে দিলাম। পাওয়ার ব্যাংক বের করলো। যে ছেলেটি বোর্ডিং এরিয়া থেকে আমাকে সেখানে নিয়ে গেলো, সে-ই পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে নিলো। বললাম, ব্যাংকটা দেন। হ্যান্ড লাগজে নিচ্ছি। দিলো না। মন খারাপ হলো। সুন্দর জিনিস, অনেক দাম দিয়ে কেনা। ফ্লাইট ছেড়ে দিলো। প্রথমে ইস্তান্বুল, তুরস্কের রাজধানী। এরপর সেখান থেকে ডাবলিন। এর আগেও ইস্তান্বুল হয়ে লন্ডন এবং চেক রিপাবলিকে গিয়েছি। ইস্তান্বুল এয়ারপোর্ট অনেকটা চিড়িয়াখানার মতো মনে হয়। দুনিয়ার সব রকমের চিড়িয়ার দেখা মেলে সেখানে। উইরোপের গেটওয়ে বলা হয় একে। বিশেষ করে আফ্রিকা এবং এশিয়ার বিমান যোগাযোগ অনেকটাই ইস্তান্বুল কেন্দ্রিক। বারো রকমের মানুষ আর ৫২ রকমের কীর্তিকাহিনী সেখানে। সকাল বেলা। আকাশ ছিলো পরিষ্কার। তুরস্কের কাছাকাছি ভূমিরূপটা খুব বিচিত্র। পাহাড়, সমুদ্র, নদী, জলাভূমি, বিস্তীর্ণ মাঠ সবই দেখা যাচ্ছিলো বিমান থেকে। বিশেষ করে এয়ারপোর্টের আগে রয়েছে বিশাল কৃষ্ণ সাগর। ইংরেজিতে যাকে বলে ব্ল্যাক সি। বিমান থেকে জল অনেকটা কালোই দেখায়। কালো নীলের জলতরঙ্গ। পানির সামান্য উপর দিয়ে অনেকটা পথ যেতে হয় ফ্লাইটে। এটা অসাধারন একটা অভিজ্ঞতা। নিচ দিয়ে নৌকা, জাহাজ, স্পিডবোট চলছিলো। পাশেই শহরের উঁচু দালান কোঠা। এয়ারপোর্টের আগে একটা বড় নদী ঢুকে গেছে শহরের ভেতরে। যেটি শহরকে দুভাগ করে রেখেছে। সুউচ্চ ঝুলন্ত সেতু দিয়ে গাড়ি পার হচ্ছিলো।
ঘন্টাখানেকের বিরতি ছিলো সেখানে। ফ্লাইটের ভেতরই ছিলাম। কিছু যাত্রী নামলো। কিছু উঠলো। ঘন্টাখানেক পর আবার ফ্লাই অফ। ইস্তান্বুল থেকে সরাসরি ডাবলিন, দক্ষিন আয়ারল্যান্ডের রাজধানী। ইস্তানবুল থেকে ডাবলিন যেতে সময় লাগছিলো সাড়ে চার ঘন্টা। এক সময় আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের সঙ্গেই ছিলো। এখন দক্ষিন আয়ারল্যান্ড আলাদা। আর উত্তর আয়ারল্যান্ড এখনো যুক্তরাজ্যের সঙ্গেই। যুক্তরাজ্যের ঠিক পশ্চিমে আয়ারল্যান্ড। মাঝখানে বিশাল সাগর। যার নাম আইরিশ সি। শুনলাম, পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামি ফেরি চলে উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের মধ্যে। স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্যের একটি বিশাল রাজ্য। সৌন্দর্যের জন্য যার খ্যাতি জগৎজোড়া। ডাবলিন এয়ারপোর্টও সাগর তীরের কাছেই। বিমান উঠার সময় তাড়াতাড়ি উঠে যায়। ল্যান্ডিংয়ের সময় অনেক দূর থেকে নিচ দিয়ে চলতে থাকে। জানালার পাশে বসলে পাখির চোখে সব দেখা হয়ে যায়।

দেখছিলাম ডাবলিনের রূপ। জলাশয় শেষেই অনিন্দ্য সুন্দর ভ্যালি- উপত্যকা। অপরূপা আয়ারল্যান্ড। ভেবেছিলাম সবুজ মানেই বাংলাদেশ; বাংলাদেশের মতো এতো সবুজ আর কোথাও নেই। অথচ ডাবলিনের সবুজ আমার চোখ ঝলসে দিচ্ছিলো। বাতাস বইছিলো। দোল খাচ্ছিলো গাছ গাছালি, লম্বা ঘাস, লতা-পাতা। সবুজ মখমলে মোড়ানো মাঠ। ক্ষেতের আ’লে ফুলের গাছ। নানা রঙা ফুল। হলদে ফুলই বেশি। সোনারঙা ফুল নিকটবর্তী আকাশে মায়া ছড়াচ্ছিলো। সে মায়ায় বিমোহিত হচ্ছিলাম। একেকটা গাছের পাতা একেক রকম, বিচিত্র! বর্নিল! ফ্লাইট থেকে দেখছিলাম আর মুগ্ধ হচ্ছিলাম। এ তো মাঠ নয়, সাধারণ ভূমি নয়; রীতিমতো ফুলের বাগান, স্বর্গোদ্যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *