সরু মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট:
পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে প্রাণ ঝড়ছে যাত্রী কিংবা পথচারীর। গত দুই দিনেই পৃথক দুটি ঘটনায় নিহত হয়েছে ১০জন। গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালুর পর এ মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত দুই ডজন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। হাইওয়ে পুলিশ, বাস শ্রমিক সহ সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ এজন্য সরু ও আকাঁবাকাঁ মহাসড়ককে দায়ী করে দ্রুত ফোর লেন করার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

বুধবার মহাসড়কের উজিরপুরের নতুন শিকারপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪জন নিহতের কারন হিসেবে দ্রুত গতি আর সরু মহাসড়ককে দায়ি করেছে সংশ্লিস্টরা। স্থানীয় বাসিন্দা মো: জাহিদ বলেন, তাদের এই এলাকায় গত ১৫দিনে সব মিলিয়ে ৮ জনের মৃত্যু ঘটেছে। তিনি বলেন, মহাসড়ক সরু হওয়ায় পদ্মা সেতু চালুর পর যানবাহন পাল্লা দিতে গিয়ে মানুষের প্রাণ ঝড়াচ্ছে। গত ২৫ জুন উজিরপুরের বামরাইলে একজন কার্ভড ভ্যানের সঙ্গে ধাক্কায় এবং একই দিন অপরজন একজন গৌরনদীতে প্রান হারিয়েছে। এছাড়া গত ১১জুলাই উজিরপুর উপজেলার নতুন শিকারপুরে একটি অটো ভ্যানগাড়ি চাপায় ভ্যানচালক নিহত হন।
গৌরনদী হাইওয়ে থানার ইনচার্জ শেখ বেল্লাল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, অতিরিক্ত গতির কারনে বৃহস্পতিবার উজিরপুরে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি স্বীকার করেন এ মহাসড়ক সরু তো বটেই। বাকও আছে অনেক। তাই ফোর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক লেন হওয়া জরুরী।

মহাসড়কের গৌরনদীর স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহের বুধবার তারাকুপিতে সড়ক পাড়াপাড়ের সময় ইস্কেন্দার ব্যাপারী নামে একজনের মৃত্যু ঘটেছে। গত ৮ জুলাই ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম বেজহার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আব্দুর রহমান নামে এক মটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম আব্দুর রহমান (৩০)। এদিকে বরিশাল নগরের মধ্যে ১২ কিলোমিটারে গত এক মাসে কমপক্ষে ৩জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। এর মধ্যে মহাসড়কের আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর ঢালে গত ৩ জুলাই, সিন্ডবি রোডে ৭ জুলাই এবং কাশিপুরে ১২ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।

মহাসড়কের নগরের এই ১২ কিলোমিটারের সরু সড়কের দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়ক প্রশস্তে ঈদের আগে সিটি করপোরেশন, বিভাগীয় প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ বৈঠক করে উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে গত বুধবার বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়কের বাকেরগঞ্জ পৌর শহরের ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬জন অটো রিকশা চালকের মৃত্যু ঘটেছে। সন্থানীয় সুত্রে জানা গেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় মহাসড়কে অবৈধ অটোরিকশা চলাচলে ওই এলাকায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। এ প্রসঙ্গে বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আলাউদ্দিন মিলন সাংবাদিকদের বলেন, মহাসড়কে অবৈধ যান রোধ করতে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

জানতে চাইলে বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক ফরিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মহাসড়কে যে দুর্ঘটনা ঘটছে তা যানবাহনের বেপরোয়া গতি এবং সড়ক সরুর কারনেই হচ্ছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী জানাচ্ছেন যে এই মহাসড়ক দ্রুত ফোর লেন করা উচিত। এজন্য মহাসড়কের অবৈধ উচ্ছেদ, অবৈধ যান সরাতে হবে অনতিবিলম্বে। তিনি বলেন, আসার কথা হলো বরিশাল সিটি মেয়র সড়ক ও জনপথের সঙ্গে মিলে নগরের মধ্যে ১২ কিলোমিটার মহাসড়ক (রহমতাপুর থেকে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু পর্যন্ত) প্রশস্তকরনের উদ্যোগ নিয়েছেন।

এব্যপারে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা সাধারন সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, পদ্মা সেতু চালুর আগেই ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক ফোর লেন অথবা প্রশস্ত করা দরকার ছিল। এখন সরু সড়কে একের পর এক প্রাণ ঝড়ছে। এক দিনে মাথায় এই যে ১০জনের মৃত্যু এর দায় কে নিবে? তিনি অনতিবিলম্বে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদারকরির দাবী জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *