বরিশাল নগর রাজনীতির গ্যারাকলে ব্যাটারিচালিত যান

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বরিশাল নগর রাজনীতির গ্যারাকেলে পড়েছেন ব্যাটারিচালিত ১০ সহ¯্রাধিক ইজিবাইক ও রিক্সা-ভ্যান চালক। ‘রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ’ ব্যানারে দীর্ঘ বছর নগরে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেত্রী ডা. মনিষা চক্রবর্তী। গতবছর ২৫ এপ্রিল উচ্চাদালতের আদেশে ব্যাটারিচালিত যান বৈধতা পেলে মাঠে নেমেছে ‘জেলা ও মহানগর ইজিবাইক ও অটোরিক্সা শ্রমিক কল্যান সংগঠন’ নামক আরেকপক্ষ। তারা সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সমর্থিত বলে জানা গেছে। দুইপক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে প্রায়ই নগরে অস্থিরতার সৃষ্টি হচ্ছে।

‘রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ’ বড় কোন কর্মসূচী দিলে নানাভাবে বাঁধাগ্রস্থ করার অভিযোগ রয়েছে মেয়র সমর্থিত সংগঠনের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবারও একই ঘটনা ঘটেছে। বিআরটিএ’র মাধ্যমে লাইসেন্স প্রদানসহ ৬ দফা দাবীতে চালক সংগ্রাম পরিষদের পুর্ব ঘোষিত বিভাগীয় সমাবেশ ছিল বৃহসপতিবার সকালে নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে। বুধবার রাতে আকস্মিক মাইকিং করে লাইসেন্স আবেদন ফরম নেয়ার জন্য চালকদের সিটি করপোরেশনে যেতে আহ্বান জানানো হয়।
এনিয়ে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দুইপক্ষের মধ্যে ছিল উত্তেজনা। বৃহস্পতিবার সকালে নগরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ব্যাটারিচালিত যানবহন চলাচল আটকে দেয়া হয়। শ্রমিকদের একপক্ষ গেছেন সমাবেশে, আরেকপক্ষকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে লাইসেন্সের আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে।

‘রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ও বাসদের জেলা সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রববর্র্তী বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বুধবার রাতে নগরে মোটরসাইকেল মহড়া দেয়া হয় এবং রিক্সা গ্যারেজগুলোতে গিয়ে শ্রমিকদের হুমকি দেয়া হয়েছে সমাবেশে না যাওয়ার জন্য। হুমকি ও লাইসেন্স দেয়ার প্রভোলন উপেক্ষা করে শ্রমিকরা বিভাগীয় সমাবেশ সফল করেছেন। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেকুজ্জামান রতন এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে সিটি করপোরেশনের এনেক্স ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যাটারিচালিত ও ইজিবাইক ও রিক্সা শ্রমিকদের দীর্ঘ লাইন। একাধিক শ্রমিক জানান, যানবহনের লাইসেন্সের আবেদন ফরম বিতরণ করা হবে এ খবর শুনে তারা এসেছেন।

যে কারনে ব্যাটারীযান চালকদের গুরুত্ব : বাসদ নেত্রী ডা. মনিষা চক্রবর্তীর সাংগঠনিক শক্তিশালী ভীত হচ্ছে রিক্সা-ভ্যান-ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ নামক সংগঠন। তার সভা সমাবেশে এই শ্রমিকদের উপস্থিতি থাকে উল্লেখযোগ্য। ডা. মনিষা ২০১৮তে বরিশাল সিটির মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটের দিন হামলার শিকার হন। সিটি করপোরেশন এলাকায় উন্নয়নবঞ্চনার বিরুদ্ধে স্বোচ্চার ভূমিকায় রয়েছেন। এবছরের মধ্যভাগে অনুষ্ঠব্য সিটি নির্বাচনে তিনি মেয়র প্রার্থীতা ঘোষনা করেছেন। অপরদিকে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ এখন পর্যন্ত দলে একক মনোনয়নপ্রত্যাশী। নগর রাজনীতি সচেতন মহলের মতে, ডা. মনিষার সাংগঠনিক মুল ভীতের ওপর আঘাত আনতেই মেয়রের পৃষ্টপোষকতায় জেলা ও মহানগর ইজিবাইক ও অটোরিক্সা শ্রমিক কল্যান সংগঠনের আবির্ভাব হয়েছে। লাইসেন্স প্রদানসহ মালিক-চালকদের নানা প্রভোলন দেখানো হচ্ছে।

গতবছর ১৬ মে বিকালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে শ্রমিক কল্যান সংগঠনের সমাবেশে প্রধান অতিথি হয়ে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ঘোষনা দেন, ৩মাসের মধ্যে যানবহন ও চালকদের লাইসেন্স প্রদান, চালকদের ৭দিনের প্রশিক্ষন ও বিশেষ পোষাকের ব্যবস্থা করবেন। ওইদিন সকালে নগরের অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে চালক সংগ্রাম পরিষদ সড়ক অবরোধ করে বড় সমাবেশ করলে বিকালে পাল্টা কর্মসুচীতে যোগদেন মেয়র।

৮ মাস আগে তার ঘোষণার আজ পর্যন্ত একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। আকস্মিক বুধবার রাতে লাইন্সেন্স আবেদন ফরম বিতরনের ঘোষনা দিয়ে নগরে ব্যাপক মাইকিং করা হয়।
চালক সংগ্রাম পরিষদের সমাবেশ বাধাগ্রস্থ করতে এই ঘোষনা দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে শ্রমিক কল্যান সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ জামাল গাজী বলেন, ‘ফরম দেয়ার জন্য সিটি করপোরেশন চালকদের ডেকেছেন। এতদিন সিটি করপোশেরন কেন করতে পারেননি তা আমাদের জানা নেই’।
সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি খালেকুজ্জামান লিপন বলেন, ‘হঠাৎ সিটি করপোরেশনের ঘুম ভেঙ্গে সংগ্রাম পরিষদের সমাবেশের দিন লাইসেন্স প্রদানের জন্য চালকদের ডেকেছেন’।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানাতে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক হোসেন ও জনসংযোগের দায়িত্বরত স্বপন কুমার রোহানকে একাধিকবার কল দেয়া হলে তারা রিসিভ করেননি।

ডা. মনিষা অভিযোগ করেন, আইনী লড়াই করে গতবছর ২৫ এপ্রিল উচ্চাদালতের আদেশে ব্যাটারীচালিত যানবহন সড়কপথে চলার বৈধতা পেয়েছে। এরপরই বরিশাল সিটি মেয়র লাইসেন্স দেয়ার প্রভোলন দেখিয়ে তার নিয়ন্ত্রিত একটি সংগঠনকে চাঁদাবাজীতে নামিয়েছেন। এটা একধরনের বানিজ্য। লাইসেন্স দেয়ার বৈধতা সিটি করপোরশনের নেই।

চরমোনাই পীর নিয়ন্ত্রিত সংগঠন ‘ইজিবাইক শ্রমিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ২০১৬ সালে তৎকালীন সিটি মেয়র ইজিবাইক নগরে নিষিদ্ধ করলে চরমোনাই পীর এর বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান। বর্তমান মেয়রও একাধিকবার ব্যাটারিচালিত যান বন্ধের চেষ্টা করেছেন। এখন রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য চালকদের নিয়ে টানাহেচরা চলছে।

এব্যপারে সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, ব্যাটারিচালিত যান মালিক-চালকদের অন্যভাবে টাকা দিতে হচ্ছে। তাই সিটি করপোরেশণ লাইসেন্স দেযার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডা. মনিষা যদি সমাবেশ করে লাইসেন্স দিতে পারে তাহলে দিক। আমরা ভোটের বিষয়ে চিন্তা করিনা। তাদের রাজনীতি করা ঠিক হবেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *