নাগরিক রিপোর্ট : নগরীর রূপাতলী বাস টাার্মিনাল থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুরত্ব দেড় কিলোমিটার। এই দেড় কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। শনিবার সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকরা রূপাতলী বাস টার্মিনালে এবং শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করছেন। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন তারা। ফলে বরিশালসহ সারাদেশের সঙ্গে সড়কপথে ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা এবং ঝালকাঠী পিরোজপুর ও খুলনা জেলার সঙ্গে বরিশালের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
গত মঙ্গলবার বিআরটিসি বাস শ্রমিকরা দুই শিক্ষার্থীকে মারধর ও রাতে পরিবহন শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের গণহারে মারধর করলে এ ঘটনার সুত্রপাত হয়। হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে বুধবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা একতরফাভাবে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আসছিল। শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে দুই পরিবহন শ্রমিককে পুলিশ গ্রেফতার করলে শনিবার সকালে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরাও টার্মিনাল সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন।
শনিবার বেলা ১২টায় রূপাতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত শ্রমিক লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। সড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। একই অবস্থা দেড় কিলোমিটার দুরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। লাঠিসোটা হাতে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান করছেন। উভয় স্থানে বিপুল সংখ্যক বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সদস্যরা রূপাতলী টার্মিনালে প্রবেশের এক কিলোমিটার আগ থেকে সব ধরনের যানবহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় পুলিশ শুক্রবার রাতে নীরিহ দুই পরিবহন শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে। তাদের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত মালিক-শ্রমিকরা বাস চালাবেন না। একই বক্তব্য দিয়েছেন বরিশাল বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক সুলতান মোল্লা।
আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের অন্যতম শিক্ষার্থী অমিত হাসান রক্তিম বলেন, মঙ্গলবার রাতে রূপাতলী আবাসিক এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের গনহারে মারধরের নেতৃত্ব দিয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পদক ও বাস মালিক নেতা কাওছার হোমেন শিপন, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ কর্মী তেল ব্যবসায়ী মামুন মিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আসামী না করে অজ্ঞাতনামা আসামী দেখিয়ে মামলা দায়ের করেছেন। ওই তিনজনের নামোল্লেখ করে পূনরায় মামলা দায়েরসহ ৩ দফা দাবীতে পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী শনিবার সকাল থেকে তারা আবারও সড়ক অবরোধ শুরু করেছেন। শিক্ষার্থীরা ববি কর্তৃপক্ষের নতজানু নীতি প্রত্যাখান করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ রাখবেন।
রূপাতলীতে বাস টার্মিনালে উপস্থিত বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলায় কোন আসামীর নাম উল্লেখ করেননি। পুলিশ সন্দেহজনক আসামী হিসাবে শুক্রবার রাতে রূপাতলী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা এমকে পরিবহনের সুপারভাইজার আবুল বাশার রনি (২৫) ও সাউথ বেঙ্গল পরিবহনের হেলপার মো. ফিরোজকে (২৪) গ্রেফতার করেছে। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।
ওসি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবী প্রসঙ্গে বলেন, যেহেতু মামলার এজাহারে কারো নাম নেই তাই পুলিশ তদন্ত ছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবী অনুযায়ী কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনা। তিনি বলেন, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের উদ্যেগ নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল নগরের রূপাতলী বাস টার্মিনালে ২ শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিবাদে এবং হামলাকারী বিআরটিসি বাস শ্রমিকদের গ্রেফতারের দাবীতে মহাসড়ক অবরোধ করেছিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হামলাকারী বিআরটিসি’র বাস শ্রমিক রফিককে গ্রেফতার এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ২ ঘন্টা পর শিক্ষার্থীরা ওই অবরোধ তুলে নেন। মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে রূপাতলী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন আবাাসিক এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালায় একদল পরিবহন শ্রমিক। হামলাকারীদের বিচারের দাবীতে শিক্ষার্থীরা বুধবার সারাদিন বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলো। বিকালে প্রশাসনের আশ্বাসে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে অবরোধ তুলে নিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। তারা শুক্রবার বিকালেও দুই ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ ও সন্ধ্যার পরে মশাল মিছিল করেছে।##