‘বড় বেদনায় ভারী এ জীবন’

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক ॥ এখনও চোখের সামনে ভাসে সেই ভয়াল রাতের স্ট§ৃতি। বাবু (সুকাšø বাবু) দু-হাত তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল মা আমাকে কোলে নাও। আমি বাবুকে কোলে নিতে পারিনি। আমারে কোলে ছিল দেড় বছরের সাদিক (বরিশাল সিটি করপোরেশণের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ)। পাশে শহীদ ভাই (শহীদ সেরনিয়াবাত) ছিলেন। তিনি বাবুকে কোলে নিয়ে আমার শ^শুরের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন। দুই-তিন বছর পর্যšø বিশ^াস হতোনা বাবু বেঁচে নেই। কারন ওর গায়ে কোন গুলি লাগেনি। বুকের ক®দ্ব চাপা দিয়ে রাখি এই ভেবে যে, মৃত্যুতো আল্কèার হাতে’। অশ্র“সিক্ত হয়ে কথাগুলো বলেন আগ®দ্ব ট্রাজেডির শহীদ জননী সাহান আরা বেগম।
‘৭৫’র ১৫ আগ®দ্ব কালোরাতে জাতির পিতা বঙ্গবল্পব্দু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার ছাড়াও শহীদ হন বঙ্গবল্পব্দুর ভ¹িুপতি তৎকালীন কৃষিমšúী আ¦ন্ধুর রব সেরনিয়াবাত ও তার পরিবারের অপর ৫ সদস্য। সেই রাতে অলৌকিকভাবে ঘাতকদের হাত থেকে রক্ষা পান শহীদ আ¦ন্ধুর রব সেরনিয়াবাতের জেষ্ঠ্য পুত্র আবুল হাসানাত আবদুল্কèাহ এবং ভাগ্যত্রক্রমে গুলিবি™ব্দ হয়েও বেঁচে যান স্টúী আমিনা বেগম (বঙ্গবল্পব্দুর বোন/হাসানাতের মা) ও পুত্রবধু শহীদ সুকাšø বাবুর মা সাহান আরা বেগম। ওই রাতে মিন্টো রোডের বাসায় শহীদ হয়েছিলেন শহীদ আ¦ন্ধুর রব সেরনিয়াবাতের কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত ও আরজু মনি (শেখ ফজলুল হক মনির স্টúী), আবুল হাসানাত আবদুল্কèাহর ৪ বছরের জেষ্ঠ্য পুত্র সুকাšø আবদুল্কèাহ বাবু এবং হাসানাতের চাচাত ভাই শহীদ সেরনিয়াবাত।
আগ®দ্ব ট্রাজেডির ৪৪ বছর কেটে গেছে। তবুও এখনও সেই কালো রাতের ভয়াল স্ট§ৃতির কথা মনে পড়লেই অঝোরে কাঁদেন শহীদ আ¦ন্ধুর রব সেরনিয়াবাতের পুত্রবধু সাহান আরা বেগম। যদিও সেই বিভিষিকাময় রাতের ঘটনাবলি ও হত্যাযজ্ঞ প্রসঙ্গে আজ পর্যšø কোন গণমাধ্যমে মুখ খোলেননি বঙ্গবল্পব্দুর ভা¹েু আবুল হাসানাত আবদুল্কèাহ এমপি। মুঠোফোনে আগ®দ্ব ট্রাজেডির প্রসঙ্গ তুলতেই হাসানাত বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আগেও কিছু বলিনি, বলতেও চাইনা’। তবে সেই ভয়াল রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে কথা হয় সাহান আরা বেগমের সঙ্গে। নগরের কালিবাড়ি সড়কে শহীদ আ¦ন্ধুর রব সেরনিয়াবাতের বাসভবনের দোতালার বারান্দায় বসে সাহান আরা বেগম বলেন, মধ্যরাতের পর গুলির শ¦েন্ধ ঘুম ভাঙ্গে। সুকাšø ও সাদিক এবং ওদের বাবা (হাসানাত) সহ দোতালার একটি কক্ষে ঘুমে ছিলাম আমরা। পাশের কক্ষেই ছিলেন শ^শুর শহীদ আ¦ন্ধুর রব সেরনিয়াবাত ও শ^াশুরী আমিনা বেগম। গোলাগুলির শ¦েন্ধ ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় দুই ছেলেকে নিয়ে আমি ও হাসানাত শ^শুর শহীদ আ¦ন্ধুর রব সেরনিয়াবাতের কক্ষে যাই। তখন তাদেরও ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। নিচতলা থেকে ওপরে চলে আসেন আমার ভাসুর শহীদ সেরনিয়াবাত। হাসানাতের মা হাসানাতকে বলছিলেন, বঙ্গবল্পব্দুকে ফোন কর। ফোনে বঙ্গবল্পব্দুকে পাওয়া যায়নি। আমি মনি ভাইকে ফোন করে ঘটনা জানাই। মনি ভাই জানতে চেয়েছিলেন, ‘ওরা কারা, ওদের গায়ে কেমন পোষাক’? তখন আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে শ^াশুরী আমিনা বেগম মনি ভাইকে বলেন, ‘মনি আমাদের বাঁচা। ওরা বৃ¯িদ্বর মতো গুলি করছে’। আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম কারা যেন সিড়ি বেয়ে ওপরের দিকে উঠছে। তখন হাসানাত আমাদের কক্ষ থেকে চলে যান। একটু পরেই মনি ভাইয়ের ছোট বোন রেখা ফোনে জানায়, বন্দুকধারীরা মনি ভাইকে মেরে ফেলেছে। এরইমধ্যে ঘাতকরা দোতালায় আমাদের কক্ষের সামনে চলে আসে। কক্ষে ঢুকেই লাথি মেরে টেলিফোন ভেঙ্গে ফেলে। সবাইকে হাত উচু করে নিচে ড্রইং রুমে নিয়ে যায়। অস্ত্র তাক করে জানতে চায়, বাসায় আর কেউ আছে কি-না?। আমরা কেউ কথা বলিনি। ভয়ে সুকাšø বাবু খুব কাঁদছিল আর আমার কোলে উঠতে চাইছিল। শহীদ ভাই বাবুকে কোলে নেয়। হঠাৎ করেই একজন ঘাতক ব্রাশ ফায়ার করে। সবাই মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। আমার পিঠে একটা গুলি লেগেছিল। দেড় বছরের সাদিককে কোলের মধ্যে জড়িয়ে মেঝেতে পড়ে যাই। সবাই মরে গেছি ভেবে ওরা চলে যায়। কিšø ২-৪ মিনিট পরেই আবার ফিরে এসে বেপরোয়া গুলি চালাতে থাকে। তখন আরও তিনটা গুলি লাগে আমার শরীরে। যখন চেতনা ফিরে পাই তখন আমি হাসপাতালে।
কালিবাড়ির বাসার বারান্দার গ্রীলগুলো দেখিয়ে সাহান আরা বেগম বলেন, ‘বাবু খুব চঞ্চল ছিল। দোতালা থেকে পরে না যায় এজন্য গ্রীলগুলো লাগিয়ে ছিলাম। বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে চাইত। বাসার সামনে পানির হাউজ বানিয়ে ছোট ছোট মাছ ছাড়তাম বাবুর জন্য। ‘আমি সাত সাগর পাড়ি দিয়ে কেন সৈকতে পড়ে আছি’- এ গানটি ঘুমানোর সময় প্রতি রাতেই বাবুকে শোনাতে হতো। হাজার স্ট§ৃতি মনে পড়ে। বেঁচে থাকলে আজ ৪৮ বছরের যুবক হতো সুকাšø বাবু। বাবুর কথা মনে পড়লে হাসানাত-আমি দুজনই আনমনা হয়ে যাই। এমন বেঁচে থাকাও বড় বেদনার। (সাক্ষাতকারটি সমকালের বরিশাল ব্যুরো প্রধান পুলক চ্যাটার্জির কাছ থেকে সংগৃহিত)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *