২০২৫ সালের পৃথিবী: কতটা বাসযোগ্য থাকবে এই গ্রহ?

Spread the love

২০২৫ সাল, বিশ্বের বহু মানুষ আজ শঙ্কিত এই বছরটির পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তন, বায়ুদূষণ এবং পরিবেশগত অবক্ষয় দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ২০২৪ সাল বৈশ্বিক উষ্ণতার ক্ষেত্রে একটি নজিরবিহীন বছর হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO) জানিয়েছে, ওই বছর গড় তাপমাত্রা ছিল ১৬.৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস—এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। বিজ্ঞানীদের মতে, এই উষ্ণতা মেরু অঞ্চলে বরফ গলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং উপকূলীয় বন্যার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশের জন্য পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ঢাকায় বাতাসে পিএম ২.৫ এর মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৯.৯ মাইক্রোগ্রাম, যেখানে গ্রহণযোগ্য মাত্রা সর্বোচ্চ ৫ মাইক্রোগ্রাম। এই মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের কারণে দেশের মানুষের গড় আয়ু কমে গেছে প্রায় পাঁচ বছর। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার বায়ুদূষণ ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে, যা ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে।

এদিকে, বৈশ্বিকভাবে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ বাড়ছে। ২০২৪ সালে উৎপাদিত প্লাস্টিকের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪০০ মিলিয়ন টন, যার একটি বড় অংশ সাগরে গিয়ে পৌঁছেছে, মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য। একইসঙ্গে, কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ গিগাটনে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১.৫% বেশি।

তবে এ পরিস্থিতির বিপরীতে কিছু আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপও দেখা যাচ্ছে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো প্যারিস চুক্তির আওতায় নিজেদের জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (NDCs) হালনাগাদ করবে, যার লক্ষ্য ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা সীমাবদ্ধ রাখা। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA) এ বছর CO2 পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে, যা পরিবেশে নির্গত গ্যাসের পরিমাণ সুনির্দিষ্টভাবে নির্ণয় করতে সহায়ক হবে।

২০২৫ সালে বেলেম ডো প্যারায় অনুষ্ঠিতব্য কপ৩০ সম্মেলন জলবায়ু নীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সম্ভাবনা রাখে। পাশাপাশি জুন মাসে ফ্রান্স ও কোস্টারিকার যৌথ উদ্যোগে জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলন হবে, যা সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষায় আন্তর্জাতিক পদক্ষেপে গতি আনতে পারে।

বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। পোড়া ইট ব্যবহার বন্ধ, হর্নমুক্ত এলাকা ঘোষণা, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক নিরুৎসাহিতকরণ এবং বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—এসব উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে?
বিশ্বব্যাপী অনেক পরিকল্পনা ঘোষিত হলেও তার গতি অতি ধীর। সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক পরিবর্তন ছাড়া কেবল কাগজে-কলমে নীতিমালা তৈরি করে ফল পাওয়া যাবে না।

বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান সংকটের মুখে ২০২৫ সাল কতটা বাসযোগ্য থাকবে, তার জবাব আজও অনিশ্চিত।
তবে এটুকু নিশ্চিত—সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, আর দেরি না করে এখনই নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।