নাগরিক রিপোর্ট:
মনোনয়ন পাওয়ার ১০ দিন পেড়ুলেও বরিশাল নগর আ’লীগ ও ওয়ার্ডের অধিকাংশ নেতা ভোটের মাঠে নামছেন না। তারা মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের পাশে দাড়ায়নি। কারন হিসেবে জানা গেছে, মহানগর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ও মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। নগরের ৭১ সদস্যের কমিটি এবং ৩০টি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদ হারানোর ভয়ে আছেন। তৃনমুল নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, সাদিকের ভয়ে প্রকাশ্যে তারা ভোটের মাঠে নামছেন না। তবে রাত নামলেই মেয়র প্রার্থী খোকনের বাসায় লাইন ধরে দেখা করছেন।
সম্প্রতি খোকন সেরনিয়াবাতের সঙ্গে যুবলীগ ও শ্রমিকলীগের দুটি সভায় এধরনের অভিযোগ তুলে মেয়াদ উত্তীর্ন মহানগর কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার দাবী করেছেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নৌকার মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, নির্বাচনী কার্যক্রমে মহানগর নেতাদের অসহযোগিতার পাশাপাশি কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের দাবীর বিষয়ে খোকন সেরনিয়াবাত নেত্রীকে অবহিত করেছেন।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের নির্বাচনে তৎকালীন মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরণের পরাজয়ের জন্য দলের একটি অংশের বিশ্বাসঘাতকতাকে দায়ী করা হয়। যেকারনে খোকন অনুসারীরা মনে করছেন, কেন্দ্রর চাপে সাদিক তার লোকজন নিয়ে ভোটের মাঠে নামলেও তাদের ওপর বিশ্বাস রাখা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেকারনে ভোটের আগে নগর কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু পরিষদ বরিশাল নগরের সভাপতি মো: এ কে আজাদ ফারুক বলেন, তিনি তার পার্শবর্তী এলাকার ওয়ার্ড সভাপতি জসিম উদ্দিনকে ভোটের মাঠে নামতে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি তাকে বলেছেন যে তারা সাদিকের অপেক্ষায় আছেন। আজাদ ফারুক বলেন, আসলে নগর ও ওয়ার্ড নেতারা তাদের পদ হারানোর ভয়ে এখনও প্রকাশ্যে সামনে আসছেন না।
বিএম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক মঈন তুষার ছিলেন প্রায়ত মেয়ল হিরনের ঘনিষ্ঠ সহচর। তিনি বলেন, যারা নগরবাসীকে শোষন করছে, চাঁদাবাজী করছে তাদের হাতে মহানগর আ’লীগ থাকতে পারে না। নেতাকর্মীদের চাপের মুখে রেখেছেন সাদিক। তার ভয়ে নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে সামনে আসতে পারছে না। এই কমিটি বলবত থাকলে হিরন ভাইর মত ট্রাজিডি ঘটতে পারে।
এ প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন মোহন বলেন, ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল নগর আ’লীগের আংশিক কমিটি গঠিত হয়। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নগর আ’লীগের সম্মেলন পরবর্তী ৩ বছর অনেক আগেই শেষ হয়েছে। পূর্নাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিতরা পদ পেয়েছে। তিনি বলেন, মেয়র প্রার্থী খোকনের নির্দেশে সোমবার রাতে তার বাসায় নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের সেন্টার কমিটিই প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছেন।
আ’লীগ নেতা মোহন বলেন, খোকন সেরনিয়াবাত সোমবার রাতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নগর আ’লীগের কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার বিষয় আলাপ করতেই গেছেন। কেননা এই মেয়াদ উত্তীর্ন কমিটি থাকলে ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন না। তাদের মধ্যে ভয়, জড়তা আর আনুগত্যতা কাজ করছে। মহানগর যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খোকন ভাই সোমবার রাতে সাক্ষাত করেছেন। যারা নৌকার পক্ষে নামবে না, তারা তাদের মতই ভোগবে।
মহানগর আ’লীগের বর্তমান সহ সভাপতি ভিপি আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর সম্মেলন হলেও কমিটি পূর্নাঙ্গ হয়েছে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারী। সম্মেলন অনুযায়ী মেয়াদ ওভার হলেও পূর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের পর মেয়াদ শেষ হয়নি। তিনি বলেন, যে কোন পক্ষ নতুন কমিটি চাইতেই পারে। কেননা এখন পরিস্থিতি ঘুরে গেছে।
এব্যাপারে আ’লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, আমরা মেয়র প্রার্থীকে নিয়ে ইতোমধ্যে নাগরিক সভা করেছি। ঈদের পর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে বর্ধিত সভায় নির্বাচনী কৌশল নেয়া হবে। তিনি বলেন, যে কোন কমিটির মেয়াদ ৩ বছর। মহানগরের সম্মেলনের মেয়াদ উত্তীর্ন হয়েছে। কিন্তু জেলার মত ততোটা নয়। যৌক্তিক সময়ে এর সম্মেলন করা হবে।