মডেল টেষ্ট বানিজ্যে শিক্ষা কর্মকর্তা আয় ৭ লাখ টাকা

Spread the love

প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বরের পরিপত্র অনুযায়ী উপজেলা/থানা পরীক্ষা পরিচালনা কমিটি নির্ধারিত হারে ফি গ্রহনপূর্বক সমাপনী পরীক্ষার আদলে ৫ম শ্রেনীতে সর্বোচ্চ দুটি মডেল টেস্ট গ্রহন করতে পারবে। কিন্তু সরকারী এই পরিপত্র উপক্ষো করে ভোলার ৭ উপজেলায় মডেল টেস্ট গ্রহনের নামে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র হালদারের বিরুদ্ধে।

নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা পরীক্ষা কমিটিকে ৫ম শ্রেনীর মডেল টেস্ট গ্রহনের দায়িত্ব দেয়ার কথা স্বীকার করে জেলা প্রাশকি শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্যই জেলার সব উপজেলায় অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা গ্রহন করেছেন তিনি।

গত ১৫ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ভোলা জেলার ৭ উপজেলায় একযোগে ৫ম শ্রেনীর মডেল টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা গ্রহনের জন্য ভোলা সদর উপজেলার ৭ হাজার ৫শ’ ৭৬ জন, দৌলতখানে ৩ হাজার ৩শ’ ২৪ জন, বোরহানউদ্দিনে ৪ হাজার ২শ’ ৪জন, লালমোহনে ৫ হাজার ৮শ’ ৯৮জন, চরফ্যাশনে ৯ হাজার ৫শ’ ১০জন, তজুমদ্দিনে ২ হাজার ৩শ’ ৮৬জন এবং মনপুরা উপজেলায় ১ হাজার ২শ’ ৯৮ জন সহ জেলায় মোট ৩৪ হাজার ১শ’ ৯৬ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। মোট চাঁদা আদায়ের পরিমান ১৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্ব-স্ব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস শিক্ষার্থী প্রতি ১০ টাকা করে রেখে বাকী ৪০ টাকা করে (১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৮শ’ ৪০ টাকা) জমা দেন ভোলা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (সোনালী ব্যাংক, ভোলা শাখার হিসেব নম্বর : ০৪০১২০০০৫০০২৫) সরকারী হিসেব নম্বরে।

মডেল টেস্ট গ্রহনের জন্য প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র, লুজ শিট, প্রবেশপত্র ও খাম ছাপা হয় বরিশাল নগরীর হাসপাতাল রোডের মায়ের দোয়া অফসেট প্রেসে।

নগরীর হাসপাতাল রোডের মায়ের দোয়া অপসেট প্রেসে শিক্ষার্থী প্রতি ৬ বিষয়ের প্রশ্নপত্র ছাপা বাবদ ৩টাকা, ৬ বিষয়ের উত্তরপত্র ও লুজ শিট বাবদ ২১ টাকা ৪০ পয়সা, প্রবেশপত্র ৪০ পয়সা এবং খাম ও প্যাকেজিং খরচ বাবদ শিক্ষার্থী প্রতি গড়ে ৫০ পয়সা খরচ হয়। সে হিসেবে শিক্ষার্থী প্রতি ২৫ টাকা ৩০ পয়সা খরচ হয়। ৭ উপজেলার ৩৪ হাজার ১শ’ ৯৬ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোট ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৮শ’ ৪০ টাকা আদায় করা হলেও প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সহ আনুষাঙ্গিক খরচের পর তার হিসেব নম্বরে অবশিস্ট আছে ৫ লাখ ২ হাজার ৬শ’ ৮২ টাকা। এই ৫ লাখ টাকাই আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র হালদারের বিরুদ্ধে।

নগরীর হাসপাতাল রোডের মায়ের দোয়া অপসেট প্রেসের সত্ত্বাধীকারী নজরুল ইসলাম জানান, ভোলার ডিপিও স্যার মডেল টেস্ট গ্রহনের জন্য প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সহ তাকে ৮ লাখ ৬৫ হাজার ১শ’ ১০ টাকার ছাপার কাজ দিয়েছেন। এর মধ্যে বেশীরভাগ টাকা পরিশোধ হলেছে। তবে এখনও ১ লাখ টাকার মতো বকেয়া আছে।

ভোলার বিভিন্ন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সরকারী পরিপত্র অনুযায়ী উপজেলা শিক্ষা অফিসের ৫ম শ্রেনীর মডেল টেস্ট গ্রহনের কথা। কিন্তু অক্টোবর মাসের মডেল টেস্টের আয়োজন করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। কেন উপজেলা কমিটির হাত থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মডেল টেস্ট অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছে সেটা বলতে পারেন নি তারা।

ভোলা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র দাস বলেন, সব জেলায়ই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মডেল টেস্টের আয়োজন করে। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য এবার একক প্রশ্নে ভোলা জেলায় মডেল টেস্ট গ্রহন করা হয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তারাই (উপজেলা শিক্ষা অফিস) করেছে। তাদের সাথে সমন্বয় করেই তিনি একক প্রশ্নপত্রে মডেল টেস্টের আয়োজন করেছেন।

এদিকে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সহ আনুষাঙ্গিক ছাপার জন্য শিক্ষার্থী প্রতি ২৫ টাকা ৩০ পয়সা খরচের পর বাকী ১৪ টাকা ৭০ পয়সা হারে আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, জেলার ২৬৭টি পরীক্ষা কেন্দ্রে সিলগালা প্যাকিং করে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরী এবং শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের উপজেলা থেকে জেলা অফিসে আসা যাওয়া এবং খাওয়ায় অনেক টাকা খরচ হয়েছে। উপজেলা অফিসের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস মডেল টেস্ট আয়োজন করে সরকারী নীতিমালা ভঙ্গ করেনি বলে দাবী করেন ভোলা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র দাস। ##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *