নাগরিক রিপোট : বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের ৩টি ইউনিটে দুই দিন ধরে বিদ্যুত নেই। এতে রোগী, চিকিৎসক এবং নার্সরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। সন্ধ্যার পর ওই তিনটি ইউনিটের রোগী ও স্বজনরা শৌচাগারে যেতে পারেন না। প্রয়োজন হলে মোবাইল ফোনের আলো ও টর্চ জ্বেলে শৌচাগারে যেতে হয়। এছাড়া বিদ্যুত না থাকায় ভুতূরে অবস্থার সৃষ্টি হয় ওই তিনটি ইউনিটে। সন্ধ্যার পর মোম জ্বালিয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে নার্সদের। রেডিওলজি বিভাগে বিদ্যুত নেই ১৮ দিন ধরে। এসব ওয়ার্ডে বিদ্যুত সংযোগ মেরামত বা পুনস্থাপনে কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন চিকিৎসক, রোগী এবং তাদের স্বজনরা। বিদ্যুত না থাকা ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে পুরুষ সার্জারি বিভাগের ব্লক ৩ ও ৪ এবং চক্ষু বিভাগ (পুরুষ ওয়ার্ড)।
শেবাচিম হাসপাতালের তিনটি ইউনিটে এবং রেডিওলজি বিভাগে বিদ্যুত না থাকার সত্যতা স্বীকার করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, বিদ্যুত সংযোগ পুনস্থাপনের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে বার বার বলা হলেও তারা কার্যকর কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। বিদ্যুত না থাকায় তিনটি ইউনিটে চিকিৎসা সেবা মারাত্মক বিঘিœত হচ্ছে। রেডিওলজি বিভাগ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
পুরুষ সার্জারি ইউনিটের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আলোর স্বল্পতার কারনে রোগীদের ইনজেকশন ও অন্যান্য সেবা দিতে দুর্ভোগ হচ্ছে। হাসপাতালে বিদ্যুত ছাড়া সেবা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু আমাদের সেটাই করতে হচ্ছে। কেন বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়েছে তা কর্তৃপক্ষ এখনো উদঘাটন করতে পারেনি। এভাবে বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় হাসপাতালে সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সার্জারি ওয়ার্ডের ইউনিট -৩ এর রোগী শহিদুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার পর রোগীর স্বজনরা অন্ধকার দূর করতে মোবাইলের আলো ও মোমবাতি জ্বেলে রাখেন। বিদ্যুত না থকায় যথাযথভাবে চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না চিকিৎসক ও নার্সরা।
সার্জারি ইউনিটের এক রোগীর স্বজন মাইনুল ইসলাম বলেন, আলো না থাকায় চরম অসুবিধার মধ্যে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিদ্যুত দেওয়ার ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। অপর এক রোগীর স্বজন আরাফাত হোসেন শাওন বলেন, বিদ্যুত না থাকায় হাসপাতালে ঠিকমত চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মনে হয় এ হাসপাতালের কোন কর্তৃপক্ষ নেই। এভাবে বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় হাসপাতাল চলে কি করে ?
না প্রকাশ না করার শর্তে এক নার্স বলেন, বিদ্যুত না থাকায় রাতে আমরা ঠিকভাবে ইনজেকশন দিতে পারছি না। চলাফেরা করতে পারছি না। মোম আর মোবাইলের আলো ব্যবহার করে সেবা দিতে হচ্ছে।
ক্ষুব্ধ এক রোগীর স্বজন মাইনুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের সামনে কোটি টাকা ব্যয় করে গেট নির্মান করা হচ্ছে। অথচ দুই দিন ধরে তিনটি ইউনিটে বিদ্যুত নেই। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোন মাথাব্যাথা নেই। ব্যয়বহুল গেট নির্মানের চেয়ে হাসপাতালে বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরী। এভাবে একটি হাসপাতাল চলতে পারে না।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের তিনটি ইউনিটে বিদ্যুত নেই বুধবার থেকে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং’র পর থেকে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে রেডিওলজি বিভাগ। এতে রোগীদের সরকারিভাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসক ও নার্সরা সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দিতে পারছেন না। রোগীরা দুর্ভোগে আছেন। বিদ্যুত সংযোগ পুনঃস্থাপনের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে বার বার বলা হলেও তারা কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, শেবাচিম হাসপাতালটি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুত লাইন মেরামত করা হয়নি। এজন্য হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিটে বিদ্যুতের কেবল নষ্ট হয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে। এব্যাপারে বহুবার মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বার বার চিঠি দেওয়া হলেও কোন সুফল মেলেনি।
বক্তব্য জানতে বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসানকে (০১৮১৯৮৮৩৪১১) একাধিকবার কল এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার কোন সারা পাওয়া যায়নি। ##