সৈয়দ জুয়েল: উন্নত জীবনের আশায় দেশ ছেড়ে বিদেশে এসে- ভাগ্যের চাকায় উজ্জলতা আসলেও, চিন্তা মননশীলতায় পরিবর্তন না আসায় পিছিয়ে পরছে বাংলাদেশিরা। আওয়ামিলীগ, বিএনপিতে একাধিক গ্রুপ, যদিও একই আদর্শে তারা বিশ্বাস করে দলের রাজনীতি করেন, তারপরও বিভেদ। প্রশ্ন উঠেছে দলীয় পদ ও দলে হাইব্রীডদের আগমনে এই হাল।
এ গেল রাজনীতির কথা,স্থানীয় বা পুরো বাংলাদেশ কমিউনিটির ভেতরও রয়েছে নানান ভাগে বিভক্ত। স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক পারমিট, ট্যুরিস্ট ভিসায় আসা বাংলাদেশিরা নিজস্ব বলয়ের সাথেই সখ্যতা তৈরিতে শক্তিশালী হচ্ছেনা বাংলাদেশ কমিউনিটি। সব মিলিয়ে কমিউনিটি নেতা হওয়া,আর দলীয় আদর্শের গোলক ধাঁধার মানসিকতা থেকে বের হতে পারছেনা বাংলাদেশিরা।
এতে করে বিদেশে এক ছাতার নীচে আসতে না পারায় অন্যান্য দেশের কমিউনিটি থেকে বেশ দূর্বল বাংলাদেশ কমিউনিটি। সাধ, সাধ্য, আর যোগ্যতার অভাব না থাকলেও কেন পিছিয়ে পরছে বাংলাদেশিরা? উত্তর খুঁজতে অনুসন্ধানে দেখা যায়- আয়ারল্যান্ডে দীর্ঘ একটা সময় যে বাংলাদেশ কমিউনিটি ছিল, তার ভেতর বি,এন,পি ও জামায়াত সমর্থিত লোকজন বেশি থাকায় আওয়ামিলীগ সমর্থিতরা এ কমিউনিটিকে এড়িয়ে চলতো, এতে পূর্নতা পায়নি কমিউনিটি।বর্তমানে অল আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশি কমিউনিটি বিলুপ্ত, সামনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করার সময় নির্ধারন করবেন করোনা পরবর্তী যে কোন সময়ে।
তবে ইতিহাসের পূনরাবৃত্তি যদি হয়,বা আওয়ামিলীগ সমর্থিতরা যদি বাংলাদেশ কমিউনিটির হাল ধরেন-তখন এ দু দলের সমর্থকরা মিলে কি কমিউনিটিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করবেন? সম্ভাবনা খুবই ক্ষীন।দলের সমর্থনের কাছে দেশ মার খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। দল প্রেমিক হতে পেরেছি আমরা,তবে দেশপ্রেমিক হতে কি পেরেছি?
আয়ারল্যান্ডে মাত্র ১৩-১৫ হাজারের মত বাংলাদেশির বসবাস। দল মতের উর্ধ্বে থেকে স্বল্প সংখ্যার এ বাংলাদেশিদের একটু স্বদিচ্ছা থাকলে বেশ শক্তিশালী এক কমিউনিটি তৈরী করতে পারে। আর এতে করে সুফল পেত আমাদেরও পরবর্তী প্রজন্ম। আমাদের সন্তানদের কাছে আমাদের ভাষা,ইতিহাস,সংস্কৃতিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে না পারলে বিদেশের মাটিতে তলিয়ে যাবে লাল সবুজের মানচিত্র। যেটা আমাদের জন্য সুখকর নয়। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মরা যদি জন্মের পরই আমাদের নিজেদের ভেতর হিংসা,বিদ্বেষ আর দলাদলির এক অপ সংস্কৃতি দেখে বেড়ে ওঠে,তাহলে এ থেকে তারা কি শিক্ষা নিবে!
বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে আমাদের সন্তানরা নিরুৎসাহিত হবে আমাদের সংস্কৃতি পালনে। এখনই সময় দলের গন্ডি,আর ব্যাক্তি আক্রোশ পরিহার করে বাংলাদেশ কমিউনিটিকে শক্তিশালী করা। দিনশেষে আপনার,আমার পরিবারেরই মঙ্গল। আর এর সুফল পাবে বাংলাদেশই।
বিদেশের মাটিতে আমরা সফল হলে বাংলাদেশকেও বিদেশীরা সন্মান ও ভালবাসার চোখে দেখবে। যে দেশের অক্সিজেনে বড় হয়েছি,যে দেশের মাটির ঘ্রানে এখনো আমরা বিমোহিত হয়ে শিশু কৈশরে ফিরে যাই ,সে দেশের জন্য কি আমরা এক হয়ে কাজ করতে পারিনা?