নাগরিক রিপোর্ট:
বরিশালে সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আজ ২ মার্চ চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। আগামী ১৫ মে থেকে শুরু হচ্ছে বিসিসি নির্বাচনের খন গননা। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোও আটঘাট বেধে নেমেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়র ও নগর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে এগোলেও ভেতরে ভেতরে আলাদা প্লাটফর্ম গড়ে তুলছে দলীয় প্রতিপক্ষরা। ভোটের বছরে চকমকে কিছু উন্নয়ন কাজ আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়িয়ে নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন মেয়র সাদিক। অপরদিকে জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, বাসদ সহ বিভিন্ন দলের সম্ভব্য মেয়র প্রার্থীরা ক্ষমতাসীন দলের ব্যার্থতা তুলে ধরে মাঠে তৎপর রয়েছেন।
বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, আমি কিন্তু ভোট চাইতে যাবো না। যদি কাজ করে থাকি তাহলে অবশ্যই ভোট দিবেন। এ বিদ্যালয়ের যা কিছু লাগে করা হবে। ২৮ অক্টোবর বরিশাল ইসলামিয়া কলেজে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, তিনি শাহান আরা বেগম পার্ক, টর্চার শেল, শহীদ মিনারের উন্নয়ন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যদি নমিনেশন দেন, আপনারা যদি মনে করেন আমাকে প্রয়োজন তাহলে সুযোগ দিবেন। যে ডিমান্ড করেছেন অবশ্যই করে দিবো। ২৭ ফেব্রুয়ারী সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজে মেয়র সাদিক বলেন, যতটুকো সময় আছে এর মধ্যে যত ওয়াদা ছিল তা পুরন করে যেতে চাই। একই দিন আলহাজ্ব দলিল উদ্দিন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে মেয়র শহীদ মিনার করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এদিকে রুপাতলী বাস টামিনাল সংস্কার করে পুরানো টামিনালের নাম পরিবর্তন করে মেয়র তার বাবা এমপি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নামে রাখার জন্য সিটি করপোরেশনে সিদ্ধান্ত গ্রহন করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃস্টি হয়েছে। এভাবে সিটি ভোটের বছরে উন্নয়নের ফুলঝুরি ছড়াচ্ছেন মেয়র সাদিক এমনটাই দাবী একাধিক প্রার্থীর।
নগরের ২২টি খাল খনন ও সৌন্দর্য্যবর্ধনে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ২০১৯ সালে মন্ত্রনালয়ে জমা দিলেও সাড়ে ৪ বছরে তা আলোর মুখ দেখেনি। এর মাঝে গত বছর পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর উদ্যোগে সাতটি খাল খননে ৭ কোটি টাকা দিলেও করপোরেশনের আপত্তিতে সেই প্রকল্প ভেস্তে গেছে। ক্ষমতার শেষ মুহুর্তে গত ২৫ জানুয়ারী একটি খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে বিসিসি। এ মাসেই সিটির ‘ভোটার’ এমন ১০ হাজার হলুদ অটো রিক্সা মালিকদের লাইসেন্স দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মেয়র সাদিক। এগুলো মেয়র সাদিকের নির্বাচনী উন্নয়ন আর প্রতিশ্রুতি বলে মনে করছেন প্রতিপক্ষরা।
গুঞ্জন রয়েছে- মেয়র সাদিকের চাচা খোকন সেরনিয়াবাত, যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন, শিল্পপতি মিজানুর রহমান, সাবেক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক এবার সিটি ভোটে মেয়র প্রার্থী হিসেবে নৌকার টিকেট চাইতে পারেন। এ নিয়ে ঘরে বাইরে তোরজোর চলছে।
জাতীয় পাটির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, তিনি নির্বাচনী মাঠেই আছেন। সরকারি দল নতুন ডিসি, কমিশনার এনে মাঠ সাজানোর চেস্টা করছে। নির্বাচনের আগে কিছু লোকদেখানো উন্নয়ন করছে, স্কুল কলেজে গিয়ে উন্নয়নের ফুলঝুরি ছড়াচ্ছে। কিন্তু সাড়ে ৪ বছরে ২/১টা রাস্তা করে কি নগরবাসীর ভোট পাওয়া যাবে?
বাসদের মেয়র প্রার্থী মনিষা চক্রবর্তী বলেন, ভোটের আগে খাল খনের নামে আ’লীগ জনগনের সঙ্গে স্টান্ডবাজী করছে। গত সাড়ে ৪ বছরে এক টাকাও বরাদ্ধ হয়নি এই সিটিতে। বরং খাল খননের বরাদ্ধ বন্ধ করে দিয়েছে। অটো রিক্সায় লাইসেন্স দেয়ার নামে মেয়র সাদিক ভোট ও নোটের প্রজেক্টে নেমেছেন। মনীষা বলেন, জনগনের সঙ্গে মাঠেই আছেন। এজন্য বিসিসির গুড়িয়ে দেয়া মোহামেডান ক্লাব উদ্ধারে আন্দোলনে নেমেছেন।
চরমোনাই পীরের দলের কর্মসুচীতে বাধা দেয়ার জবাবে গত ৯ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু উদ্যানে সমাবেশে দলটির আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে চোরদের বিরুদ্ধে ভোট বিপ্লব হবে।’
বরিশাল নগর আ’লীগের সহ সভাপতি আনোয়ার হোসাইন বলেন, উন্নয়নের ফুলঝুরি নয়, মেয়র সাদিক যা প্রতিশ্রুতি দেয় তা করে দেখায়। নগরে এখন যে উন্নয়ন হচ্ছে তা স্বাভাবিক কার্যক্রম। এগুলো নির্বাচনী উন্নয়ন নয়। সিটি নির্বাচনে তাদের একক প্রার্থী কেবলই সাদিক।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও নগর আ’লীগের সহ সভাপতি গাজী নইমুল হোসেন লিটু বলেন, তাদের একক মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। মেয়র সাদিক সাগরিদ খাল খনন শুরু করেছেন, সড়ক সংস্কার করছেন। সমালোচকরা একে নির্বাচনী উন্নয়ন বললেও আসলে তা সঠিক নয়। নগরে যা উন্নয়ন হচ্ছে তা নিজেস্ব অর্থায়নে, সরকারি বরাদ্ধ নেই। তিনি বলেন, অটো রিক্সা নিয়ে পুলিশের বানিজ্য চলছিল। এজন্য মেয়র বৈধতা দিয়েছে। এখানে ভোট ব্যাংকের কিছুই নাই।
এব্যপারে বরিশালের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: নুরুল আলম বলেন, ১৫ মে থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিপূর্নতা পাবে। এরপর তফসিল ঘোষনা। এ নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখেই ভোটার তালিকা হালনাগাদ হচ্ছে। আজ ২ মার্চ নগরের চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই বরিশাল সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময়ে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৯ জন।