নাগরিক রিপোর্ট ॥ ঈদ উল আযহার ৪র্থ দিন পাড় হলেও বরিশালের বিনোদন স্পটগুলোতে আমেজ কাটেনি। দর্শনার্থীরা যেন হুমরী খেয়ে পড়ছে বিভিন্ন স্পটে। মাঝে একদিন কর্মস্থলে কাটিয়ে ফের ঈদের আমেজ কাটাচ্ছেন নানা দর্শনীয় স্পটে। নগরী ছেড়ে পর্যটন স্পট কুয়াকাটায়ও গত ২দিন ধরে মানুষের ঢল নেমেছে। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় ছুটে আসছেন পর্যটকরা। এই অবস্থা আগামী শনিবার পর্যন্ত বিরাজ করবে ধারনা করছেন সংশ্লিস্টরা।
গত ৪দিন ধরে থেমে থেমে বৃস্টি হচ্ছে বরিশালে। সাথে মেঘলা আকাশ। তবু বসে নেই বিনোদন পিপাসুরা। নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বুধবার বিকেলে দেখা গেছে নানা শ্রেনীর মানুষের ভীড়। পাশের গ্রীন সিটি পার্কেও শিশুদের ভীড় ছিল চোখে পড়ারর মত। সেখানে বেড়াতে আসা মাহমুদা খানম নামে এক গৃহীনি জানান, ছেলে-মেয়ে ও ভাতিজি নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। কিন্তু একটি খোলা মাঠে যে এতো মানুষ তা আশা করিনি। কথা হয় শিশু ছাত্র রুপক ও আবিরের সাথে। পার্কে খেলারত তারাও ভীষন খুশি। বৃহস্পতিবার বিকেলে ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীর পাড় ও মুক্তিযোদ্ধা পার্কেও ঈদের ছুটিতে আসা দর্শনার্থীদের ভীড় দেখা গেছে।
কীর্তনখোলা নদীর পাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রমিজ আলী বলেন, মাঝে মাঝে বৃস্টি নামছে। আকাশ মেঘলা। কিন্তু এরপরও মানুষ যেভাবে আসছে তাতে বেচাকেনা বেশ ভাল। খোজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে গত কয়েকদিন ধরে দুর্গাসাগর, গুঠিয়া বায়তুল আমান মসজিদ, ভিমরুলি পেয়ারা বাগানেও মানুষ ঘুরে আসছেন।
এদিকে বৈরী আবহাওয়ায়ও পর্যটকদের ঢল নেমেছে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায়। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় ছুটে আসছেন পর্যটকরা। পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে ঈদ আনন্দ জমিয়ে তুলতে কুয়াকাটায় ছুটে আসছেন তারা। ইতোমধ্যে কুয়াকাটা হোটেল মোটেল এ অর্ধেকের বেশি বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। টুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে কুয়াকাটায়।
সাগর কন্যা কুয়াকাটা থেকে বৃহস্পতিবার ফেরা মশিউর দিপু নামে এক আইটি ইঞ্জিনিয়ার বলেন, এবারের কুয়াকাটা ভ্রমন ছিল অন্যরকম। বিশাল ঢেউ সাগরে। উত্তাল সাগরের দৃশ্য দেখে ভ্রমন সার্থক হয়েছে। কুয়াকাটায় অবস্থানরত আ: রহমান নামে ঢাকার একটি বেসরকারী কোম্পানীর কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বলেন, পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। আবহাওয়া বৈরী হলেও ভাল লেগেছে সাগর কন্যার দৃশ্য। তিনি তার বৃদ্ধ মা-বাবাকেও নিয়ে এসেছেন। আর হয়তো এমনভাবে আর পরিবার নিয়ে আসা হবে না। শেষ সময়টুকো কাটিয়ে শুক্রবারই তিনি ঢাকায় ফিরবেন।
কুয়াকাটার গনমাধ্যম কর্মী হোসাইন আমীর জানান, কুয়াকাটায় এখন শত শত পর্যটক। বৃস্টি এলেই উল্লাসে ফেটে পড়ছেন দর্শনার্থীরা। এমন দৃশ্য দেখে স্থাণীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও খুশি। কুয়াকাটা রোটারী ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও একটি বেসরকারী কলেজের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, উৎসবে মানুষ সমুদ্রের দৃশ্য দেখতে ছুটে আসেন। বর্ষায় এই চিত্র আরও সুন্দর। কেবল সাগরই নয়। এখানকার রাখাইনদের বৌদ্ধমূর্তি ও তাদের সংস্কৃতি পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের আকৃস্ট করে। এছাড়া গঙ্গামতির চর, লেবুর চর, ইকোপার্ক, ফাতরার চর, সোনাকাটা ইকোপার্ক, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, মিস্ত্রি পাড়া সাধারন দর্শনার্থীদের মন জয় করেছে। তিনি বলেন, কোরবানীর ছুটিতেও বেশ দর্শনার্থীদের ভীর জমেছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ করবে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক আ: মোতালেব হাওলাদার বলেন, এবার কোরবানীতে যেমন বৈরী আবহাওয়া তাতে মনে হয়েছিল টুরিস্ট কম হবে। কিন্তু ২দিন থেকেই দুরদুরন্ত থেকে বেশ আসছে পর্যটক। তাদের হোটেল-মোটেল গুলোর ৭০ শতাংশ সিট ইতোমধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। তিনি বলেন, কুয়াকাটা সাগর সৈকতে বেড়ানোর সময় এখনই। বিশাল ঢেউ দর্শনার্থীদের মন কাড়বে। তিনি আসা করেন শুক্র, শনিবার পর্যটকদের ভীড়ে এখানকার ব্যবসা বানিজ্য জমে উঠবে।