সৈয়দ জুয়েল:
শেষ হয়ে গেলো গলওয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটির নির্বাচন। এই প্রথম সরাসরি তিনটি পদে নির্বাচনের দিনটি ছিলো উৎসবমুখর। ভোটের ফলাফলে সাবেক সভাপতিকে পিছনে ফেলে জয়ী নতুন প্রার্থী। কেন হেরে গেলেন সাবেক সভাপতি! এ বিষয়ে বেশ কিছু বাংলাদেশির সাথে কথা বললে তারা জানান-একাধিক কারনে হেরে গেছেন আগের সভাপতি। এর মাঝে নিজ থেকে আগ্রহ নিয়ে কোন অনুস্ঠানাদির আয়োজন না করা, সঠিক সময়ে ফোনে না পাওয়া, কমিটির মাঝেই বিভাজন অনেকটা দায়ী বলে মনে করা হয়। তবে সাবেক সভাপতি করোনাকালীন সময়ে ইচ্ছে থাকলেও অনেক কাজ করতে পারেনি, এই অজুহাতকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি ভোটাররা। ভোটারদের কথা-করোনার বিধি নিষেধ শিথিল হওয়ার পরও কোন আয়োজনই করেননি তিনি।
এসব কারনেই নতুন প্রার্থীকে বেছে নিয়েছেন এখানের বাংলাদেশিরা। পরিবর্তনের জন্য ভোট দেয়াই মূখ্য ছিলো বলে মনে করেন তারা। কারন নতুন সভাপতির বাংলাদেশ কমিউনিটিতে উল্লেখ করার মত তেমন কোন অবদান ছিলোনা,তারপরও ভোট দিয়েছেন তাকে। অনেকে দলীয় ফ্যাক্টর বলার চেষ্টা করলেও এটি সঠিক নয়,কারন স্থানীয় বাংলাদেশ কমিউনিটিতে এর প্রভাব তেমন পরেনা বললেই চলে। সাবেক সভাপতি আওয়ামিলীগ সমর্থিত, আবার নতুন সভাপতি বিএনপি সমর্থিত। নতুন সভাপতির পক্ষে আওয়ামিলীগের অনেক কর্মী-ই প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে প্রচারনা চালিয়েছেন।
এদিক থেকে স্থানীয় আওয়ামিলীগের অনেক কর্মীরই সহযোগিতা পাননি আগের সভাপতি। তবে আশ্বাস পেয়েছেন অনেক, বাস্তবে মাঠে দেখা যায়নি তাদের। মাঠে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষ হয়েই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগের সত্যতা যে নেই,তা বলা মুশকিল। সাবেক সভাপতির পক্ষে শুধু তার পরিবারের সদস্যরাই ভোট চেয়েছেন,এমনকি ভোটের দিন সদ্য নির্বাচিত প্রার্থীর পক্ষে কিছু লোকের হাতে লিফলেট থাকলেও সাবেক সভাপতির পক্ষে সেই প্রচারটুকুও ছিলো অনুপস্থিত। এর মাঝেও সে যে প্রায় একশো ভোট পেয়েছেন,এটি নতুন সভাপতির জন্য একটি সতর্কবার্তা বলে মনে করেন কেউ কেউ। আবার ভোট গননার সময় দেখা গেছে-বেশ কিছু ব্যালট পেপারে কোন সভাপতি প্রার্থীকেই ভোট দেয়নি ভোটাররা। যোগ্য প্রার্থী পাননি বলেই এমনটা তারা করেছেন বলেই ধারনা।
যোগ্য, অযোগ্য, বিভক্তির বিচারের চেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় নির্বাচনের গনতন্ত্রের ধারায় ফিরছে গলওয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটি। সিলেকশন বা হাত জাগানো কমিটির দিনের শেষের সুবাতাস বইছে এখন। এবছর নির্বাচনের আগে পদ ভাগাভাগিতে যে আপোষ মীমাংসা করতে হয়েছে,আগামীতে সেটি আর সম্ভব হবেনা বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে। তাই সিলেকশন,ইলেকশনে যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের কোরাম সৃষ্টি করে কমিউনিটি চালালে এটি হবে বড় ভুল। যে কারনে সাবেক সভাপতি একশো ভোটও পায়নি, সেই ভুলের সাথে নতুন সভাপতির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ২০-২৫ পরিবারের সাথে সখ্যতা করে বিভক্তির! তাহলে আগামী দুই বছর পরের ভোটে এরচেয়ে শোচনীয় পরাজয় হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা।
যে কোন বাংলাদেশি কমিউনিটি-ই কারো ব্যাক্তিগত ইচ্ছা বা ২০-২৫ পরিবারের ইচ্ছায় চলেনা। এটি সকল বাংলাদেশিদের সংগঠন। এ বারের নির্বাচনে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাক্তি বা পরিবারের জন্য বিজয়ী হননি নতুন সভাপতি। ভোটাররা শুধু একটা পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়েছেন তাকে। সেই পরিবর্তন না আসলে আবারো দূর্বল হবে এ কমিউনিটি। শুধু নাম সর্বস্ব পদ নয়,কাজ দিয়েই সফল এক কমিউনিটি উপহার দিবে নতুন কমিটি। এ বিশ্বাসে ভোটের মর্যাদা রক্ষা করে সফল এক কমিউনিটির অপেক্ষায় এখানের সচেতন বাংলাদেশিরা। মনে রাখতে হবে আবার দু’বছর পর ঘরে ঘরে যেতে হবে ভোট চাইতে।ঘরের দরজার সামনে প্রার্থী দেখে কেউ যেন দরজা বন্ধ করে না দেয়। সচেতন ও শুদ্ধি হতে হবে শুরু থেকেই।