নাগরিক রিপোর্ট : প্রায় একবছর আগে গঠিত বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি একের পর এক বিতর্কে জড়াচ্ছে। শুরু থেকেই আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিন দশক যাবত বরিশাল বিএনপির একক আধিপত্যের নেতা যুগ্ন মহাসচিব মজিবর রহমানকে কোনঠাসা করতে তারা কমিটি কুক্ষিগত করেছেন। যে কারনে সরোয়ারের আস্থাভাজন নেতাদের ঠাই হয়নি ৪১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে। এনিয়ে রাগ-ক্ষোভে দলীয় কার্যক্রমের বাইরে রয়েছেন সরোয়ার অনুসারী বিএনপির বড় একটি অংশ। এবার নগরের ৩০টি ওয়ার্ড কমিটি গঠনের শুরুতেই বিতর্ক এড়াতে পারেননি নগর আহ্বায়ক কমিটি।
এ পর্যন্ত ঘোষিত ১৪টি ওয়ার্ড কমিটির বেশীরভাগে ত্যাগী নেতাদের বাদ দেয়া, ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে সুবিধাভোগী নেতাদের পদায়ন এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ অমান্য করার করার অভিযোগ উঠেছে। তৃনমুল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত তারেক জিয়ার নির্দেশ ছিল- অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাদের ওয়ার্ডে পদ না দেয়ার জন্য। ওয়ার্ডে ৩১ সদস্যর আহ্বায়ক কমিটিতে এ নিদের্শ অমান্য করেছে নগর কমিটি।
এসব অভিযোগে সোমবার রাতে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পরদিনই ৪ জন যুগ্ন আহ্বায়কসহ ১৬ জন পদত্যাগ করেন। কমিটি বাতিলের দাবীতে বুধবার বিকালে নগরের সাগরদী এলাকায় পদত্যাগকাীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল হয়। একই দাবীতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সদর বিএনপি কার্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ করেন ২৫ ওয়ার্ডের পদবঞ্চিত নেতারা।
এমন পরিস্থিতিতে নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আলী হায়দার বাবুল ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার সকালে তার ফেসবুক আইডিডে একটি পোষ্ট দিয়েছেন। তাকে ভুল না বোঝার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানান।
বাবুল বলেন, ‘আমি ফেসবুকে দেখছি বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি দেয়া হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ ছিল আহ্বায়ক, সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে কমিটি দিতে হবে। আমার সঙ্গে তারা এসব বিষয়ে যোগযোগ করছেন না।
২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কমিটির প্রসঙ্গে সাবেক সভাপতি ও সাবেক সিটি কাউন্সিলর ফিরোজ আহমেদ বলেন, সদ্য ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক নওশাদ আহমেদ নান্টুর ছেলে রাফি সদর আসনে সাংসদ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী হিসাবে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর ছবিসহ রফির শুভেচ্ছা পোষ্টার এখনও বিভিন্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে।
ফিরোজ আহমেদ বলেন, প্রকৃত বিএনপি নেতাকর্মীরা পদবঞ্চিত হয়ে বুধবার বিকালে বিক্ষোভ করেছেন। নগর আহ্বায়ক কমিটি ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে বানিজ্য করেছে।
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি ও মহানগরের বর্তমান যুগ্ন আহবায়ক জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, যারা আন্দোলন সংগ্রামে নেই তাদের তাদের ওয়ার্ড কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত ছিল অঙ্গ সংগঠনে দায়িত্বশীলরা ওয়ার্ড কমিটিতে পদ পাবেন না। ওয়ার্ড কমিটি গঠনে এ সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছেনা। যারা চেয়ারম্যানের নির্দেশ মানেন না তাদের নেতৃত্বে রাজনীতি করা কঠিন।
নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জানান, তাদের না জানিয়েই ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বিলুপ্ত ৭১ সদস্যের কমিটির মধ্যে মাত্র ৩জনের জায়গা হয়েছে আহ্বায়ক কমিটিতে। ঘোষিত কমিটির সদস্য মাসুম খলিফা বিগত সিটি নির্বাচনে ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগের কাউন্সিলরের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করেছেন। অপর সদস্য শেখ আঃ রহমান বিগত সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করেছেন।
মহানগর ছাত্রদল নেতা ইমরান শরিফ অভিযোগ করেন, ১৫নং ওয়ার্ড বিএনপির ঘোষিত কমিটিতে আওয়ামী ঘেষা নেতারা পদায়ন হয়েছেন। ঘোষিত কমিটির সদস্য মোঃ জসিম উদ্দিন তাসু, মোঃ মশিউল আলম স্বপন, মোঃ আঃ হালিম গত সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের অফিসে অবাধে যাতায়েত করেছেন।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, আগামীর আন্দোলন-সংগ্রামে দলে তারুন্যের শক্তি প্রয়োজন। এজন্য ওয়ার্ড কমিটিতে তরুনদের অগ্রাধিকার দেয়ায় সিনিয়র পর্যায়ের কিছু নেতা বাদ পড়েছেন। একই কারনে অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বশীলদের ওয়ার্ড কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ন পদ দেয়া হয়। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্টরা ওয়ার্ড কমিটিতে পদ পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, পদবঞ্চিতরা রাগ-ক্ষোভ থেকে এসব অভিযোগ করছেন। অভিযোগের কোন প্রমান তারা দিতে পারবেন না। তিনি বলেন, পূর্ণ কমিটি হবে বড় পরিসরে। তখন বঞ্চিতদের মধ্যে যোগ্যরা পদ পাবেন।