সমর্থকরা আর্জেন্টিনাকে জানুন

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : ফুটবল বিশ্বকাপ আসলেই ব্রাজিল আর্জেন্টিনার সমর্থকরা কতইনা পাগলামি করে। আর্জেন্টিনা শব্দটি শুনতে প্রথমেই মনে আসে ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তি ম্যারাডোনা অথবা আজকের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসির মুখ। মনে আসে নান্দনিক ফুটবল। ফুটবলের জন্যই বাংলাদেশের মানুষ এই দেশকে চেনে বেশি। তবে ফুটবল ছাড়া আসলে দেশটি কেমন, কত বড়- এসব সম্পর্কে খুব বেশি মানুষ জানেন না। চলুন জেনে আসি আর্জেন্টিনা দেশ সম্পর্কে।

নীল-সাদা পতাকার দেশটির রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার দেশ। এর বৃহত্তম শহর ও রাজধানী বুয়েনস আয়ারস । দেশটি দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ অংশের প্রায় পুরোটা জুড়ে অবস্থিত। আয়তনের দিক থেকে এটি দক্ষিণ আমেরিকার ২য় বৃহত্তম এবং বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশ।

আর্জেন্টিনার আয়তন ২৭ লাখ ৮০ হাজার ৪০০ বর্গ কিলোমিটার (আয়তনে বাংলাদেশের প্রায় ১৯ গুণ বড়)। দেশটি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণাংশের প্রায় পুরোটা জুড়ে অবস্থিত। পশ্চিম সীমানায় আন্দিস পর্বতমালা এবং অপর পার্শ্বে চিলি অবস্থিত। উত্তরে বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ে, উত্তর-পূর্বে ব্রাজিল, পূর্বে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরএবং দক্ষিণে ড্রেক প্রণালী। আর্জেন্টিনার মোট স্থলসীমান্ত ৯,৩৭৬ কিলোমিটার।

আর্জেন্টিনায় ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ু বিচিত্র। উত্তরের নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে দক্ষিণের মেরু-উপদেশীয় অঞ্চল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার বিস্তার। এর মধ্যেই আছে রুক্ষ আন্দেস পর্বতমালা ও তার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ আকোনকাগুয়া। তবে বেশির ভাগ লোক দেশটির মধ্যভাগে অবস্থিত বিশাল উর্বর প্রেইরি সমভূমির পাম্পাস শহরে বসবাস করেন। পাম্পাসেই দেশটির অধিকাংশ কৃষিসম্পদ উৎপন্ন হয় এবং এখানেই দক্ষিণ আমেরিকার বিখ্যাত কাউবয় ‘গাউচো’দের আবাসস্থল।

আর্জেন্টিনাতে আদি প্রস্তর যুগে মানব বসতির নিদর্শন পাওয়া গেছে। আধুনিক আর্জেন্টিনার ইতিহাস ১৬ শতকে স্পেনীয় উপনিবেশীকরণের মাধ্যমে সূচিত হয়। ১৭৭৬ সালে এখানে স্পেনীয় সাম্রাজ্যের অধীনে রিও দে লা প্লাতা উপরাজ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে এই উপরাজ্যের উত্তরসূরী রাষ্ট্র হিসেবে আর্জেন্টিনার উত্থান ঘটে।

১৮১০ সালে আর্জেন্টিনা স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ১৮১৮ সালে স্পেনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধবিজয় শেষ হয়। ১৯ শতকের শেষ ভাগ থেকে আর্জেন্টিনা প্রচুর পরিমাণে কৃষিদ্রব্য যেমন মাংস, পশম, গম, ইত্যাদি রপ্তানি করা শুরু করে। দক্ষিণ আমেরিকায় আর্জেন্টিনাতেই প্রথম শিল্পায়ন শুরু হয় এবং এটি বহুদিন ধরে এই মহাদেশের সবচেয়ে ধনী দেশ ছিল।

আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক ইতিহাস সংঘাতময়। দেশটির সবচেয়ে বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট হুয়ান পেরন শ্রমিক শ্রেণী ও দরিদ্রদের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলেন, কিন্তু তিনি ছিলেন একজন একনায়ক এবং সমস্ত বিরোধিতা কঠোর হাতে দমন করতেন। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ১৯৫৫ সালে পেরনের পতন ঘটে। ১৯৮৩ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছেড়ে দেবার পর আর্জেন্টিনায় আবার গণতন্ত্র স্থাপিত হয় কিন্তু দেশটি অর্থনৈতিক সমস্যায় তখনও হাবুডুবু খেতে থাকে। বর্তমানে দেশটি তাঁর অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আর্জেন্টিনার মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি ৪৩ লাখ। এর মধ্যে মুসলমান প্রায় ৮ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ। এছাড়া দেশটির মোট জনসংখ্যার মধ্যে রোমান ক্যাথলিক ৯২ শতাংশ, প্রটেস্টান্ট ২ শতাংশ, ইহুদি ২ শতাংশ, অন্যান্য ৪ শতাংশ।

লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে মোট জনসংখ্যার বিচারে আর্জেন্টিনায় সবচেয়ে বেশি মুসলিম বাস করে। মুসলমানরা ধর্মীয় দিক থেকে বেশ স্বাধীনভাবেই এখানে ধর্ম পালন করতে পারে। পবিত্র রমজান, ঈদসহ সব ইসলামি উৎসব তারা বেশ আনন্দের সঙ্গে পালন করে।

ইতিহাস অনুযায়ী, আর্জেন্টিনায় যখন স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ কলোনি ছিল, তখন এখানে কাজ করার জন্য বহু পশ্চিম আফ্রিকান মানুষ ধরে আনা হতো। স্বভাবতই তারা ছিল মুসলিম। পরবর্তীকালে সিরিয়া, লেবাননসহ বিভিন্ন আরব দেশ থেকে অনেক মুসলমান অভিবাসী এখানে এসে বসত গড়ে। বর্তমানে বেশির ভাগ মুসলিমই দেশটির রাজধানী বুয়েনস আয়ারসে বসবাস করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *