অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে নগরে লুকোচুরি// আতাঁতের অভিযোগ

Spread the love

খান রফিক:
অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে উচ্চাদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না বরিশাল নগরে। স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সিভিল সার্জন এ নিয়ে নানা লুকোচুরি করছে। নগরে কতটা অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে তার সঠিক তথ্যই দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্যবিভাগ কেবল গ্রামগঞ্জের কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টারে লোকদেখানো অভিযান করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিভাগের ছয় জেলায় ৬৫টি অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হলেও নগরে কোন অভিযান নেই। অভিযোগ রয়েছে রোগী ধরা দালাল নির্ভর নগরের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের সঙ্গে যোগসাজস করে অভিযানে বিলম্ব করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হুমায়ূন শাহীন খান সোমবার বিকেলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৬৫টি অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার পর্যন্ত মহানগরীর কোন প্রতিষ্ঠান নেই। নগরে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে কিনা কিংবা নগরের সবগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা শতভাগ জনগন পাচ্ছে কি না – এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাকি যেগুলো রয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধেও পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জন সুত্রে জানা গেছে, বরিশাল সিটিসহ জেলায় প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক ৭৬টি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার ২২৫টি। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনসহ সদর উপজেলায় প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক ৩৫টি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১০১টি। এছাড়া ১০ উপজেলায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে ১২৫টি। উপজেলাগুলোতে আবেদনবিহীন অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টি সেন্টার রয়েছে ৩৫টি। তবে নগরে কতটি অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে সে বিষয়ে মুখ খুলছে না স্বাস্থ্যবিভাগ কিংবা সিভিল সার্জনের কার্যালয়।

জানতে চাইলে বরিশাল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী মফিজুল ইসলাম কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, বরিশাল নগরে ১২০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। তার সংগঠনের আওতায় ৭৮টি। বাকি ৪২টি প্রতিষ্ঠান নানা ভাবে সৃস্টি। নগরের এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শতভাগ ফিটনেস নাও থাকতে পারে।

তিনি মনে করেন, কেবল নিবন্ধন থাকলেই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে না। বরং দালাল উঠিয়ে দিতে পারলে গ্রামগঞ্জের সাধারন মানুষ নগরে এসে প্রতারিত হবেন না। কেন না কতিপয় ডাক্তার চুক্তিতে দালাল লালনপালন করে। বিভিন্ন পেশার মানুষ এখন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক হয়ে দালাল পুষছে। তারা এ বিষয়ে র‌্যাব, পুলিশকে বহুবার বলেছেন। বিশেষ করে বিবির পুকুর পাড় এবং প্যারারা রোডসহ আসপাশে রোগী ধরা দালাল তৎপর। তিনি বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি এবং জনবল নাই সেগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত।
নগরের ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুর ঘিরে যেন রোগী ধরা দালালদের হাট বসে। অলিগলিতে এসব দালাল অবস্থান নিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারনা করছে।

এর পাশেই প্যারারা রোড এবং জেনারেল হাসপাতাল ও শেবাচিম হাসপাতাল ঘিরেও সক্রিয় এসব দালাল চক্র। অভিযোগ রয়েছে, গ্রামগঞ্জ থেকে আসা রোগীদের ধরে অখ্যাত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়ে সর্বশান্ত করা হয়। মাঝে মাঝে দালাল চক্র ধরতে আইনশৃংখলাবাহিনী তৎপর থাকলেও ডায়াগনস্টি সেন্টারের কথিত প্রভাবশালী মালিক নানাভাবে তৎবির করে তাদের ছাড়িয়ে আনে।

নগরের সাউথ এ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ হসপিটাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, আদালতেরই বা কেন এমন বিষয় বলতে হবে! স্বাস্থ্যবিভাগ কি দেখে না? যত্রতত্র নিবন্ধনবিহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অসাধুদের হাতে জনগন জিম্মী। তিনি বলেন, অবৈধ হলে আমাদেরটাও বন্ধ করে দিক। অভিযানে অনুমতি কেন লাগবে। দালালদের তৎপরতা প্রসঙ্গে তাপস বলেন, ‘আমরা কেন দালাল পুষবো। নগরের অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ডাক্তাররাই দালাল পোষে। এই দালালদের হোতাদেরও ধরা দরকার।’

বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান সাংবাদিকদের বলেন, জেলায় মোট ৩৫টি অনিবন্ধিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এদের মধ্যে ১৭টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাকি ১৮টি অবৈধ ডায়াগনস্টিক প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন মারিয়া বলেন, পর্যায়ক্রমে ওইগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। নগরে অভিযান না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিটি এলাকায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের অনুমতি সাপেক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *