ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে ইলিশ আসছে বাংলাদেশে

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট ॥ পথ পরিবর্তন করে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ বাংলাদেশের দিকে আসছে। অতিরিক্ত পলিতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি নদীর নাব্যতা নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং মাছ ধরার জাল ফেলে রাখার কারণে দিক পরিবর্তন করে বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসছে রূপালি ইলিশ। ভারতের সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। খবর- টাইমস অব ইন্ডিয়া।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক বিভাগীয় প্রধান উৎপল ভৌমিক বলেন, ইলিশ প্রধানত হুগলি, বাংলাদেশের মেঘনা নদী ও মিয়ানমারের ইরাবতী এ তিনটি পথ ধরে আসে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নদীতে অতিরিক্ত পলি জমা ও অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার কারণে হুগলির পথ ধরে ইলিশ যাচ্ছে না। কারণ পানির গভীরতা অন্তত ৩০-৪০ ফুট না হলে সে পথ দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ চলাচল করতে পারে না। আর হুগলি নদীতে এতো গভীরতা নেই। সঠিকভাবে ড্রেজিং না করার কারণে নাব্যতা সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, নদীর গভীরতা বেশি হওয়ায় কারণে ইলিশ মেঘনাকেই বেছে নিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যজীবী সংগঠনের নেতা প্রদীপ চ্যাটার্জি বলেন, হুগলি নদীর মুখে প্রচুর মাছ ধরার জাল রয়েছে। যার প্রতিটি জাল প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা। এত বেশি জাল থাকায় নদীতে ইলিশ মাছ প্রবেশ করতে পারছে না। কারণ, ইলিশ সামনের বিপদসীমা বুঝতে পারে। তাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীর মেঘনা নদীর দিকে চলে যাচ্ছে ইলিশ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওশানোগ্রাফিক বিভাগের অধ্যাপক সুগত হাজরা বলেন, ২০১৩ সালে হুগলি, মালতা, রায়মঙ্গল এবং ঠাকুরান অঞ্চলকে ইলিশের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ২৩ সেন্টিমিটারের নিচের আয়তনের ইলিশ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়। তবে তা মানা হয় নি।
পশ্চিমবঙ্গের বাজারগুলোতে এখন আর আগের ইলিশ দেখা যাচ্ছে না। ২০০২-২০০৩ সালে হুগলি নদীতে যেখানে ধরা পড়ত ৬২ হাজার ৬০০ টন ইলিশ। মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে ২০১৭-১৮ সালে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৫৩৯ টনে। অর্থাৎ এই সময়ে ইলিশের জোগান কমেছে প্রায় ৫৬ শতাংশ।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ছে বাংলাদেশের নদীগুলোতে। ২০০২- ২০০৩ সালে যেখানে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩২ টন ইলিশ ধরা পড়েছিলো বাংলাদেশে। ২০১৭-১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার টন। অর্থাৎ মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে ইলিশের জোগান বেড়েছে ১৬০ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *